দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ সোমবারের সংঘর্ষের পরে মঙ্গলবার রাতেই লাদাখ সীমান্ত থেকে ভারতীয় সেনার পক্ষ থেকে জানানো হয়েছিল, দু’পক্ষই পিছু হটছে তাঁদের অবস্থান থেকে। সামরিক পরিভাষায় যাকে বলা হয় ‘ডিসএনগেজমেন্ট’। দু’দেশের বিদেশ মন্ত্রকের মধ্যে আলোচনাও হয় বুধবার। কূটনৈতিক এবং সেনা পর্যায়েও আলোচনার কথা হয়। কিন্তু বাস্তব পরিস্থিতি একেবারে আলাদা। কোনও কিছুই মানছে না চিন। কারণ এরই মধ্যে একটি উপগ্রহ চিত্রে ধরা পড়ল, সেই গালওয়ান উপত্যকায় বড়সড় সেনা প্রস্তুতি চালিয়েই যাচ্ছে চিন!

এই পরিস্থিতি দেখে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চিন সম্ভবত যুদ্ধের প্রস্তুতি নিয়ে অনড় অবস্থানে রয়েছে। এবং সম্ভবত অতর্কিতে আক্রমণের পরিকল্পনাও রয়েছে তাদের। তাই মন্ত্রকের তরফে একরকম আশ্বাস দেওয়া হলেও, সেনাদের নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে অন্য কিছু!

মার্কিন সংস্থা প্ল্যানেট ল্যাব প্রকাশিত একটি উপগ্রহ চিত্রে দেখা যাচ্ছে, গালওয়ান নদীর উত্তর-পূর্ব দিকের উপত্যকায় যে একফালি পথ রয়েছে নিয়ন্ত্রণরেখার সঙ্গে সমান্তরাল ভাবে, সেখানে চিনের সারি সারি সামরিক ট্রাক দাঁড়িয়ে আছে। উপগ্রহ চিত্র দেখে আপাত ভাবে সেই ট্রাকের সংখ্যা ২০০-র কম নয় বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তাঁরা বলছেন, যেভাবে চিনা সামরিক ট্রাকগুলি দাঁড়িয়ে রয়েছে, তাতে পিছু হটার ইঙ্গিত তো নেই-ই, বরং এটাই স্পষ্ট হচ্ছে যে রীতিমতে সেনা জড়ো করে রেখেছে চিন। গালওয়ান নদীর অন্য পাড়েও ভারতীয় সেনাবাহিনী মোতায়েন রয়েছে, তবে তা বিচ্ছিন্ন এবং বিক্ষিপ্ত।

বস্তুত, সংঘাত ছিলই। ১৯৬২ সালে বড় মাপের যুদ্ধও হয়ে গিয়েছে চিন-ভারতের। কিন্তু তার এত বছর পরে ফের গালওয়ান উপত্যকায় ঝাঁপিয়ে পড়েছে চিন। একটু একটু করে ঢুকে এসে আচমকাই আক্রমণ করেছে লাল ফৌজ। উপত্যকার ভূখণ্ড রক্ষা করতে গিয়ে ১৫ জুন চিনা বাহিনীর হামলায় শহিদ হয়েছেন ২০ জন ভারতীয় জওয়ানও। বোমা-গুলি না চললেও লাঠি-পাথর-রড নিয়ে চলেছে মারামারি। লাগাতার আলোচনা চলছে দু’দেশের মধ্যে, তবে বিবাদ কিছুতেই মিটছে না। এখনও গালওয়ানে ঘাঁটি গেড়ে বসে আছে লাল ফৌজ। একের পর এক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে ভূখণ্ড অধিগ্রহণের।

ইতিমধ্যেই সীমান্তের সংঘর্ষে আহত হয়েছেন ৭৬ জন জওয়ান। তাঁদের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। সকলের আশঙ্কা কেটেছে, সেরে উঠছেন তাঁরা। কিন্তু ২০টি প্রাণ ইতিমধ্যেই চলে গেছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী পাল্টা হুঁশিয়ারি দিয়েছেন চিনকে। চিনের অন্তত ৪৫ জন সেনা নিহত হয়েছে বলেও দাবি করছে ভারত। কিন্তু পরিস্থিতি অপরিবর্তনীয়।

নিয়ন্ত্রণরেখা পেরিয়া ভারতের এলাকায় কার্যত দখলদারির চেষ্টা চালাচ্ছে চিন, প্রমাণ দিচ্ছে উপগ্রহ চিত্রই। যদিও বেজিং বারবারই দাবি করেছে ভারতের বাহিনী নাকি চিনের সীমানায় প্রবেশ করছে, কিন্তু বাস্তবে উল্টোটাই হয়েছে এবং এখনও হচ্ছে। কারণ শুধু এই ছবি নয়, ১৫ তারিখের সংঘর্ষের আগে ও পরের পুরো উপত্যকার সব ছবিই আমেরিকার প্ল্যানেট ল্যাবের উপগ্রহ চিত্র ধরা পড়েছে। সব ছবিতেই দেখা গেছে, গালওয়ান নদী উপত্যকা বরাবর সারি সারি মোতায়েন চিনা বাহিনীর ট্রাক।

চিন ও ভারতের এই সংঘাত নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে রাষ্ট্রপুঞ্জও। উভয় পক্ষকে সর্বোচ্চ সংযম দেখানোর আহ্বান জানানো হয়েছে তাদের তরফে। গত মঙ্গলবার নিয়মিত প্রেস ব্রিফিংয়ে রাষ্ট্রপুঞ্জের প্রধান অ্যান্তনিও গুতেরেস এই কথা জানিয়ে বলেন, “আমরা ভারত ও চিনের লাইন অব অ্যাকচুয়াল কন্ট্রোলে (এলএসি) সংঘর্ষ ও হতাহতের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করছি এবং উভয়পক্ষকে সর্বোচ্চ সংযম প্রদর্শনের আহ্বান জানাচ্ছি। তবে এটা ইতিবাচক যে, উভয় দেশ উত্তেজনা নিরসনে উদ্যোগ নিয়েছে।”

এ উদ্যোগ কেবল মুখেই সত্যি, বাস্তবে নয়। উপগ্রহ চিত্র স্পষ্ট প্রমাণ দিচ্ছে তার। ভারত সীমান্ত থেকে মাত্র ২০০ কিলোমিটারের মধ্যে পুরোদস্তুর বিমানঘাঁটিও গড়ে তুলছে চিন। লাদাখের প্যাংগং লেকের ২০০ কিলোমিটার দূরে তিব্বতের ‘গাড়ি কুনসা’য় দশ বছর আগেই একটি বিমানবন্দর বানিয়েছে চিন। বেজিং তখন জানিয়েছিল, অসামরিক বিমান পরিবহণের জন্যই ওই বিমানবন্দর তৈরি করা হচ্ছে। 

কিন্তু উপগ্রহ চিত্রে ধরা পড়েছে, গত এক মাসে ওই বিমানবন্দরের সম্প্রসারণের কাজ রাতারাতি বেড়ে গেছে এবং সেখানে রীতিমতো একটি বিমানঘাঁটি তথা এয়ারবেস বানিয়ে ফেলেছে চিন। যুদ্ধবিমানও দাঁড় করিয়ে রেখেছে চিনের বিমানবাহিনী।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here