চিটফান্ডের পাই পয়সার হিসাব নেওয়া হবে,দিদি তিন তালাকের পক্ষে কেন: জলপাইগুড়িতে আক্রমণ মোদীর

0
955

দেশের সময় ওয়েব ডেস্কঃ লোকসভা ভোটের আগে উত্তরবঙ্গে তাঁর প্রথম জনসভা থেকেই আস্থার সম্পর্ক গড়তে তৎপর হলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। বললেন, উত্তরবঙ্গের সঙ্গে আমার বহু পুরনো সম্পর্ক। আপনারা চা উৎপাদন করেন,আমি চা বানাতাম।উত্তরবঙ্গের চা বাগান ও চা শ্রমিকদের সংকটের জন্য এ দিন অতীতে বামফ্রন্ট সরকার ও বর্তমান তৃণমূল সরকারের সমালোচনা করেন। বলেন, আমি এখানে বন্ধ কারখানা খুলিয়েছি। ময়নাগুড়িতে ফালাকাটা–সলসলা বাড়ি জাতীয় সড়ক উদ্বোধনে এসে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে আক্রমণ করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তিনি জানিয়েছেন, চাওয়ালাকে এত ভয় কীসের দিদির। জলপাইগুড়িতে বিজেপি-র সভা মঞ্চে দাঁড়িয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বললেন, “এই প্রথমবার গোটা দেশ দেখল, চোর-লুটেরাদের বাঁচাতে কোনও মুখ্যমন্ত্রী দিন-দুপুরে ধর্ণায় বসেছেন। যে লোকগুলো খেটে খাওয়া, গরিব শ্রমিক-মজুরের টাকা লুট করেছে তাদের পক্ষ নিয়ে দাঁড়িয়েছেন তিনি। এ তো

অভাবনীয়!

” এখানেই থামেননি মোদী। স্বভাবসুলভ ভঙ্গিতে তারিয়ে তারিয়ে বলেন, “কিন্তু যে মানুষগুলোর টাকা লুঠ হয়েছে, যাঁরা সর্বস্বান্ত হয়ে রাস্তায় এসে দাঁড়িয়েছেন, তাঁদের পরিবার চিৎকার করে দিদির কাছে প্রশ্ন করছেন, দিদি তোমার স্বার্থ কী? ওঁরা জানতে চাইছেন, দিদি রোজভ্যালি, সারদার তদন্ত আপনি কেন ঘেঁটে দিচ্ছেন? কেন ধর্ণা দিচ্ছেন?” মোদী যখন এ কথা বলছেন, জলপাইগুড়ির চূড়াভাণ্ডার ময়নাগুড়ির আশি বিঘা মাঠ তখন কানায় কানায় পূর্ণ। থই থই। এবং সেই ভিড়ের উদ্দেশে, চোয়াল শক্ত করে প্রধানমন্ত্রীর ইঙ্গিতবাহী মন্তব্য, “যারা টাকা লুঠ করেছে তাদের তো ছাড়বই না, যাঁরা তাদের রক্ষা করছেন, বাঁচানোর চেষ্টা করছেন তাঁরাও ছাড় পাবেন না! যতই ধর্ণা দিন, চিটফান্ডের পাই পয়সার হিসাব নেওয়া হবে।” নরেন্দ্র মোদীর এই মন্তব্যের পাল্টায় শুক্রবার সন্ধ্যায় সাংবাদিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন,

“আমার ওটা ধর্ণা ছিল না। ওটা সত্যাগ্রহ। উনি নিজে দুর্নীতির মাস্টার। চোরের মায়ের আবার বড় গলা।” তাঁর আরও কটাক্ষ, “ভোট এলে ‘চাওয়ালা’। ভোট ফুরোলে রাফায়েলওয়ালা। এখন তো লোকে বলছে কেমন আছেন ম্যাডিবাবু।”

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ধর্ণা নিয়ে এর পরেও কটাক্ষ করেন প্রধানমন্ত্রী। বলেন, বিদেশে গিয়ে বর্ণবিদ্বেষের বিরুদ্ধে সত্যাগ্রহ করেছিলেন মহাত্মা গান্ধী। নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসু দেশের স্বাধীনতার জন্য লড়েছেন। কিন্তু এ কোন সত্যাগ্রহ হল কলকাতায়?বেআইনি অর্থলগ্নি সংস্থা তথা চিটফান্ড বন্ধ করতে ক’দিন আগে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা নতুন বিলে অনুমোদন দিয়েছে। যে বিলে বলা হয়েছে, কোনও বেআইনি অর্থলগ্নি সংস্থা তথা চিটফান্ড মানুষের থেকে টাকা তুললে, তাদের সব সম্পত্তি বেচে আমানতকারীদের টাকা আদায় করা হবে। এ দিন সেই প্রসঙ্গ ছুঁয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমি গরিব মানুষকে আশ্বাস দিচ্ছি। আপনাদের আওয়াজ আইনের দরজা পর্যন্ত যাবেই।”গত রবিবার চিটফান্ড কাণ্ডের তদন্ত করতে গিয়ে সিবিআইয়ের টিম পৌঁছে গিয়েছিল কলকাতার পুলিশ কমিশনার রাজীব কুমারের বাড়িতে। গণ্ডগোলের সূত্রপাত তখন থেকেই। কলকাতা পুলিশ সিবিআই অফিসারদের ওখান থেকে টেনে হিঁচড়ে তুলে নিয়ে যায় শেক্সপিয়ার সরণী থানায়। তার পর রাজীব কুমারের বাড়িতে যান মুখ্যমন্ত্রী। পরে ওখানে দাঁড়িয়েই সিবিআইকে সামনে রেখে নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহ-দের ‘গুণ্ডাগিরি’ নিয়ে ক্ষোভের জ্বালামুখ খুলে দেন মমতা।এ দিন তারই পাল্টা আক্রমণ করেন মোদী। বলেন, বাংলার মুখ্যমন্ত্রী একজন দিদি। কিন্তু এখানে সব ব্যাপারে দাদাগিরি চলছে। গণতন্ত্র, সাংবিধানিক ব্যবস্থা বাংলায় বিপন্ন। তাঁর কথায়, দিদি দিল্লি যাওয়ার জন্য ব্যস্ত। অথচ বাংলায় সিন্ডিকেট রাজ, দালালি ইত্যাদির জন্য রোজ বদনাম হচ্ছে। সাধারণ মানুষের উপর অত্যাচার চলছে।প্রসঙ্গত, বাংলায় তোলাবাজি, সিন্ডিকেট নিয়ে গত সপ্তাহে ঠাকুরনগর ও দুর্গাপুরের সভা থেকে মমতার বিরুদ্ধে সমালোচনা করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী। এ দিনও সেই অভিযোগের পুনরাবৃত্তি বিশদে করেন।সব মিলিয়ে পরিষ্কার যে, মমতা-র ধর্ণা পরবর্তী সময়ে দিদি-মোদী লড়াইটা এখন পুরোদস্তুর রাজনৈতিক ও ইগোর লড়াইয়ে পর্যবসিত হয়েছে। দু’জনেই যেন এসপার ওসপার করতে নেমে পড়েছেন। এক জন বাঘা তেঁতুল, তো অন্য জন বুনো ওল। শুক্রবার ময়নাগুড়ির চূড়াভান্ডারের সভা থেকে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “মহিলাদের অধিকার নিয়ে গলা ফাটানো কংগ্রেসের আসল রূপ বেরিয়ে গেছে। এখন বলছে তিন তালাক আইন তুলে নেবে।” শুধু কংগ্রেস নয়। বাংলায় এসে এই ইস্যুতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তাঁর দলকেও আক্রমণ করেন মোদী। বলেন, “মমতাদিদি! আপনি তো একজন মহিলা। তাহলে আপনি কেন তিন তালাকের মতো বর্বর প্রথার পক্ষে দাঁড়াচ্ছেন?” ধর্মতলার মঞ্চ থেকে ফিরহাদ হাকিম, ইদ্রিস আলিরা বলেছিলেন আমরা তিন তালাক আইনের বিরোধিতা করব। কিন্তু এর মধ্যেই কেন্দ্র তিন তালাক বিল সংসদে পাশ করিয়ে আইন করে ফেলেছে। তার মধ্যে আবার কংগ্রেস বলতে শুরু করেছে, উনিশে ক্ষমতায় এলে তিন তালাক আইন তুলে নেবে। এ বার সেই ইস্যুতেই বিরোধী দলগুলিকে তীব্র আক্রমণ

শানালেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।গতকালই অসমের শিলচরের কংগ্রেস সাংসদ তথা সর্বভারতীয় মহিলা কংগ্রেসের সভানেত্রী সুস্মিতা দেব তিন তালাক নিয়ে মুখ খোলেন। প্রয়াত কংগ্রেস নেতা সন্তোষমোহন দেবের মেয়ে সুস্মিতা সংখ্যালঘুদের কনভেনশনে বলেন, “উনিশে কংগ্রেসই ক্ষমতায় আসছে। এসেই তিন তালাক আইন প্রত্যাহার করবে নতুন সরকার।এমনিতে তিন তালাক নিয়ে তৃণমূলের একেক নেতা একেক রকম বলেন। কেউ বলেন, কেন্দ্রের করা তিন তালাক আইনের বিরোধিতা করবেন, আবার কেউ ধর্মীয় ব্যাপারে সরকারের নাক না গলানো উচিত বলেই মনে করেন। পর্যবেক্ষকদের মতে, এর প্রধান কারণ সংখ্যালঘু ভোট ব্যাঙ্ক। যা দিদির অন্যতম শক্তি। এমন একটা অবস্থানে থাকা যাতে এ কূল ও কূল দু’কূলই থাকে। রাজনৈতিক মহলের মতে, তিন তালাক ইস্যুকে হাতিয়ার করে দিদির ভোটেই থাবা বসাতে চাইলেন মোদী। কৌশলে বাংলার মুসলিম মহিলাদের কাছে নিজের ভাবমূর্তি তুলে ধরলেন তিনি। বুঝিয়ে দিতে চাইলেন, দিল্লিতে কংগ্রেস আর বাংলায় তৃণমূল, দুই দলই মুখে মহিলাদের সমানাধিকার, সামাজিক ন্যায় বিচারের দাবিতে সোচ্চার হলেও, আসলে তারা এই জঘন্য প্রথার পক্ষেই। ময়নাগুড়িতে মোদীর বক্তৃতা শেষ হওয়ার পর পরই নিউটাউনে বিশ্ববাংলা কনভেশন সেন্টারে সাংবাদিক বৈঠক করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিন তালাক প্রসঙ্গে দিদি বলেন, “আমি সবসময় মহিলাদের অধিকারের পক্ষে। কিন্তু এই ব্যাপারটা আমাদের সংসদীয় দল দেখছে। কিন্তু সব কিছুর একতা সিস্টেম আছে।”বাংলার শাসক দলের এক মুখপাত্রের কথায়, “যাঁর আমলে

গোরক্ষকদের তাণ্ডবে দেশের মানুষের প্রাণ ওষ্ঠাগত, সংখ্যালঘুরা প্রতিদিন আক্রান্ত, তাঁর মুখে এ সব বড় বড় বুলি ভণ্ডামো ছাড়া আর কিছু না।” তাঁর কথায়, “বাংলায় সাম্প্রদায়িক রাজনীতির কোনও জায়গা নেই। আর রাজ্যের সংখ্যালঘুরা জানেন, তাঁদের সামাজিক উন্নয়নে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার কী করেছে।”

শুক্রবার চার লেনের ৩১ ডি সড়কের উদ্বোধনে এসে নরেন্দ্র মোদি বলেন, উত্তরবঙ্গে আইনশৃঙ্খলা বলে কিছু নেই, বাংলার সংস্কৃতি নষ্ট হয়েছে তৃণমূল জমানায়।’‌ এদিন জাতীয় সড়কের পাশাপাশি মোদি জলপাইগুড়িতে হাইকোর্টের সার্কিট বেঞ্চেরও উদ্বোধন করেন। এ প্রসঙ্গে তিনি জানান, ২০ বছর আগে হাইকোর্ট উদ্যোগ নিয়েছিল। কিন্তু মঞ্জুরি সত্ত্বেও তা হয়নি। বিজেপি সরকার বাস্তবে তা করিয়ে দেখিয়েছে। এবার থেকে মামলার জন্য আর কলকাতায় ছুটতে হবে না উত্তরবঙ্গের মানুষদের। এদিন প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘‌বিজেপি হিংসায় বিশ্বাসী নয়। কিন্তু দেশে বাংলা পরিচিত শুধু হিংসার জন্যই। তৃণমূল হল কমিউনিস্ট পার্টি ২।’‌ তিনি আরও বলেন, ‘‌কেন্দ্র সরকার কাজ করছে। বিরোধীরা মানুষের সমস্যাকে গুরুত্ব দেয় না। বাংলার মাটিকে বদনাম করেছে তৃণমূল। দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দিচ্ছে সরকার।’‌

Previous articleসিমলা টু মানালী
Next articleBook Advertisements for Desher Samay Instantly!

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here