দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ কদিন আগেই শরদ পওয়ারের বাড়ির বৈঠকখানায় এক সঙ্গে দেখা গিয়েছিল রাহুল গান্ধী ও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। জাতীয় স্তরে মোদী-বিরোধী জোট গঠনে তাঁরা নাকি তখন অভিন্ন ন্যূনতম কর্মসূচি নেওয়ার কথা আলোচনা করছিলেন।

শনিবাসরীয় দুপুরে মালদহের চাঁচলের মঞ্চে দাঁড়িয়ে সেই রাহুল গান্ধীই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের রাজনীতি, তাঁর সরকার চালানোর ধরন এবং তৃণমূলে রাজনৈতিক কার্যকলাপের চাঁচাছোলা সমালোচনা করলেন। বললেন, বাংলায় মমতাজির দল অত্যাচারী। মমতাজি শুধু লম্বা চওড়া ভাষণ দিয়ে বেড়ান। কাজ কিছুই হয় না। বোঝাতে চান, মোদী ও মমতা একই রকম। দু’জনেই ভাওঁতা দিচ্ছেন মানুষকে।

এদিন রাহুলকে দেখতে কংগ্রেস কর্মী, সমর্থকদের মধ্যে তুমুল উন্মাদনা দেখা যায়। শুরু থেকেই তাঁর বক্তব্য শোনার দাবি করতে থাকে জনতা। মঞ্চে ছিলেন দীপা দাশমুন্সি, প্রদীপ ভট্টাচার্য, সোমেন মিত্র, মালদা উত্তরের প্রার্থী ইশা খান চৌধুরি, আবু হাসেম খান চৌধুরি, গৌরব গগৈ। কিন্তু অন্য কোনও নেতানেত্রীদের বলার সুযোগ দেয়নি জনতা।
রাহুলের হেলিকপ্টার চাঁচলে নামতেই তাঁর ঘিরে সমর্থকদের কোলাহল শুরু হয়ে যায়। চাঁচলেও রাহুল নোটবন্দি, রাফালে চুক্তি, কর্মসংস্থান, জিএসটি নিয়ে মোদীকে তুলোধনা করে রাহুলের অভিযোগ, বছরে দু’‌কোটি কর্মসংস্থানের বদলে গত পাঁচ বছরে দেশে সব থেকে বেশি মানুষ বেকার হয়েছেন।

তৃণমূলনেত্রীর প্রসঙ্গে রাহুল বলেন, বাংলায় এক ব্যক্তির সরকার চলছে। তিনি কারও কথা শোনেন না। কারও মত নেন না। নিজের মর্জিতে সরকার চালান। তাঁর কথায়, “মমতাজি খালি লম্বা চওড়া ভাষণ দিয়ে বেড়ান, এই করে দিয়েছি, আর ওই করে দিয়েছি। কিন্তু বাস্তবে কিছুই হয়নি। বাংলায় বেরোজগারি আকাশ ছুঁয়েছে। ডান দিকে, বাঁদিকে বেকারত্ব। কৃষক ঋণ পায় না। বিপদে পড়লে তাঁদের ঋণ মাফও হয় না।” এখানেই থামেননি কংগ্রেস সভাপতি। তিনি বলেন, “আগে বাংলায় বামেদের সরকার ছিল। তার পর মমতাজিকে জেতান মানুষ। যে অত্যাচার তখন হতো, মমতাজির জমানাতেও সেই একই অত্যাচার। কংগ্রেস কর্মীদের মারা হয়। রোজ মারা হয়। তখন একটা সংগঠনের জন্য সরকার চালানো হত, এখন এক ব্যক্তির জন্য সরকার চালানো হয়।”

চাঁচলের কলমবাগান মাঠে এ দিন যথেষ্ট ভিড় হয়েছিল বললে কম বলা হয়। বলতে গেলে উপচে পড়েছিল। এতটাই যে বাঁশের ব্যারিকেড টপকে সামনে চলে আসে জনতা। রাহুলের বক্তৃতা শুনে কংগ্রেস কর্মীদের উন্মাদনা যে দ্বিগুণ হয়ে যায়, তাও স্পষ্ট হয়ে যায় স্লোগান ও জনতার হর্ষধ্বনির বহর দেখে।

রাহুল বললেন, ‘‌আমরা দেশকে এক রাখার চেষ্টা করি। সম্প্রীতির কথা বলি। আর বিজেপি বিদ্বেষ বিষ ছড়ায়। যেখানেই গিয়েছেন মোদি মিথ্যা কথাই বলেছেন। এখন দেশে শিক্ষা, স্বাস্থ্য পরিষেবার জন্য প্রচুর টাকার দরকার পড়ে গরিব মানুষের। কথা দিচ্ছি, আমরা ক্ষমতায় এলে উচ্চশিক্ষার জন্য সরকারি কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরো নেটওয়ার্ক তৈরি করব নূন্যতম খরচে। গব্বর সিং ট্যাক্স বদলিয়ে একটা সাধারণ নূন্যতম কর ব্যবস্থা করব। মালদায় আম বিখ্যাত। কংগ্রেস ক্ষমতায় এলে সরাসরি কৃষকরা আম তাঁদের বাগান থেকে কারখানা বা বিপণিতে যাতে পাঠাতে পারেন সেই ব্যবস্থা করব।’‌ সভা শেষ করার আগে রাহুল ভোটে জয়ের জন্য আশাপ্রকাশ করে বলেন, মালদাবাসী সবসময় কংগ্রেসকে ভালোবাসা দিয়েছেন। এবারও যে তার অন্যথা হবে না তা তিনি নিশ্চিত।‌‌‌


কংগ্রেস সভাপতি আরও বলেন, মার খেলেও লড়াই থামানো চলবে না। বাংলায় কংগ্রেসের ঝাণ্ডা উঁচু করে ধরে রাখতে হবে। তাঁর দাবি, কেন্দ্রে অচিরেই ক্ষমতায় আসবে কংগ্রেস। তার পর বাংলায় সরকার দখল করে ছাড়বে।

ছবি- সংগৃহীত।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here