দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ গায়ে আগুন লাগিয়ে দেওয়ার পরে জ্বলন্ত অবস্থাতেই এক কিলোমিটারেরও বেশি পথ চিৎকার করতে করতে ছোটেন নির্যাতিতা। তার পরে ওই অবস্থাতেই এক জনের মোবাইল চেয়ে, তা থেকে ফোন করেন পুলিশকে। তার পরে ঘটনাস্থলে পুলিশ এসে পৌঁছে উদ্ধার কর তাঁকে।

উন্নাওয়ের ধর্ষিতাকে পুড়িয়ে মারার চেষ্টার ঘটনায় এমনই ভয়ঙ্কর এক বয়ান সামনে এসেছে। রবীন্দ্র প্রকাশ নামের এক প্রত্যক্ষদর্শী এমনটাই জানিয়েছেন পুলিশকে। তাঁর কাছেই প্রথম সাহায্য চান উন্নাওয়ের নির্যাতিতা।

বৃহস্পতিবার সিন্দপুরের এই ভয়ানক ঘটনায় শিউরে উঠেছেন সকলে। এক জন ধর্ষিতার উপরে এমন পৈশাচিক আক্রমণ! সিন্দপুরের গ্রামবাসীরা জানিয়েছেন, গায়ে আগুন নিয়েই সাহায্যের জন্য ছুটছিলেন তরুণী। বেশ খানিকটা পরে রবীন্দ্র প্রকাশকে দেখতে পান তিনি।

রবীন্দ্র প্রকাশ পুলিশকে বলেছেন, “মেয়েটি দৌড়ে আসছিল, ‘বাঁচাও বাঁচাও’ করে চিৎকার করছিল। ও এমন ভাবে জ্বলছিল, আমি নিজেই প্রথমে ভয় পেয়ে যাই। আমি সামনে পড়ে থাকা একটা ডান্ডাও কুড়িয়ে নিই, আত্মরক্ষা করার জন্য। আমিও চিৎকার করছিলাম ভয়ে। ওই অবস্থাতেই মেয়েটি নিজের পরিচয় দেয়। কিন্তু তবু আমি কাছে যেতে ভয় পাচ্ছিলাম। ও আমার ফোনটা চায়। দিয়ে দিই। তখন ১১২ ডায়াল করে পুলিশে খবর দেয় ও নিজেই।”

নারকীয় এই ঘটনায় পাঁচ জনের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করেছে পুলিশ। নির্যাতিতার বয়ান সংগ্রহ করার পরেই অভিযুক্তদের দোষী সাব্যস্ত করা হয়। তাদের বিরুদ্ধে ৩০৭, ৩২৬, ৫০৬ ধারায় মামলা দায়ের করা হয়।

মার্চ মাসে উত্তরপ্রদেশের উন্নাওয়ে গণধর্ষণ করা হয়েছিল এই তরুণীকে। ধর্ষিতার অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ তিন জনকে গ্রেফতার করে। বাকি দু’জন এখনও ফেরার। গত সপ্তাহে জামিনে ছাড়া পায় অভিযুক্তরা। অপরাধীদের যোগ্য শাস্তি দেওয়ার জন্য গর্জে উঠেছিলেন এই সাহসিনী। তারই ভয়ঙ্কর পরিণতি হল আজ। আরও এক নৃশংতার সাক্ষী হল দেশ। লজ্জায় মাথা নত হল উত্তরপ্রদেশের। উন্নাওয়ের নির্যাতিতাকে পুড়িয়ে মারার চেষ্টা করল ধর্ষণে অভিযুক্তরাই। রায়বরেলি আদালতে ধর্ষণ মামলার শুনানি চলছিল।

বৃহস্পতিবার সকালে সেই ধর্ষণের মামলায় শুনানির জন্য তরুণী যখন আদালতে যাচ্ছিলেন, তাঁর রাস্তা আটকে দাঁড়ায় পাঁচজন। তরুণী সেই সময় ছিলেন রেল গেটের কাছে। তাঁকে টেনে হিঁচড়ে পাশের ধান ক্ষেতের মধ্যে নিয়ে যায় অভিযুক্তরা। সেখানেই তাঁর গায়ে পেট্রল ঢেলে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়। তরুণীর আর্তনাদে ছুটে আসেন স্থানীয়রা। খবর যায় পুলিশে। তরুণীকে যখন উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় তাঁর শরীরের বেশিরভাগটাই পুড়ে গেছে।

৭০ শতাংশ পুড়ে যাওয়া শরীর নিয়ে লখনউয়ের হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছেন নির্যাতিতা। ওই অবস্থাতেই তিনি ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে জবানবন্দি দিয়েছেন। সূত্রের খবর, পাঁচ অভিযুক্তের নাম বলেছেন নির্যাতিতা।

পুলিশ জানিয়েছে, তরুণীকে পুড়িয়ে মারার চেষ্টায় অভিযুক্ত পাঁচ জনের মধ্যে তিন জনই ধর্ষণে অভিযুক্ত। জামিনে ছাড়া পাওয়ার পরেই তারা তরুণীর খোঁজে গ্রামের আশপাশে ঘুরে বেড়াচ্ছিল। এদিনও আদালতে যাওয়ার নির্যাতিতার পিছু নেয় তারা। রেল গেটের কাছে নির্জন জায়গা দেখে সেখানেই তরুণীকে পুড়িয়ে মারার চেষ্টা করে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here