দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ পার্কিং লটের কাছে অনেকটা ফাঁকা জায়গা। সেখানেই সার দিয়ে চিতা সাজানো হয়েছে। একের পর এক কোভিডে মৃত রোগীর দেহ আসছে। জ্বলে উঠছে চিতা। রাজধানীর এমন ছবি দেখে শিউরে উঠেছিল দেশবাসী। চিতা নেভেনি। মৃত্যুও থামেনি। আবারও একদিনে সর্বোচ্চ মৃত্যুর রেকর্ড করল দিল্লি। দেহ দাহ করার জায়গা নেই, কবরস্থানগুলিও ভরে উঠেছে। গণকবর খোঁড়া হচ্ছে।
গত বছর ঠিক এমনই ছবি দেখা গিয়েছিল নিউ ইয়র্কে। শয়ে শয়ে মৃতদেহ কবর দেওয়ার জন্য গণকবর খোঁড়া হচ্ছিল। ঠিক এমনই পরিস্থিতি এখন নয়াদিল্লিতে।
স্বাস্থ্য দফতর জানাচ্ছে, একদিনে ২৪ হাজারের বেশি নতুন সংক্রমণ ধরা পড়েছে। করোনায় একদিনেই মৃতের সংখ্যা ৩৪৮। গত রবিবার থেকে সংক্রমণে মৃত্যু লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। দেড়শো থেকে সংখ্যাটা এক ধাক্কায় সাড়ে তিনশোতে এসে পৌঁছেছে। কোভিড অ্যাকটিভ রোগীও বেড়ে চলেছে। রাজধানীতে এখন ভাইরাস সক্রিয় রোগীর ৯২ হাজারের বেশি।
হাসপাতালে কোভিড বেড নেই, মেডিক্যাল অক্সিজেনের ভাঁড়ার প্রায় শূন্য, স্বাস্থ্য পরিষেবার বেহাল ছবিটা বারে বারেই ভেসে উঠছে। হাসপাতাল-নার্সিংহোমগুলির বাইরে রোগীদের লম্বা লাইন। জায়গার অভাবে ফুটপাতেও ঠাঁই নিতে হয়েছে সঙ্কটাপন্ন কোভিড রোগীদের। আপনজনদের ভর্তি করাতে না পেরে হাসপাতালের সামনে দাঁড়িয়ে হাউহাউ করে কাঁদতে দেখা গেছে মানুষজনকে।
দিল্লির সবচেয়ে বড় শ্মশান নিগমবোধ ঘাটে মৃতদেহ সৎকারের লাইন লেগে গেছে। স্থানীয়রাই বলছেন, নিগমবোধ শ্মশানের বাইরে লম্বা লাইন পড়েছে গতকাল থেকেই। অনেক দেহ সৎকার করাই যায়নি। এমন পরিস্থিতি এর আগে কখনও দেখা যায়নি। একই অবস্থা কবরস্থানগুলিতেও। জায়গার এতটাই অভাব দেখা দিয়েছে যে জেসিবি এক্সক্যাভেটরে মাটি খুঁড়ে নতুন করে কবর দেওয়ার জায়গা তৈরি করতে হয়েছে।
দিল্লির হাসপাতালগুলিতে অক্সিজেনের যোগান বাড়ানোর জন্য আর্জি জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল। জানা গিয়েছে, লোকনায়ক জয়প্রকাশ হাসপাতালে ১০ টন অক্সিজেন সরবরাহ করা হয়েছে। অন্য দিকে, গঙ্গারাম হাসপাতালে ১৪ হাজার কিউবিক মিটার অক্সিজেন দেওয়া হয়েছে। তেগবাহাদুর এবং ম্যাক্স হাসপাতালেও অক্সিজেন পৌঁছেছে। তবে স্বাস্থ্য আধিকারিকদের আশঙ্কা, কোভিড রোগীর সংখ্যা যে হারে বাড়ছে তাতে এই অক্সিজেনে বেশিদিন চালানো সম্ভব হবে না। হাসপাতালগুলোতে অক্সিজেনের আকালের বিষয়টি দিল্লি হাইকোর্ট অবধি গড়িয়েছে। আদালত কেন্দ্রকে নির্দেশ দিয়েছে অবিলম্বে শিল্পক্ষেত্রে অক্সিজেন সরবরাহ বন্ধ করতে হবে। পরিবর্তে মেডিক্যাল অক্সিজেনের উৎপাদন বাড়াতে হবে।