দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ মনে পড়ে ২০১৬-র বিধানসভা নির্বাচন। এরকমই এক চৈত্রমাসে কালবৈশাখী আছড়ে পড়েছিল রাজ্য রাজনীতিতে। বিজেপি রাজ্য দফতর থেকে জায়েন্ট স্ক্রিনে দেখানো হয়েছিল নারদ স্টিং অপারেশনের ফুটেজ।
পাঁচ বছর একুশের ভোটের আগে এবার বিজেপি সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়া অডিও ক্লিপিং নিয়ে গেরুয়া শিবির দাবি করল, কয়লা, গরু, পাথর, বালি পাচার করে মুনাফার পাহাড় গড়েছেন যুব তৃণমূল সভাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। শুভেন্দু অধিকারী, দীনেশ ত্রিবেদী, অমিত মালব্যরা অভিযোগ করলেন, এই যে তোলাবাজি চলছে তা সবটা জানতেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
একুশের নির্বাচনের আবহে তৃণমূল সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে বিস্ফোরক অভিযোগ করলেন শুভেন্দু অধিকারী। রবিবার সাংবাদিক বৈঠকে শুভেন্দু বলেন, ‘ সরকারি মদতে কয়লা দুর্নীতি হয়েছে। বিনয় মিশ্রের সঙ্গে তৃণমূলের যোগসাজশ রয়েছে। বিনয় মিশ্র সম্পর্কে চুপ তৃণমূল। ৯০০ কোটি টাকা ভাইপোর কাছে পৌঁছে দেন বিনয় মিশ্র। ধৃত আইসি অশোক মিশ্র টাকা পৌঁছে দিতেন। পুলিশের একাংশ এই চক্রে জড়িত। মুখ্যমন্ত্রী দায়িত্ব এড়াতে পারেন না। মমতাই প্রধান কর্মকর্তা।’ তৃণমূলের ভোটকুশলী প্রশান্ত কিশোরকেও টাকা দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন শুভেন্দু।
আজ সকালেই জানা গিয়েছে, কয়লা পাচার তদন্তে ইডি গ্রেফতার করেছে বাঁকুড়া থানার আইসি অশোক মিশ্রকে। ইডি সূত্রে খবর, ইনস্পেক্টর র্যাঙ্কের এই অফিসার কয়লা ও গরু পাচারকাণ্ডে অভিযুক্ত যুব তৃণমূল নেতা বিনয় মিশ্রর ঘনিষ্ঠ আত্মীয়। শুভেন্দু এদিন বলেন, এই অশোক মিশ্রই পুলিশের এস্কট করে ভাইপোর শান্তিনিকেতনে টাকা পৌঁছে দিত।
বিজেপির বক্তব্য ওই অডিও টেপ গণেশ বাগাড়িয়া ও বিনয় মিশ্রের কথোপকথন। যদিও তার সত্যতা দেশের সময় যাচাই করেনি। বিজেপির তরফে বলা হয়েছে, এই বিপুল দুর্নীতির নকশা এঁকেছেন ভাইপো। আর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তথা রাজ্য সরকারের এই কেলেঙ্কারি ঘটেছে।
Rs 900 crore has reached the nephew in the last 10-12 years by an individual who has been arrested by the police today.
— BJP (@BJP4India) April 4, 2021
Coal mafia Anup Manjhi runs this racket.
– Shri @SuvenduWB pic.twitter.com/xi0hvJvyxT
শুভেন্দু এও বলেন, আমি বারুইপুরের সভা থেকে বলেছিলাম ম্যাডাম নারেলা কে? যাঁর থাইল্যান্ডের ব্যাংক একাউন্টে টাকা যায় প্রতিমাসে। বিজেপি অডিও শুনিয়ে দাবি করেছে, আগে মাসে দুআড়াই কোটি টাকা যেত ভাইপোর কাছে। গত চার বছর ধরে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে মাসিক পঁয়ত্রিশ-চল্লিশ কোটি টাকায়।
দীনেশ ত্রিবেদী বলেন, বাংলায় দুর্নীতি প্রাতষ্ঠানিক মর্যাদা পেয়েছে মমতার রাজত্বে। প্রাক্তন রেলমন্ত্রীর কথায়, দলের মধ্যে এসব নিয়ে কথা বলার সুযোগই ছিল না। শুভেন্দু জানিয়েছেন, ভাইপো এখন তোলাবাজি চালান আর পুলিশ পোস্টিং করেন। তার লোক তোলাবাজি চালায়।
বিজেপির সাংবাদিক বৈঠকে এও বলা হয়, গোটা বন্দ্যোপাধ্যায় পরিবার দুর্নীতির পাঁকে ডুবে গেছে। তাঁদের দাবি এই সবটাই জানেন মমতা। নাহলে এটা সম্ভব নয়। কারণ তিনি মুখ্যমন্ত্রী আবার তিনিই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। যদিও এই নিয়ে তৃণমূলের এখনও প্রতিক্রিয়া জানা যায়নি। তবে তৃতীয় দফার ভোটের আগে বল্গাহীন দুর্নীতি নিয়ে তৃণমূলের গুরুতর অভিযোগ তুলল বিজেপি।
শুভেন্দুর আরও অভিযোগ, ‘ ২০১৩ সালে বিনয়কে যুব-র সহ সভাপতি করেন ভাইপো।এই দুর্নীতির শেষ হওয়া দরকার। গণেশ বাগারিয়া, বিনয় মিশ্রের অডিও ভাইরাল হয়েছে।’ বিজেপি নেতা অমিত মালব্যর দাবি, ‘অভিষেককে মাসে পাচারের ৪০ কোটি টাকা দেওয়া হত।’ তৃণমূল থেকে বিজেপি-তে যোগ দেওয়া দীনেশ ত্রিবেদী বলেন, ‘আমি মানতেই পারি না যে মুখ্যমন্ত্রী এসব কিছু জানেন না। আমরা এই পাপের ভাগী হতে চাই না। তাই বেরিয়ে এসেছি।’ শুভেন্দু আরও বলেন, ‘দিদি যখন পিসি হয়ে গিয়েছেন, আমরা তখন ছেড়ে এসেছি। আমরা ল্যাম্পপোস্ট হয়ে গিয়েছিলাম। গোটা রাজ্য একা উনি চালাচ্ছেন।’
প্রসঙ্গত, কয়লা পাচারকাণ্ডে ভোটের মুখে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্ত্রী রুজিরাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছিল সিবিআই। যা ঘিরে শোরগোল পড়ে গিয়েছিল রাজ্য রাজনীতিতে। অভিষেকের শ্যালিকাকেও এ ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। ভোটের আগে এই দুর্নীতিকাণ্ডে অতীতেও শুভেন্দু অধিকারী অভিযোগ করেছিলেন।
উল্লেখ্য, কয়লা কেলেঙ্কারিতেগ্রেফতার করা হয়েছে রাজ্য পুলিশের এক আধিকারিককে। সূত্র মারফত জানা গিয়েছে, রবিবার বাঁকুড়া থানার আইসি অশোক মিশ্রকে গ্রেফতার করেছে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট। ইডিসূত্রে জানা গিয়েছে, কয়লা কাণ্ডে সরাসরি যুক্ত ছিলেন ওই পুলিশ আধিকারিক। কলকাতা থেকে এদিন গ্রেফতার করা হয় তাঁকে। জানা গিয়েছে, শনিবার ইডি দফতরে তলব করা হয়েছিল অশোক মিশ্রকে। বহুক্ষণ তাঁকে জিজ্ঞাসবাদ করা হয়। তারপরেই গ্রেফতার করা হয় তাঁকে। সূত্রের খবর, আপাতত তাঁকে জেরা করে কয়লাকাণ্ডে কীভাবে টাকা পাচার হত এবং সেই টাকা কাদের কাছে যেত, এই তথ্য খুঁজে বের করার চেষ্টা চালাচ্ছে ইডি। কয়লাকাণ্ডে আরও কোন কোন প্রভাবশালী ব্যক্তি জড়িত রয়েছে সে বিষয়টিও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।