ক্যান্সারের বিষয়ে সচেনতা বাড়াতে ওয়েস্টবেঙ্গল ভলেন্টিয়ার ব্লাড ডোনার্স ফোরামের উদ্যোগে পদযাত্রা

0
5

বয়সের সঙ্গে বাড়ে ঝুঁকি, ক্যান্সার রুখতে তাই দরকার সচেতনতাচিকিৎসকদের মতে বয়সের সঙ্গে ক্যান্সারের ঝুঁকি প্রত্যক্ষ ভাবে সমানুপাতিক।

সম্প্রতি ক্যান্সারের বিষয়ে সচেনতা বাড়াতে ওয়েস্টবেঙ্গল ভলেন্টিয়ার ব্লাড ডোনার্স ফোরামের উদ্যোগে কলকাতায় পদযাত্রার আয়োজন করা হয় ।

ওয়েস্টবেঙ্গল ভলেন্টারি ব্লাড ডোনার্স ফোরামে উদ্যোক্তা অপূর্ব ঘোষ জানান , ক্যান্সারের বিষয়ে সচেনতা মুলক পদযাত্রাটি মৌলালি যুব কেন্দ্র থেকে  শুরু হয়ে শেষ হয় মানিকতলা এলাকায় । পদযাত্রায় উপস্থিত ছিলেন দাবারু মাস্টার দিব্যেন্দু বড়ুয়া ও অনকোলজিস্ট  ডঃ অমিত দত্ত  Dr Amit Dutt Dwary ও Dr: Tanweer Shahid .

তামাক তো বটেই। আছে দূষণ এবং হরেক জীবনশৈলী সংক্রান্ত ফ্যাক্টরও। ক্যান্সারের নেপথ্যে নাটের গুরু যে সব ঝুঁকি, সেগুলো নিয়ে লাগাতার প্রচার চলে আসছে বহু বছর হলো। কিন্তু বয়স ও লিঙ্গ? এই দু’টি ফ্যাক্টর সম্পর্কে সচেতনতার বহর কেমন?

চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন, বয়স ও লিঙ্গের বিষয় দু’টি যে কর্কটরোগের সবচেয়ে বড় ঝুঁকিপূর্ণ ফ্যাক্টর, সচেতনতা প্রচারের নানা দিকের মধ্যে হারিয়ে যায় এই দু’টি কথা। তাই আজ, বৃহস্পতিবার জাতীয় ক্যান্সার সচেতনতা দিবসের প্রাক্কালে বিশেষজ্ঞদের আক্ষেপ, বয়সের সঙ্গে যে ক্যান্সারের ঝুঁকি প্রত্যক্ষ ভাবে সমানুপাতিক এবং পুরুষদের ক্যান্সার ও তার জেরে মৃত্যুর আশঙ্কা যে মহিলাদের চেয়ে ঢের বেশি, এই দু’টি জরুরি কথা সম্পর্কে আমজনতার মনের মধ্যে তেমন সচেতনতা এখনও গড়ে ওঠেনি।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ‘দেখা গিয়েছে, ৬৫ বছরের বেশি বয়সীদের মধ্যে গড়ে ৬% মানুষই ক্যান্সারের শিকার হন। এই বয়সে ক্যান্সারের ঝুঁকি তরুণ বয়সের তুলনায় যে প্রায় ১১ গুণ বেশি, সে কথাটা মাথায় রাখলে বিভিন্ন ক্যান্সারের একেবারে প্রাথমিক উপসর্গগুলো সম্পর্কে সাধারণ মানুষ আরও বেশি সাবধানী হয়ে উঠবেন।’

চিকিৎসকরা বলছেন, বয়স ৪০ পেরোলে বছরে অন্তত একবার লাং ফাংশন টেস্ট, লিভার প্রোফাইল টেস্ট, প্রস্টেট স্পেসিফিক অ্যান্টিজেন টেস্টের মতো কয়েকটি সাধারণ পরীক্ষার সাহায্যেই এ সব অসুখকে একেবারে গোড়ায় ধরা সম্ভব।

ক্যান্সার শল্য চিকিৎসক গৌতম মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘ফুসফুস, মুখগহ্বর ও প্রস্টেট গ্রন্থির ক্যান্সার সব ধরনের ক্যান্সারের মধ্যে সবচেয়ে বেশি। এগুলি মূলত পুরুষদের মধ্যেই বেশি দেখা যায়। প্রস্টেট, পিনাইল ও টেস্টিকুলার ক্যান্সার তো আবার শুধুমাত্র পুরুষেরই হয়। কিন্তু মূত্রত্যাগে সামান্য সমস্যাকে চট করে লোকে আমল দিতে চায় না!

যখন প্রস্রাবের সঙ্গে রক্তপাত বা যন্ত্রণা শুরু হয়, ততক্ষণে পরিস্থিতি হাতের বাইরে চলে যায়। ক্যান্সারগুলো শেষ অবস্থায় ধরা পড়ে বলেই এতে মৃত্যুর হার এত বেশি। অথচ সময়ে চিকিৎসা শুরু হলে এঁদের প্রায় সকলকেই সুস্থ-স্বাভাবিক জীবনে ফেরানো সম্ভব।’

ক্যান্সার নিয়ে দীর্ঘ দিন ধরে কাজ করা চিকিৎসকদের অভিজ্ঞতা, অধূমপায়ীদের মধ্যেও ফুসফুসের ক্যান্সার, ধূমপায়ীদের মধ্যে মূত্রাশয়ের ক্যান্সার কিংবা অমদ্যপায়ীদের মধ্যে লিভার ক্যান্সার পুরুষদের মধ্যে কী হারে বেড়ে গিয়েছে, ভাবা যায় না!

দেরিতে রোগ ধরা পড়া প্রসঙ্গে ব্রেস্ট সার্জেন দীপ্তেন্দ্র সরকার জানাচ্ছেন, ১০০ জন স্তন ক্যান্সারের রোগীর মধ্যে ১ জন পুরুষ হন। কিন্তু তাঁর দ্রুত রোগ বেড়ে যাওয়া ও মৃত্যুর আশঙ্কার হার বাকি ৯৯ জন মহিলার চেয়ে অনেক বেশি। এর প্রধান কারণ, পুরুষ বিশ্বাসই করে না, তারও স্তন ক্যান্সার হতে পারে!

আর পাঁচটা চিকিৎসার মতো ক্যান্সার চিকিৎসাও বিনামূল্যে হয় এ রাজ্যের সরকারি পরিষেবায়। কিন্ত সেটা গোটা দেশের ছবি নয়। বেসরকারি ক্ষেত্রে তো বটেই, বাংলার বাইরে দেশের সেরা সরকারি

হাসপাতালগুলিতেও অন্যান্য পরিষেবার মতো ক্যান্সার চিকিৎসাতেও রোগী-পরিজনের খরচ হয় বিপুল টাকা। একটি সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, গরিব-বড়লোক নির্বিশেষে খরচের সেই অঙ্কটা বাৎসরিক গড়ে প্রায় ৩.৩০ লাখ টাকা।

সমীক্ষায় অংশ নেওয়া হাসপাতালগুলির মধ্যে রয়েছে দিল্লি-এইমস কিংবা পিজিআই-চণ্ডীগড় অথবা মুম্বইয়ের টাটা মেমোরিয়াল হাসপাতালের মতো সরকারি প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি সিএমসি-ভেলোরের মতো বেসরকারি ট্রাস্ট পরিচালিত হাসপাতালও।

সর্বভারতীয় ওই সমীক্ষায় অবশ্য বাংলার কোনও হাসপাতাল নেই। কিন্তু যে হেতু এ রাজ্যের অসংখ্য রোগী উত্তর, পশ্চিম কিংবা দক্ষিণ ভারতের ওই সব হাসপাতালে ক্যান্সার চিকিৎসার জন্য যান, তাই এই সমীক্ষার প্রতিফলন বঙ্গবাসী ক্যান্সার রোগীর পকেটেও পড়ে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

‘ফ্রন্টিয়ার্স পাবলিক হেলথ’ জার্নালে বছর চারেক আগে প্রকাশিত ১২,১৪৮ জন রোগীর উপর হওয়া ওই সমীক্ষা বলছে, হাসপাতালে থাকার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি টাকা গলে যায় ওষুধপত্র কেনার পিছনে, প্রায় ৪৫%। এবং আউটডোরে ডাক্তার দেখানোর ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি খরচ হয় রক্তপরীক্ষা-সহ বিভিন্ন ডায়গনস্টিক টেস্টে, যা প্রায় ৩৬%।

বিখ্যাত হেমাটো-অঙ্কোলজিস্ট – এর কথায় ,, ‘ক্যান্সারের চিকিৎসা মানে তো শুধু ওষুধপত্র, অপারেশন আর ডায়গনস্টিক পরীক্ষার খরচ নয়। সেই সঙ্গে টানা চলে বারংবার দূর-দূরান্ত থেকে কলকাতার হাসপাতালে দৌড়ে আসা বাবদ বিপুল যাতায়াতের এবং শহরে থাকা-খাওয়ার খরচও। সেটাও কিন্তু নেহাত কম নয়।’

ফ্রন্টিয়ার্স জার্নালে প্রকাশিত ওই সমীক্ষার রিপোর্টেও অবশ্য গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে এই ধরনের নানা নন-মেডিক্যাল খরচে। তাতে বলা হয়েছে, মোট খরচের ৬-২১% যাতায়াতের পিছনে এবং ৪-৫% থাকা-খাওয়ার পিছনে খরচ হয় রোগী-পরিজনের।

কেননা, কোথাও রোগী একা যান না, সঙ্গে থাকেন বাড়ির অন্তত একজন কেউ। সেই কারণেই বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ক্যান্সারের নিরাময়ের জন্য সবার আগে দরকার সঠিক সময়ে রোগটা ধরা পড়া। তার জন্য আমাদের সচেতন হতে হবে অনেক আগে থেকেই।

Previous articleFrench Film Festival at Kolkata 2025 কলকাতায় ফরাসি চলচ্চিত্র উৎসবে গৌতম ঘোষের হিন্দি ছবি ‘রাগীর’দেখে মুগ্ধ দর্শক

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here