দেশের সময় ওয়েব ডেস্কঃ ক্যানিং, কুলতলির পর বহরমপুর। চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যে তিন তিনজন তৃণমূল নেতাকর্মী খুন।
সোমবার সকালে দুষ্কৃতীদের গুলিতে খুন হলেন বহরমপুরের যুব তৃণমূল নেতা নাজমুল শেখ (৩৫)। অভিযোগ, নিয়ালিস পাড়ার বাড়ি থেকে বহরমপুর যাওয়ার সময় মোটর সাইকেল চেপে এসে চার-পাঁচজন হেলমেট পরা লোক ঘিরে ধরে তাঁকে। পয়েন্ট ব্ল্যাঙ্ক রেঞ্জ থেকে বেশ কয়েক রাউন্ড গুলি করা হয়। ঘটনাস্থলেই মাটিতে লুটিয়ে পড়েন নিয়ালিস পাড়া অঞ্চল যুব তৃণমূল সভাপতি। এরপর স্থানীয়রা উদ্ধার করে মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন চিকিৎসকরা।
নদিয়ার কৃষ্ণগঞ্জে তৃণমূল বিধায়ক খুনের কায়দায় মুর্শিদাবাদের বহরমপুরে পয়েন্ট ব্ল্যাঙ্ক রেঞ্জ থেকে গুলি করে খুন করা হল যুব তৃণমূল নেতাকে। সোমবার সকাল সাড়ে দশটা নাগাদ বহরমপুরের নিয়ামিস পাড়া ঘাটে নৌকা থেকে নেমে বাড়ি ফিরছিলেন নাজিমুল শেখ নামে ওই যুব তৃণমূল নেতা। চার থেকে পাঁচ জন দুষ্কৃতী বাইকে করে এসে পয়েন্ট ব্ল্যাঙ্ক রেঞ্জ থেকে গুলি করে চম্পট দেয়। রক্তাক্ত অবস্থায় নাজিমুলকে হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করে।
এই খুনের ঘটনায় কোনও ব্যক্তিগত আক্রোশ না রাজনৈতিক কারণ রয়েছে তা খতিয়ে দেখছে পুলিস। যদিও স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্বের অভিযোগ বিজেপি আশ্রিত দু্ষ্কৃতীরাই এই কাজ করেছে। তাঁদের দাবি নাজিমুল এলাকায় অত্যন্ত জনপ্রিয় নেতা ছিলেন। তাই এখানে ব্যক্তিগত আক্রোশের কোনও কারণই থাকতে পারে না।
কয়েকদিন আগে ঠিক একইভাবে পয়েন্ট ব্ল্যাঙ্ক রেঞ্জ থেকে গুলি করে খুন করা হয়েছিল নদিয়ার কৃষ্ণগঞ্জের বিধায়ককে।
খবর পেয়েই সেখানে পৌঁছয় বহরমপুর থানার পুলিশ। নিহত যুব তৃণমূল নেতার দেহ ময়না তদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে। নাজমুল শাড়ির ব্যবসা করতেন বলে জানা গিয়েছে। রাজনোইতিক কারণেই খুন নাকি অন্য কোনও কারণ তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
সোমবার কলকাতার নজরুল মঞ্চে দলের নেতাদের নিয়ে কোর কমিটির বর্ধিত বৈঠক ডেকেছেন তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। জেলার সমস্ত নেতাই প্রায় কলকাতায় চলে এসেছেন। তাই স্থানীয় নেতারাই সেখানে রয়েছেন। তাঁদের অভিযোগ, কংগ্রেস এবং বিজেপি-র লোকেরা মিলেই এই খুন করিয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে এ-ও জানা গিয়েছে, বহরমপুর থানায় নিহত যুব তৃণমূল নেতার বিরুদ্ধে একাধিক অপরাধমূলক কাজে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে।
রবিবার দক্ষিণ চব্বিশপরগনার ক্যানিং এবং কুলতুলিতে খুন হন দুই তৃণমূলকর্মী সুরথ মণ্ডল এবং রাজু নস্কর। সরস্বতী পুজোর রাতে দুষ্কৃতীদের গুলিতে খুন হন নদিয়ার কৃষ্ণগঞ্জের তৃণমূল বিধায়ক সত্যজিৎ বিশ্বাস। তার কয়েক দিন পরেই বজবজের ২০ নম্বর ওয়ার্ডে দলীয় কার্যালয়ে বসে থাকার সময় ভর সন্ধে বেলা স্থানীয় তৃণমূল কাউন্সিলরকে বোমা মারার অভিযোগ ওঠে। প্রাণে বেঁচে গেলেও গুরুতর জখম হন তিনি। ফলে গত কয়েক সপ্তাহে এই পাঁচ পাঁচটি ঘটনা ঘটল। যাতে মৃত্যু হয়েছে চারজনের। আর সবটাই শাসক দলের নেতাকর্মীদের উপর। পর্যবেক্ষকদের মতে, ভোট যত এগিয়ে আসছে ততই হিংসাত্মক চেহারা নিচ্ছে বাংলার রাজনীতি।