দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ আমাদের দেশ যাতে একুশ শতকের উপযুক্ত হয়ে উঠতে পারে, সেজন্যই নতুন কৃষি আইন করা দরকার ছিল। সোমবার এভাবেই কৃষি বিলের সমর্থনে মুখ খুললেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তাঁর বক্তব্য, যাঁরা ওই আইন নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি করছেন, তাঁরা কৃষকদের মিথ্যা কথা বলে উত্তেজিত করতে চাইছেন। তাঁরা ভাবছেন, ওই আইনের জন্য তাঁদের হাতে আর ‘নিয়ন্ত্রণ থাকবে না’।

প্রধানমন্ত্রীর কথায়, “আচমকা অনেকে নতুন আইন নিয়ে নানা সমস্যার কথা বলছেন। প্রশ্ন তোলা হচ্ছে, কৃষি মান্ডিগুলির কী হবে? সেগুলি কি বন্ধ হয়ে যাবে।” মোদী আশ্বাস দেন, মান্ডিগুলি কখনই বন্ধ হয়ে যাবে না। তিনি বলেন, “আমি পরিষ্কার বলতে চাই, নতুন আইন কৃষি মান্ডি তুলে দিতে চায় না। আগে যেভাবে সেখানে কাজ হত, ভবিষ্যতেও হবে। আমাদের সরকার কৃষি মান্ডিগুলির আরও উন্নতি করবে। যারা বলছে নতুন আইনে কৃষি মান্ডিগুলির ক্ষতি হবে, তারা মিথ্যা কথা বলছে।”

পরে তিনি বলেন, “নতুন আইন কৃষিক্ষেত্রকে একুশ শতকের উপযোগী করে তুলবে। সরকার কৃষকদের স্বার্থের কথা ভেবেই এই সংস্কার চালু করেছে। আগে কৃষি সংক্রান্ত যে আইন ছিল, তাতে অনেকে চাষিদের বঞ্চিত করত। এই পরিস্থিতি বদলানো দরকার ছিল।”

রবিবার বিরোধীদের প্রবল বিক্ষোভের মধ্যেই ধ্বনিভোটে পাশ হয়ে যায় কৃষিসংক্রান্ত জোড়া বিল। রাজ্যসভায় এই বিল দুটি পেশ করেন কেন্দ্রীয় কৃষিমন্ত্রী নরেন্দ্র সিং তোমর। রাজ্যসভায় বিল পেশের পরেই সম্মিলিতভাবে বিরোধিতা করে প্রায় সব বিরোধী দলই। কংগ্রেস, তৃণমূল, বামফ্রন্ট, ডিএমকে, আরজেডি, অকালি দল প্রমুখ একসঙ্গে কেন্দ্রের এই বিলের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ দেখানো শুরু করে। এমনকি বিজেডি ও টিআরএসের মতো দলও এই বিলের বিরোধিতা করে। এই বিক্ষোভের ফলে অধিবেশনের কাজে দেরি হয়। তাই নির্ধারিত সময়ের পরেও চলে অধিবেশন। বিলগুলি নিয়ে ভোটাভুটি শুরু হয়। সেই সময়ও বিরোধীরা স্লোগান দেয়। তাতে অবশ্য বিল পাশ আটকায়নি। দুটি বিলই পাশ করিয়ে নেয় নরেন্দ্র মোদী সরকার।

সংসদে চলতি বাদল অধিবেশনে তিনটি অধ্যাদেশ তথা অর্ডিন্যান্স জারি করে নরেন্দ্র মোদী সরকার। 

১) কৃষি পণ্যের বাণিজ্য সংক্রান্ত অধ্যাদেশ, ২) কৃষি পরিষেবা ও কৃষি পণ্যের মূল্যের নিশ্চয়তা সংক্রান্ত অধ্যাদেশ এবং ৩) অত্যাবশ্যকীয় পণ্য আইন সংশোধন অধ্যাদেশ। কেন্দ্রের বক্তব্য, এই তিন অধ্যাদেশ কৃষকের স্বার্থ রক্ষা করবে। কৃষকরা নিজের এলাকার বাইরে অন্যত্র বা অন্য রাজ্যে তাঁদের উৎপাদিত পণ্য বিপণনের সুযোগ পাবেন। বর্তমানে চাল, গম সহ বেশ কিছু কৃষিপণ্য চাষিরা নোটিফায়েড এলাকার বাইরে বিক্রি করতে পারেন না। তা ছাড়া নয়া অধ্যাদেশের বলে কৃষকরা বেসরকারি সংস্থার সঙ্গে চুক্তি করে কৃষি পণ্য উৎপাদন করতে পারবেন। গত বৃহস্পতিবার এই অর্ডিন্যান্সগুলি বিলের আকারে পাশ হয়ে যায় লোকসভায়।

বিভিন্ন কৃষক সংগঠনের বক্তব্য, এই তিন অধ্যাদেশ হল তাদের স্বার্থ বিরোধী। এর ফলে চাষিরা ন্যূনতম সহায়ক মূল্য থেকে বঞ্চিত হবে। সব থেকে ক্ষতি হতে পারে ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক চাষিদের। বেসরকারি সংস্থার হাতে বিপন্ন হতে পারেন তাঁরা। কারণ উৎপাদিত কৃষি পণ্যের সঠিক মূল্য থেকে তাঁদের বঞ্চিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। শুধু কৃষকরা নন, কমিশন এজেন্ট তথা ফড়েরাও এই অধ্যাদেশের বিরোধিতা করছেন। তাঁদের আশঙ্কা, এর ফলে তাঁদের ব্যবসা লাটে উঠবে। ফলে ফড়েদের সঙ্গে যুক্ত বিপুল সংখ্যক মজুর ও পরিবহণ কর্মী কাজ হারাবেন বলে তাঁদের মত।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here