দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ প্রজাতন্ত্র দিবসের দিন কৃষকদের ট্র্যাক্টর র্যালি চলাকালীন পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। কাঁদানে গ্যাস, লাঠিচার্জ, ব্যারিকেড সব কিছুকে অতিক্রম করে কৃষকদের মিছিল পৌঁছেছে লালকেল্লা। সেখানে উড়েছে কৃষক সংগঠনের পতাকা। এই পরিস্থিতিতে দিল্লির আইন শৃঙ্খলা নিশ্চিত করতে ও রাজধানীর নিরাপত্তা নিয়ে জরুরি বৈঠকে বসেছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ।
সূত্রের খবর, উচ্চ পর্যায়ের এই বৈঠকে উপস্থিত রয়েছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রসচিব অজয় ভল্লা ও দিল্লির পুলিশ কমিশনার এস এন শ্রীবাস্তব। বৈঠকে এদিন দিল্লির বিভিন্ন এলাকায় কৃষক ও পুলিশের যে সংঘর্ষ হয়েছে সে বিষয়ে বিস্তারিত জানানো হয়েছে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে। এই বৈঠকে নিরাপত্তা নিয়ে বেশ কিছু বড় সিদ্ধান্ত নেওয়া যেতে পারে বলেই মনে করা হচ্ছে। সেনাবাহিনী নামানোর সম্ভাবনাও রয়েছে বলে খবর।
#WATCH | Farmers tractor rally reaches Red Fort in Delhi#FarmLaws #RepublicDay pic.twitter.com/9j1zb51vHn
— ANI (@ANI) January 26, 2021
ইতিমধ্যেই দিল্লির বেশ কিছু এলাকায় ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। দিল্লির অনেক বাসিন্দা সোশ্যাল মিডিয়ায় জানিয়েছেন, তাঁদের কাছে সরকারের তরফে মেসেজ পাঠানো হয়েছে। সেখানে লেখা, “সরকারের নির্দেশ অনুযায়ী পরবর্তী নির্দেশ পর্যন্ত আপনার এলাকায় ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ করা হয়েছে।”
এদিন টুইটারে কংগ্রেস সাংসদ রাহুল গান্ধী লিখেছেন, হিংসা কোনও সমস্যার সমাধান নয়। একইসঙ্গে তিন কৃষি আইন বাতিলের জন্য কেন্দ্রের কাছে আর্জি রেখেছেন প্রাক্তন কংগ্রেস সভাপতি।
हिंसा किसी समस्या का हल नहीं है। चोट किसी को भी लगे, नुक़सान हमारे देश का ही होगा।
— Rahul Gandhi (@RahulGandhi) January 26, 2021
देशहित के लिए कृषि-विरोधी क़ानून वापस लो!
সংবাদসংস্থা এএনআই সূত্রে খবর, ২৬ জানুয়ারি রাত ১১টা ৫৯ মিনিট পর্যন্ত সিঙ্ঘু এলাকা, গাজিপুর, টিকরি, মুকারবা চক, নাংলোই প্রভৃতি এলাকায় ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এই প্রতিটি এলাকায় ট্র্যাক্টর র্যালি উপলক্ষ্যে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠেছিল।
Delhi: Police officials sit on road in Nangloi to block the area where farmers holding tractor parade have reached pic.twitter.com/Rjiz26K4dk
— ANI (@ANI) January 26, 2021
শুধু ইন্টারনেট পরিষেবা নয়, দিল্লি মেট্রো রেল কর্পোরেশন একাধিক মেট্রো স্টেশনের ঢোকা ও বেরনোর গেট বন্ধ করে দিয়েছে। এই মেট্রো স্টেশনগুলি বেশিরভাগই উত্তর ও মধ্য দিল্লির।দিল্লি মেট্রোর তরফে টুইট করে জানানো হয়েছে, গ্রিন লাইনের স্টেশনের দরজা বন্ধ রাখা হচ্ছে। বিক্ষোভের মধ্যে যাতে সরকারি সম্পত্তির ক্ষতি না হয় তার জন্য এই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এই স্টেশনগুলি হল- ব্রিগেডিয়ার হোশিয়ার সিং, বাহাদুরগড় সিটি, পণ্ডিত শ্রী রাম শর্মা, টিকরি বর্ডার, টিকরি কালান, ঘেওরা, মুণ্ডকা ইন্ডাস্ট্রিয়াল এরিয়া, মুণ্ডকা, রাজধানী পার্ক, নাংলোই রেলওয়ে স্টেশন, নাংলোই।
Security Update
— Delhi Metro Rail Corporation I कृपया मास्क पहनें😷 (@OfficialDMRC) January 26, 2021
Entry/exit gates of Delhi Gate metro station are closed.
মঙ্গলবার, প্রজাতন্ত্র দিবসের দিন দেশের রাজধানীতে কৃষকদের বিক্ষোভ বুঝিয়ে দিলেন, সংঘাত এত সহজে আর মেটার নয়। দিল্লির একাধিক জায়গায় ব্যারিকেড ভেঙে ট্রাক্টর মিছিল এগিয়ে গিয়েছিল আগেই। দুপুরের পরেই লালকেল্লায় কাছে পৌঁছে যান বিক্ষোভকারীরা। ঐতিহ্যশালী লালকেল্লার একাধিক স্তম্ভের মাথায় কৃষক সংগঠনের পতাকাও ঝুলিয়ে দেন। এমনকী কেল্লার সামনের খুঁটি বেয়ে উঠে পতাকা টাঙিয়ে দেন এক আন্দোলনকারী। আর বিক্ষোভের নামে এই কাণ্ড অনেকেই সহজভাবে মেনে নেননি। সমালোচনা শুরু হয় নানাস্তরে। কিন্তু সত্যিই কি কৃষকদের এই ‘প্রতিবাদ’-এর অনুমতি দেওয়া হয়েছিল? নাকি ষড়যন্ত্রের ফল লালকেল্লা অভিযান? প্রশ্ন তুলেছেন হান্নান মোল্লার মতো কৃষক নেতা।
কিষান নেতা রাকেশ টিকাইত বলেন, ‘আমরা শান্তিতে মিছিল করেছি। কিন্তু যারা অশান্তি করছে, তাদের আমরা চিনে ফেলেছি। দিল্লিতে পৌঁছলেও সেখানে বসে আন্দোলনের কোনও পরিকল্পনা আমাদের ছিল না। এমনকী লালকেল্লা যাওয়ার কোনও সিদ্ধান্তও কৃষক সংগঠনের পক্ষ থেকে নেওয়া হয়নি। কিন্তু তাও কেন এমন করা হল, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’ একই সুর অপর কিষান নেতা হান্নান মোল্লার গলাতেও। ‘এই সময় ডিজিটাল’-এ কাছে তাঁর অভিযোগ, ‘এত বড় শান্তিপূর্ণ আন্দোলন গত একশো বছরে কেউ দেখেনি। সকলে মেনে নিয়েছেন এ কথা। শান্তি আমাদের শক্তি। আমরা জানতাম, এমন অশান্তি ঘটানো হতে পারে। কৃষকরা কখনই নিজেদের আন্দোলনকে এভাবে কালিমালিপ্ত করতে পারে না। কিছু ষড়যন্ত্রকারী এই কাণ্ড ঘটিয়েছে। লালকেল্লায় পতাকা তুলছে, আর পুলিশ দাঁড়িয়ে দেখছে। সরকারকে হস্তক্ষেপ করার সুযোগ করে দিতে ষড়যন্ত্র করা হয়েছে। যারা এই ঘটনা ঘটিয়েছে, তাঁদের আমরা খুঁজে বের করব। ব্যবস্থা নেওয়াই হবে।’
অপরদিকে, বাংলার সিপিএম নেতা তথা আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য সরাসরি ষড়যন্ত্রের অভিযোগ তুলেছেন। তাঁর কথায়, ‘লালকেল্লায় যে তান্ডবলীলা চলেছে, তা আসলে ষড়যন্ত্র। আর এই ষড়যন্ত্র করেই কৃষক আন্দোলনকে কালিমালিপ্ত করার প্রচেষ্টা করা হয়েছে।’ আর এই ষড়যন্ত্রের জন্য সরাসরি কেন্দ্রের দিকেই অভিযোগের আঙুল তুলেছেন বিকাশ। দাবি করেছেন নিরপেক্ষ তদন্তেরও। যদিও, পঞ্জাব কিসান ইউনিয়নের নেতা রুলদু সিংহ মনসা ষড়যন্ত্রের বদলে এই ঘটনাকে ‘অল্পবয়সিদের’ কাণ্ড বলেই দাবি করেছেন। তাঁর কথায়, ‘অল্পবয়সি অনেক কৃষক এই আন্দোলনে সামিল হয়েছেন। পঞ্জাব, হরিয়ানা থেকে তাঁরা অনেকটা পথ পেরিয়ে এসেছেন। এরপরই লালকেল্লা এবং আইটিও পৌঁছে যান তাঁরা। সকলকেই নির্ধারিত পথে মিছিল করতে অনুরোধ করব। আমরা শান্তি বজায় রাখছি।’ ইতিমধ্যে দিল্লি পুলিশের বিরুদ্ধে গুলি চালানোর অভিযোগ তুলেছেন অনেক কৃষক।
অপরদিকে, কৃষকদের লালকেল্লা অভিযান ও ট্রাক্টর উলটে এক কৃষকের মৃত্যুর পরই শান্তি বজায় রাখার আর্জি জানান কংগ্রেস নেতা রাহুল গাঁধী। ট্যুইটারে তিনি লিখেছেন, ‘হিংসা কখনই সমস্যার সমাধান করতে পারে না, যারই ক্ষতি হোক, সেই ক্ষতি গোটা দেশের।’ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে রাজধানী ও দিল্লি সীমান্তের বেশ কিছু জায়গায় রাত ১২টা পর্যন্ত ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
অপরদিকে, দিল্লির কৃষক আন্দোলনে পুলিশের লাঠিচার্জ ও কাঁদানে গ্য়াস ছোড়ার প্রতিবাদে আগামিকাল রাজ্য় জুড়ে ধিক্কার কর্মসূচি তৃণমূলের। জানিয়েছেন তৃণমূল বিধায়ক বেচারাম মান্না।