দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ কলকাতা পুরসভায় ওয়ার্ড ভিত্তিক সংরক্ষিত আসনের তালিকা শুক্রবার প্রকাশিত হয়ে গিয়েছে। একে একে বাকি সব পুরসভাতেও এবার তা ঘোষণা হবে। কিন্তু বাংলার রাজনৈতিক মহল এমনকী শাসক দলের মধ্যেও কৌতূহলের বিষয় হল, সব পুরসভায় কি একই সঙ্গে ভোট হবে? নাকি কলকাতা পুরসভায় ভোট হবে আগে। তার পর ধাপে ধাপে উত্তর ও দক্ষিণবঙ্গের পুরসভাগুলিতে ভোট হবে!

তৃণমূলের শীর্ষ সূত্রে বলা হচ্ছে, এ ব্যাপারে স্পষ্ট করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দলের মধ্যে কোনও ইঙ্গিত দেননি। তবে দুটি সম্ভাবনা নিয়ে বিবেচনা চলছে। প্রথম বিকল্পের সম্ভাবনাই বেশি। তা হল, প্রথমে কলকাতা পুরসভায় এপ্রিল মাস নাগাদ ভোট হোক। তার পর সেখানে জয় নিশ্চিত করে সেই আবহে দক্ষিণবঙ্গের আরও কিছু পুরসভায় ভোট হোক তার মাস খানেকের মধ্যে। সেগুলির ফলাফল দেখে তার পর উত্তরবঙ্গের পুরসভাগুলিতে সব শেষে ভোট হবে।

কলকাতা পুরসভায় কেন আগে ভোট করানোর কথা ভাবা হচ্ছে? কারণ, লোকসভা ভোটে দেখা গিয়েছে গোটা রাজ্যে বারো আনা পুরসভাতেই বিজেপির কাছে পিছিয়ে পড়েছে তৃণমূল। তবে কলকাতায় বিজেপির তুলনায় এগিয়ে ছিল তারা। তা ছাড়া একে তো অন্তত চল্লিশটি ওয়ার্ডে সংখ্যালঘু ভোট নির্ণায়ক। দ্বিতীয়ত, তৃণমূলের কাউন্সিলরদের অনেকেই স্থানীয় ভাবে জনপ্রিয় বা তাঁদের কাছ থেকে এলাকার বহু মানুষ নানা ভাবে সুবিধা পেয়ে ছেন৷

কিন্তু একসঙ্গে সব পুরসভায় ভোট করানো হলে সমস্যা হতে পারে। তখন কলকাতা পুরসভায় জিতলেও গরিষ্ঠ সংখ্যা পুরসভা বা পুরনিগমে খারাপ ফল হলে একুশের আগে বিরূপ বার্তা যাবে। বিশেষ করে উত্তরবঙ্গ ও পশ্চিমাঞ্চলের অধিকাংশ পুরসভাতেই পিছিয়ে ছিল তৃণমূল। সুতরাং ধাপে ধাপেই ভোট করানো হোক।

প্রসঙ্গত, লোকসভা ভোটে পুর এলাকায় তৃণমূলের বিপর্যয়ের ছবিটা ছিল ভয়াবহ! গোটা রাজ্যের মোট ১২৭ টি পুরসভা ও পুর নিগমের মধ্যে ১০১ টি-তেই পিছিয়ে পড়েছিল শাসক দল। খোদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্বাচন কেন্দ্র ডায়মন্ডবারবার পুরসভাও ব্যতিক্রম নয়।

আরও স্পষ্ট করে বললে, ১২৭টি পুরসভার মধ্যে ওয়ার্ড ভিত্তিক ফলাফলের নিরিখে মাত্র ২৬টিতে জিতেছিল তৃণমূল। কংগ্রেস জিতেছিল বহরমপুর, মালদহের মতো দু-চারটে পুরসভায়। বাকি সবই চলে গিয়েছিল বিজেপি-র দিকে। অথচ মজার কথা হল, বাংলায় ৯৯ শতাংশ পুরসভায় কিন্তু নিরঙ্কুশ ক্ষমতায় রয়েছে তৃণমূল।

পরাজয়ের এই ভয়াবহতা উত্তরবঙ্গে অনেক বেশি। হিসাব মতো ১২৭ টি পুরসভার মধ্যে প্রায় ৫০ টি পুরসভায় লোকসভা ভোটে একটি ওয়ার্ডেও লিড পায়নি তৃণমূল। এর মধ্যে সিংহভাগই উত্তরবঙ্গের পুরসভা। যেমন, শিলিগুড়ি, জলপাইগুড়ি, দার্জিলিং, রায়গঞ্জ, মালদহ ইত্যাদি। পশ্চিমাঞ্চল তথা দক্ষিণবঙ্গেও এমন কিছু পুরসভা রয়েছে।

দক্ষিণবঙ্গে এমন সব পুরসভায় হেরেছে তৃণমূল, যা দুঃস্বপ্নেও ভাবেনি শাসক দল। হুগলি জেলার তারকেশ্বর, শ্রীরামপুর, রিষড়া, আরামবাগের মতো পুরসভায় ডাহা হেরেছে তৃণমূল। উত্তর চব্বিশ পরগনায় তো কথাই নেই।

যদিও তৃণমূলের মধ্যে কেউ কেউ সংশয় প্রকাশ করছেন যে, কলকাতা পুরসভাতেই যদি ফল আশানুরূপ না হয় তখন কী হবে? তবে এই মত তৃণমূলের উপর মহলে সংখ্যালঘু। কারণ, দলের অধিকাংশ শীর্ষ সারির নেতাই মনে করেন যাই হোক না কেন কলকাতা পুরসভায় দল জিতবেই। এবং সেই জয়কে একুশে বিধানসভা ভোটের আগে সেমিফাইনালের ফল বলে তুলে ধরে একটা আবহ তৈরি করাও যেতে পারে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here