দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ হুগলির দাদপুরে হোদলা এলাকায় মর্মান্তিক পথ দুর্ঘটনায় মৃত্যু হল রাজ্য পুলিশের কম্যান্ডিং অফিসার দেবশ্রী চট্টোপাধ্যায়-সহ তিন জন। আদতে বেহালার বাসিন্দা হলেও এখন শিলিগড়ির ডাবগ্রামে পোস্টেড ছিলেন দেবশ্রী। তাঁর সঙ্গে মৃত্যু হয়েছে তাঁর নিরাপত্তারক্ষী তাপস বর্মণ ও গাড়ির চালক মনোজ সাহার।
রাজ্য পুলিশের সশস্ত্র ব্যাটালিয়নের কমান্ডান্ট পদে কর্মরত ছিলেন দেবশ্রী চট্টোপাধ্যায়। কলকাতা পুলিশের ইতিহাসে থানার প্রথম মহিলা ওসিও ছিলেন দেবশ্রী। বৃহস্পতিবার রাতে তিনি শিলিগুড়ির ডাবগ্রামে ব্যাটালিয়নের সদর দফতর থেকে কলকাতার উদ্দেশে রওনা দেন। কলকাতার পর্ণশ্রী এলাকায় তাঁর বাড়ি।
পুলিশ জানিয়েছে, শুক্রবার সকালে ভোর সাড়ে ছ’টা নাগাদ ২ নম্বর জাতীয় সড়কে দাদপুর থানার হোদলা ব্রিজের কাছে দাঁড়িয়ে থাকা ১২ চাকার একটি বালির লরির পিছনে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ধাক্কা মারে দেবশ্রীর স্করপিও গাড়িটি। প্রাথমিক তদন্তে অনুমান, গাড়ির চালক সম্ভবত ঘুমিয়ে পড়েছিলেন। ঘটনাস্থলেই গাড়িটি দুমড়মুচড়ে যায়। সে সময় ওই এলাকায় টহল দিচ্ছিলেন পুলিশ ও সিভিক ভলান্টিয়াররা।
দুর্ঘটনার পরে আহত তিন জনকেই চুঁচুড়া ইমামবাড়া জেলা হাসপাতালে নিয়ে যায় দাদপুর থানার পুলিশ। সেখানে তাঁদের মৃত বলে ঘোষণা করেন চিকিংসকরা। ঘটনার খবর পেয়ে হুগলি গ্রামীণ পুলিশের এসপি তথাগত বসু হাসপাতালে এসে পৌঁছন। ময়নাতদন্তে পাঠানো হয়েছে দেহগুলি।
জানা গিয়েছে, বৃহস্পতিবার রাতে শিলিগুড়ির ডাবগ্রাম থেকে গাড়ি নিয়ে বেহালার পর্ণশ্রীতে নিজের বাড়ি ফিরছিলেন অফিসার। দুর্ঘটনার সময়ে গতি বেশ বেশি ছিল তাঁর গাড়ির। সে কারণেই দুর্ঘটনা, নাকি ক্লান্তিতে চালকের চোখ লেগে গেছিল, তা তদন্ত করে দেখছে পুলিশ। খবর পেয়ে হাসপাতালে এসে পৌঁছন দেবশ্রীর স্বামী সলিল রায় এবং ১৮ বছরের ছেলে অধীপ রায়।
কলকাতা পুলিশের প্রথম মহিলা ওসি ছিলেন দেবশ্রী চট্টোপাধ্যায়। ২০১০ সালে নর্থ পোর্ট থানায় ওসি হন তিনি। ২০১৬ সালে বিধানসভা নির্বাচনের পর যে অফিসারদের কলকাতা থেকে জেলায় ডেপুটেশনে পাঠানো হয়েছিল, তিনি ছিলেন তাঁদের মধ্যে একজন। দাপুটে, দক্ষ, সৎ অফিসার হিসেবে জনপ্রিয় ছিলেন ৪৬ বছরের দেবশ্রী। বর্তমানে ডাবগ্রামের ১২ নং ব্যাটেলিয়নের কম্যান্ডিং অফিসার ছিলেন তিনি।
কলকাতা পুলিশের ওসি হওয়ার আগে লালবাজারের ডিটেক্টিভ ডিপার্টমেন্টের ট্র্যাফিকিং উইং-এর ইনচার্জ ছিলেন তিনি। তার আগে সাব ইনস্পেক্টর ছিলেন ইকবালপুর থানায়। রাজ্য পুলিশের অন্যতম দক্ষ পুলিশ আধিকারিক দেবশ্রী চট্টোপাধ্যায়ের এমন আকস্মিক ও মর্মান্তিক পরিণতিতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে পুলিশ মহলে।
হুগলি পুলিশের তদন্তকারীদের অনুমান, কোনও ভাবে দেবশ্রীর গাড়ির চালক ঘুমিয়ে পড়েছিলেন। আর সেই কারণেই ভোরের দিকে ঘুমের মধ্যেই নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে লরির পিছনে ধাক্কা মারে তাঁদের গাড়ি।
চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে এই এলাকার কাছেই পোলবায় পুলকার দুর্ঘটনা নিয়ে ঝড় বয়ে যায় রাজ্যে। দ্রুতগতির স্কুলের গাড়ি দুর্ঘটনা ঘটিয়ে পড়ে যায় নয়ানজুলিতে, মারা যায় সাত বছরের শিশু ঋষভ সিং। তখনই দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়েতে গতির নিরাপত্তার বিষয়টি আলোচিত হয়। কিন্তু সাত মাসের মাথায় ঘটে গেল আবারও মর্মান্তিক দুর্ঘটনা।
ঘটনাচক্রে, আজ সঙ্গীতশিল্পী কালিকাপ্রসাদের জন্মদিন। তিনিও এই দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়েতেই প্রাণ হারান গাড়ি দুর্ঘটনায়। সেবারেও সামনে এসেছিল, গাড়ির চালকের ক্লান্তিতে চোখ লেগে যাওয়ার ঘটনা। সম্ভবত একই কারণে গতির বলি হলেন সৎ, দক্ষ, জনপ্রিয় পুলিশ অফিসার দেবশ্রী চট্টোপাধ্যায়।