দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ কলকাতার পথে ফিরছে দোতলা বাস। সরকারি ভাবে ২০০৫ সাল থেকে দোতলা বাস  তুলে দেওয়া হয়েছিল। সেই হিসেবে দেড় দশক বছর পরে ফের এই শহরের পথে দোতলা বাস দেখা যাবে। তবে দোতলা বাস ফিরছে পর্যটনের আকর্ষণ হিসেবে, জনপরিবহণের জন্য নয় ৷

দোতলা বাস তুলে দেওয়ার অনেক আগে থেকেই অবশ্য শহরের রাস্তায় ক্রমশ কমতে শুরু করেছিল বাসগুলি। ধীরে ধীরে নানা কারণে ক্রমশ আলাদা হয়ে যায় শহরের সঙ্গে দোতলা বাসের প্রায় আট দশকের সম্পর্ক। কিন্তু লাল দোতলা বাসের সঙ্গে নাড়ির টানটি ভুলতে পারেনি তিলোত্তমা। আজ যাঁরা করোনাকালে পুজোয় ঘরবন্দি হয়ে দুর্গা ঘিরে নানা স্মৃতি রোমন্থনে ব্যস্ত, তাঁদের কারও শৈশব, কারও যৌবনের পুজোয় এই দোতলা বাস ছিল ঠাকুর দেখার সঙ্গী। বাসের উঁচু জানলা দিয়ে মুখ বাড়িয়ে সকলের মাথা টপকে দুর্গা-দর্শনের সেই দিনগুলি ফের রঙিন হয়ে উঠতে পারে এইবার। তবে বাস কোথা থেকে ছাড়বে, কোথায় যাবে- সে সব সবিস্তারে এখনও জানানো হয়নি।

তবে নিশ্চিত ভাবেই পুজোর আগে দোতলা বাস ঘিরে নানা আবেগ উস্কে দিয়েছে রাজ্য সরকার। আগামিকাল, মঙ্গলবার নবান্ন থেকে দু’টি বাসের যাত্রার সূচনা করবেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দোতলা বাস ফিরছে নীল-সাদা রঙে। অত্যাধুনিক সাজে। জনপরিবহণ নয়, অনেকটা লন্ডন সিটি ট্যুরের আদলে কলকাতায় ঘোরার জন্য আসছে হুড খোলা এই দোতলা বাস।

অত্যাধুনিক এই বাসগুলিতে থাকছে সিসিটিভি, প্যানিক বাটন, অটোম্যাটিক দরজা, ডেস্টিনেশন বোর্ড। পুরোনো দোতলা বাসে দু’টি দরজা থাকত- একটি নীচের এবং একটি উপরে ওঠার। এই বাসে একটিই দরজা থাকবে। বাসের ভিতরে থাকছে ছাদে ওঠার সিঁড়ি। মোট আসন ৫১টি, এর মধ্যে দোতলায় ১৭টি। ভারত স্টেজ ফোর গোত্রের এই নতুন বাস নির্মাণ করেছে জামশেদপুরের সংস্থা বেবকো। বাসের ছাড়পত্র দিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকারের সেন্ট্রাল ইনস্টিটিউট অফ রোড ট্রান্সপোর্ট। দু’টি বাসের জন্য খরচ পড়েছে ৯০ লক্ষ টাকা।

কলকাতায় প্রথম দোতলা বাস নামে ১৯২৬ সালে। চলে কালীঘাট থেকে শ্যামবাজার। খুব দ্রুত তা জনপ্রিয়তা পায়। ধীরে ধীরে দোতলা শহরের পরিবহণের গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে ওঠে। জড়িয়ে যায় কলকাতার ঐতিহ্যের সঙ্গে। হয়ে ওঠে শহরের অন্যতম পরিচয়ও। স্বাধীনতার পরে রাজ্য সরকার জনপরিবহণ পরিষেবা দিতে কলকাতা স্টেট ট্রান্সপোর্ট কর্পোরেশন (সিএসটিসি) তৈরি করে। দোতলা বাসের দায়িত্ব পায় এই সংস্থাই। রয়্যাল বেঙ্গল বাঘের মুখ সম্বলিত সিএসটিসির লোগো দেওয়া লাল রঙের দোতলা বাসে চড়ার উত্তেজনাই ছিল আলাদা। আর দোতলায় বসার জায়গা পেলে তো কথাই নেই!

১৯৮৫-তে সিএসটিসি শেষবার ২৯৫টি দোতলা বাস কিনেছিল। তার পরে আর দোতলা বাস কেনা হয়নি। তবে ১৯৯০ থেকেই বিভিন্ন রুটে দোতলা বাস কমিয়ে দেওয়ার কাজ শুরু হয়। বলা হয় তেলের বিপুল খরচের কথা। ২০০৫-এ সিএসটিসি দোতলা বাস না-চালানোর সিদ্ধান্ত নেয়। শুরু হয়ে যায় স্ক্র্যাপ করে বিক্রি। স্মারক হিসেবে একটি দোতলা বাস এখনও রাখা রয়েছে নিউ টাউনের ইকো পার্কে। তবে বদলে দেওয়া হয়েছে তার রঙ। লাল থেকে হয়েছে নীল-সাদা। মাঝে মধ্যে বাসটিকে নিউ টাউন, সল্টলেক এলাকায় চালানো হয়।

নতুন বাস দু’টি কিনেছিল পশ্চিবঙ্গ পরিবহণ নিগম। গত মার্চে কেন্দ্রের থেকে ছাড়পত্র এনে বাস দু’টি নিগমের হাতে তুলে দেয় বেবকো। তখন ঠিক ছিল পর্যটক টানতে নিউ টাউনে বাস দু’টি চালাবে পরিবহণ নিগমই। লকডাউনে নিগমের ডিপোয় বাসগুলি রাখা ছিল। সম্প্রতি নবান্ন সিদ্ধান্ত নেয়, পরিবহণ নিগম নয়, পর্যটন বিকাশের লক্ষ্যে পশ্চিমবঙ্গ পর্যটন উন্নয়ন কর্পোরেশন এই বাস চালাবে। সেইমতো নিগমকে বলে দেওয়া হয় বাস পর্যটন উন্নয়ন কর্পোরেশনের হাতে তুলে দিতে। রক্ষণাবেক্ষণ তারাই করবে। শুধুমাত্র ড্রাইভার ও কন্ডাক্টার দেবে নিগম। সেই থেকে এক জোড়া দোতলা বাস সল্টলেকে পর্যটন উন্নয়ন নিগমের গ্যারাজে রয়েছে।

পুজোয় রাস্তায় নামলে বাসের ভাড়া কত হবে, কোথায় চালানো হবে, সে বিষয়ে পর্যটন উন্নয়ন কর্পোরেশন এখনও সিদ্ধান্ত নেয়নি। কর্পোরেশন সূত্রে জানাগিয়েছে, ‘মঙ্গলবার মুখ্যমন্ত্রী উদ্বোধন করার পরে ভাড়া এবং কোথা থেকে বুকিং করতে হবে- সব তথ্য জানিয়ে দেওয়া হবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here