দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ করোনা ভাইরাস নিয়ে প্রথম সতর্ক করেছিলেন তিনি। কিন্তু তাঁর কথাকে গুরুত্ব দেয়নি চীনা পুলিশ। সেই চিকিৎসক এবার প্রাণ হারালেন। করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হল চিকিৎসক লি ওয়েনলিয়াংয়ের।

চীনা সরকারি সংবাদমাধ্যম গ্লোবাল টাইমসের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ৩৪ বছরের লি ওয়েনলিয়াং প্রথম করোনা ভাইরাসের ব্যাপারে সতর্ক করেছিলেন। ইউহানের সরকারি হাসপাতালে বৃহস্পতিবার তাঁর মৃত্যু হয়েছে। গত ডিসেম্বরে স্থানীয় সাতজন রোগী সার্সের মতো ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন।

লি তখনই আশঙ্কা করেছিলেন, করোনা ভাইরাস মহামারীর আকার নিতে পারে। সে কথা বাকি চিকিৎসকদেরও বলেছিলেন তিনি। এটা ঘটনা ২০০২–০৩ সালে সার্স ভাইরাসের সংক্রমণে চিনে প্রচুর মানুষের মৃত্যু হয়েছিল। কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ভাইরাল হয় লিয়ের মেসেজ। তাঁর বিরুদ্ধে ওঠে গুজব ছড়ানোর অভিযোগ। লিয়ের কথায় বিশ্বাস করেনি পুলিশ। অবশেষে লিয়ের আশঙ্কাই সত্যি প্রমাণিত হল।

চীনে এখনও পর্যন্ত করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ৬৩৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। আক্রান্ত হয়েছেন ৩১ হাজারের বেশি মানুষ। মৃত্যু সংখ্যা প্রতিদিন বাড়ছে। মৃতদের তালিকায় থেকে গেলেন করোনা ভাইরাস শনাক্তকারী প্রথম চিকিৎসকও।

উহান সেন্ট্রাল হাসপাতালের তরফে বলা হয়েছে, শুক্রবার স্থানীয় সময় রাত পৌণে তিনটে নাগাদ হাসপাতালের আইসোলেশন ইউনিটে মৃত্যু হয় লি ওয়েনলিয়াঙের। নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়েছিলেন তিনি। ধীরে ধীরে শরীরে নানা অঙ্গ বিকল হতে শুরু করে। ডাক্তাররা জানান, সিভিয়ার অ্যাকিউট রেসপিরেটারি সিন্ড্রোমে আক্রান্ত হন লি। শরীরে খোঁজ মেলে করোনাভাইরাসের।

সংক্রমণ এতটাই গভীরভাবে ছড়িয়ে পড়েছিল যে বাঁচানো যায়নি লি-কে। হাসপাতালে তরফ থেকে বিবৃতি দিয়ে বলা হয়, লি-র মৃত্যুতে শোকস্তব্ধ গোটা উহান।

অপথ্যালমোলজিস্ট লি ওয়েনলিয়াঙ প্রথম বলেছিলেন মারণ ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ছে দেশে। সংক্রমণ সবচেয়ে বেশি ছড়াবে উহানে। সেটা ছিল ৩০ ডিসেম্বর। পরদিন অর্থাৎ ৩১ ডিসেম্বরই উহানের সি-ফুড মার্কেট থেকে ভাইরাসের সংক্রমণের কথা প্রথম সামনে আসে। আক্রান্ত হন এক ব্যক্তি। তারপরেই মহামারীর মতো ছড়িয়ে পড়তে থাকে ভাইরাসের সংক্রমণ।

বেজিং সরকারের তথ্য অনুযায়ী, ভাইরাসজনিত রোগে মৃত্যু হয়েছে ৫৬০ জনের। অথচ তাইওয়ানের একটি সংস্থার রিপোর্ট বলছে, সত্যিটা চেপে দিচ্ছে কমিউনিস্ট পার্টি। মৃতের সংখ্যা ২৫ হাজারের কাছাকাছি। সংক্রমিত অন্তত দেড় লাখ। হুবেইয়ের রাজধানী উহান থেকে এই ভাইরাস প্রথম ছড়াতে শুরু করে। এখন চিনের সব প্রান্ত তো বটেই, এই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ছে বিশ্বজুড়ে।

বিশ্বের অন্তত ২৪টি দেশে ভাইরাসের সংক্রমণের খবর মিলেছে। করোনাভাইরাসের আতঙ্কে হংকংয়ে কাজ বন্ধ করে দিয়েছেন চিকিৎসাকর্মীদের একাংশ। তাঁরা দাবি করেছেন, চিনের সঙ্গে এই শহরের সীমান্ত বন্ধ করে দেওয়া হোক। এই দাবি মানা না হলে আরও বহু চিকিৎসাকর্মী এই ধর্মঘটে যোগ দেবেন বলে হুমকি দিয়ে রেখেছেন। হংকংয়ে এখনও পর্যন্ত পনেরো জন করোনাভাইরাস আক্রান্তের সন্ধান পাওয়া গেছে।

নোভেল করোনাভাইরাস উৎস নিয়ে ইতিমধ্যেই আন্তর্জাতিক মহলে নানা তর্ক-বিতর্ক চলছে। ইজরায়েলি মাইক্রোবায়োলজিস্টরা আগেই জানিয়েছিলেন ডিসেম্বরে নয় বরং ভাইরাসের সংক্রমণ ছড়িয়েছিল তারও অনেক আগে থেকে। সেই সংক্রমণের কথা চেপে গিয়েছিল কমিউনিস্ট পার্টি। এমন খবরও সামনে আসে যে এই ভাইরাসের জন্মদাতা উহানের জৈব রাসায়নিক মারণাস্ত্র তৈরির কারখানা বায়ো-সেফটি লেভেল ৪ (BSL-4) ল্যাবোরেটরি। ইজরায়েলি এক সেনা কর্তা দাবি করেছিলেন, গবেষণাগার থেকেই ছড়িয়েছে ভাইরাসের সংক্রমণ।

ঠিক যেভাবে একটা সময় সার্স এবং ইবোলা প্রাণঘাতী হয়ে উঠলে আঙুল উঠেছিল এই ল্যাবোরেটরির দিকেই। ওয়াশিংটন পোস্ট তাদের রিপোর্টে সামনে এনেছিল চাঞ্চল্যকর তথ্য। তাদের দাবি, সিঙ্গল-স্ট্র্যান্ডেড এই আরএনএ ভাইরাসকে তৈরি করা হয়েছে মারণাস্ত্র হিসেবেই। প্রাণঘাতী এই ভাইরাসের ছোবলে শত শত প্রাণনাশ করা সম্ভব।
উহান ইনস্টিটিউট অব ভাইরোলজির বিএসএল-৪ ল্যাবোরটরিতে অতি গোপনে এই জৈব রাসায়নিক মারণাস্ত্র তৈরির কাজ চলছিল দীর্ঘ সময় ধরেই। হয় সেখান থেকেই ভাইরাস কোনওভাবে বাইরে চলে গেছে, অথবা ইচ্ছাকৃতভাবেই সংক্রমণ ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here