দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ ভোটের পর তৃণমূলের প্রথম কর্মসমিতির বৈঠকেই স্পষ্ট ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছিল যে দলের সংগঠনে এ বার রদবদল আসন্ন। সেই বদলের একটি ভিত্তি তথা সূত্রও জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল বৈঠকে। তা হল— এ বার বাংলার শাসক দলে ‘এক ব্যক্তি এক পদ’ সূত্র বাস্তবায়িত হবে।

তৃণমূল শীর্ষ সূত্রে খবর, সেই বদলের খসড়া প্রায় চূড়ান্ত করে ফেলেছেন দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। আগামী দু’সপ্তাহের মধ্যে তা ঘোষণা হয়ে যেতে পারে। একুশে জুলাই তৃণমূলের শহিদ সমাবেশের আগে বা তার অব্যবহিত পর সেই ঘোষণা হয়ে যাবে বলে জানা গিয়েছে ।

এখন জানার বিষয় হল,কী হতে পারে সম্ভাব্য সেই রদবদলে? দলের এক শীর্ষ নেতার কথায়, এক ব্যক্তি এক পদ সূত্র বাস্তবায়িত হলে, সেই শর্তে , উত্তর চব্বিশ পরগনা, হাওড়া, বর্ধমান সহ পাঁচ জেলার সভাপতি বদল করা হবে।

সেক্ষেত্রে উত্তর ২৪ পরগনার জেলা সভাপতি পদ থেকে বনমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের অপসারণ এক প্রকার অনিবার্য। একই ভাবে হাওড়া গ্রামীণের জেলা সভাপতি পুলক রায়, বর্ধমানের জেলা সভাপতি স্বপন দেবনাথকে সংগঠনের দায়িত্ব থেকে সরানোর সম্ভাবনা প্রবল। সাংগঠনিক দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হতে পারে মন্ত্রী অরূপ রায়কেও।

তবে শুধু এই সূত্রের উপর ভর করে বদল হবে এমন নয়। বরং তৃণমূলের শীর্ষ সূত্রের মতে, অন্তত ১০ থেকে ১২টি জেলায় জেলা সভাপতি বদল করা হতে পারে। সেই সংখ্যাটা বাড়লেও আশ্চর্যের কারণ নেই। ইতিমধ্যে কয়েকটি জেলা ভাগ করে সেখানে দু’জন করে সভাপতি নিয়োগ করা হয়েছে।

যেমন হাওড়ায় দু’জন জেলা সভাপতি রয়েছেন। হাওড়া সদর ও গ্রামীণ। একই ভাবে বাঁকুড়ায় দুটো লোকসভা এলাকা এবং নদিয়ায় দুটো লোকসভা এলাকার জন্য দু’জন করে সভাপতি রয়েছেন। এ ভাবে আরও জেলা ভাগ করা হতে পারে বলেই জানা গিয়েছে তৃণমূল সূত্রে।

তবে বড় কৌতূহলের বিষয় হল, ফিরহাদ হাকিম, পার্থ চট্টোপাধ্যায়, অরূপ বিশ্বাসের মতো দক্ষিণ কলকাতার নেতা তথা মন্ত্রীরাও কি একটি পদেই থাকবেন? এঁরা তিন জনই মন্ত্রিসভায় রয়েছেন। আবার সংগঠনের দায়িত্বেও রয়েছেন।

পার্থ চট্টোপাধ্যায় দলের মহাসচিব। ববি ও অরূপ হলেন দলের সাধারণ সম্পাদক। শাসক দলের এক নেতার কথায়, পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের মহা সচিব পদটি হয়তো আপাতত থেকে যেতে পারে। এমনিতেই এই পদের বিশেষ কার্যকরী ভূমিকা এখন নেই। অনেকটাই অলঙ্কারিক পদে পরিণত হয়েছে।

কিন্তু ববি-অরূপদের সাধারণ সম্পাদক পদ থাকবে কিনা তা নিয়ে ধোঁয়াশা রয়েছে।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আস্থাভাজন তৃণমূলের এক নেতার কথায়, আসন্ন রদবদলে মোদ্দা বিষয় হয়ে উঠতে পারে ‘প্রবীণতন্ত্রের ইতি’।

দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক পথে স্বাভাবিক উত্থান ঘটেছে অভিষেকের। এই উত্থান তাঁর চেষ্টা ও পরিশ্রম দিয়ে অর্জন করে নিয়েছেন অভিষেক। এ বার সে ভাবেই জেলায় জেলায় সংগঠনে আরও নবীন ও তরুণ নেতারা দায়িত্ব পেতে পারেন। প্রবীণরা ক্রমশই মার্গ দর্শক তথা পথ প্রদর্শকের ভূমিকায় চলে যাবেন।

লোকসভা ভোটের আগে গত বছর শহিদ সমাবেশের দুদিন পর তৃণমূলের সংগঠনে কিছু বদল ঘটিয়েছিলেন মমতা। সেই বদল ছিল মাইলফলক। কারণ, দলে জেলা পর্যবেক্ষক পদ তুলে দেওয়া হয়েছিল। সেই পদক্ষেপের সুস্পষ্ট কারণ ছিল। কেন না শুভেন্দু অধিকারী তখন অন্তত পাঁচটি জেলার প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভাবে পর্যবেক্ষক ছিলেন। দলের নেতৃত্ব আন্দাজ করছিলেন, শুভেন্দু ভোটের আগে পার্টি ছাড়বেন। তাই শুভেন্দুর ক্ষমতা খর্ব করতে সেই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল।

তার পর শুভেন্দু দল ছেড়েছেন। তা ছাড়া আরও অনেকেই বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন। এ বার পর্যবেক্ষক পদ পুনরায় ফেরানো হয় কিনা তাও দেখার। তৃণমূলের ওই নেতার কথায়, এই বদল জরুরি বলেই মনে করেন মমতা ও অভিষেক। কারণ, তৃণমূল আগের তুলনায় অনেক বড় হয়েছে। এত বড় দলের ব্যবস্থাপনায় সুষ্ঠু বিকেন্দ্রীকরণ প্রয়োজন।

এক ব্যক্তির হাতে একাধিক পদ রেখে দেওয়া বাঞ্ছনীয় নয়। কারণ, তাতে দলের মধ্যে যেমন অসন্তোষ তৈরি হচ্ছে তেমন কাজটাও ঠিক মতো হচ্ছে না। সেই কারণে দলে কাঠামোগত পরিবর্তন করা হচ্ছে বলে ধারণা৷

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here