দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ কোভিড মোকাবিলায় রাজ্যবাসীর কাছে যে সহযোগিতা প্রত্যাশা করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, তাতে হয়তো কোথাও খামতি থেকে গেছে। অভাব-অভিযোগে জেরবার হয়ে এমনই মনের ভাব প্রকাশ করে বসলেন তিনি। বৃহস্পতিবার বিকেলে নবান্নের সভাঘরে সাংবাদিক বৈঠক চলার সময়ে তাঁর ক্ষোভ ও হতাশা কার্যত উগরে দিলেন তিনি। ধরা পড়ল খানিক অসহায়তাও।
মুখ্যমন্ত্রী এদিন জানান, রাজ্যে সংক্রমণ বাড়ছে। তাই বেডের চাহিদাও বাড়ছে। ১৪ দিনের আগে কোনও রোগী পুরোপুরি সুস্থ হয়ে গেলে হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেওয়া হোক বলেও মতামত দেন তিনি। সেই সঙ্গে জানান. নতুন করে প্রায় চার হাজার বেডের সংস্থান করা হচ্ছে রাজ্যে।
এর পরেই মুখ্যমন্ত্রী সেফ হোমের প্রসঙ্গ তোলেন। কোভিডের মৃদু উপসর্গ নিয়ে যাঁদের হাসপাতালে ভর্তি না হলেও চলে, অথচ বাড়িতে আইসোলেটেড থাকার জায়গা নেই, তাঁদের জন্য এই সেফ হাউসের কথা বলেছিল সরকার। তা নিয়েও সম্প্রতি ক্ষোভ জন্ম নিয়েছে নানা জায়গায়।
মুখ্যমন্ত্রী এ বিষয়ে বলেন, “সেফ হোমে কি বাড়ির মতো পরিষেবা দেওয়া সম্ভব? যাঁরা পরিষেবা দিচ্ছেন তাঁরাও তো মানুষ। একটু দেরি হলে রাস্তায় বসে আন্দোলন করতে হবে? আন্দোলন আমাকে শেখাবেন না, আমি আন্দোলন করেই এখানে এসেছি। একমাত্র আমাদের সরকার বিয়েতে টাকা, স্কলারশিপে টাকা থেকে শুরু করে সমস্ত বিষয়ে সাহায্য করে এসেছে। সেন্ট্রাল গভর্নমেন্ট কিছু দেয়নি কিন্তু এই ক্রাইসিসের মধ্যেও আমরা মাইনে কাটিনি।”
তিনি আরও ক্ষোভ উগরে দিয়ে বলেন, “আপনারা সেফ হোমে পরিষেবা দিতে দেরি হলে আন্দোলন করছেন। কিন্তু কেন দেরি হল কারণটা খুঁজে দেখেছেন? সরকার তো ভগবান বা ম্যাজিশিয়ান নয়। সব দোষ সরকারের অথচ এই সরকারই সবচেয়ে বেশি কাজ করে। আমরা করোনার বিরুদ্ধে লড়ছি। আপনারা রাজনৈতিক যুদ্ধ কাদের বিরুদ্ধে করছেন? একটু কিছু হলেই কিছু রাজনৈতিক দল হৈ হৈ রব তুলছে।”
মুখ্যমন্ত্রীর আক্ষেপ, “যাঁরা বড় বড় কথা বলছেন, তাঁরা কী দিয়েছেন আমাদের? আমরা ভেবেছিলাম ১০ হাজার ভেন্টিলেটর পাব কেন্দ্র থেকে। বিনামূল্যে পিপিই আর মাস্ক পাব। কেন্দ্র সরকার কিচ্ছু দেয়নি? বাংলাকে খালি হাতে লড়াই করতে হচ্ছে। রাজ্য সরকারেরও তো একটা সীমাবদ্ধতা আছে।”
এত মানুষের অভাব, অভিযোগ, আন্দোলন নিয়ে খানিক রেগেও যান আজ মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, “হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে রাস্তায় বসে পড়ছেন। তাহলে তো তার হাসপাতালে আসার দরকার নেই, বাড়িতেই থাকুন। কেউ যদি হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে বাইরে বসে পড়ে, কে দায়িত্ব নেবে? এটা তাহলে আইন দিয়ে দেখতে হবে। অসুবিধা থাকলে খাতায় কমপ্লেন করুন।”
রোগীর সৎকারে বাধা দেওয়া হচ্ছে জায়গায় জায়গায়, কোয়ারেন্টাইন সেন্টার তৈরিতে বাধা দেওয়া হচ্ছে, সরকার তাহলে কোথায় ব্যবস্থা করবে। অনেক বেসরকারি হাসপাতাল পর্যন্ত সরকারি হাসপাতালে পাঠিয়ে দিচ্ছে রোগীদের, যাতে তাদের হাসপাতালে করোনা সংক্রমণ ও মৃত্যুর সংখ্যা কম হয়। সরকার কী করবে– ক্ষোভের সঙ্গে পরিস্থিতির অসহায়তা জানান মুখ্যমন্ত্রী।
সেই সঙ্গে উল্লেখ করেন, করোনার মধ্যেই আমফান দুর্যোগ সরকার একা হাতে সামলেছে। কেউ কেউ সে সময়ে শুধু ভাষণ দিতে ব্যস্ত ছিল বলে অভিযোগ তাঁর। তার পরেও যথেষ্ট দক্ষতা ও সাফল্যের সঙ্গে কাজ করা হচ্ছে বলেই দাবি করেন মুখ্যমন্ত্রী। তার পরেও এত অভিযোগ সরকারের বিরুদ্ধে, তা ঠিক নয় বলে মত তাঁর।