দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ আমেরিকা ও ভারতের সঙ্গে বেজিং বিরোধী কৌশলগত আঁতাতের পথে হাঁটলে পরিণাম খারাপ হবে বলে বাংলাদেশকে খোলাখুলি হুঁশিয়ারি দিল চিন। ঢাকা স্থিত চিনা রাষ্ট্রদূত লি জিমিং এক বিবৃতিতে এ ব্যাপারে সতর্ক করে বলেছে, এতে ঢাকা-বিজেপি দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে ভালমতো ক্ষতি হতে পারে।
বাংলাদেশে বসে চিনা রাষ্ট্রদূত যে ভাবে এই হুঁশিয়ারি দিয়েছে তাতে আন্দোলিত হয়ে উঠেছে ঢাকা। ঘরোয়া রাজনীতিতে বেশ চাপে পড়েছেন শেখ হাসিনা। ফলে মঙ্গলবার নরমে-গরমে জবাবেও দিয়েছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশের বিদেশ মন্ত্রী এদিন এ কে আবদুল মোমেন এদিন বলেছেন, “আমরা একটা স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র। আমাদের বিদেশ নীতি আমরা নিজেরাই নির্ধারণ করতে সক্ষম। দেশের মঙ্গলের জন্য আমরা কী কাজ করব না করব, আমাদের মৌলিক অবস্থানের ভিত্তিতে আমরা সে ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেব।’
ভারত-প্রশান্ত মহাসগরীয় অঞ্চলে চিনের প্রভাবকে খর্ব করতে আমেরিকা, ভারত, জাপান ও অস্ট্রেলিয়া একটি কৌশলগত জোট গঠন করেছে। তার নামই হল কোয়াড। ২০০৭ সাল থেকে এই কৌশলগত জোট তৈরি হয়েছে। আসলে ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে বেজিংয়ের আগ্রাসী আধিপত্য বিস্তা
রনীতিই এই দেশগুলিকে উদ্বেগে ফেলেছে।
এ ব্যাপারে সোমবার বাংলাদেশে চিনের রাষ্ট্রদূত লি জিমিং বলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন এ জোটকে চিন বিরোধী একটি ছোট গোষ্ঠী হিসেবে বিবেচনা করে বেজিং। চিন মনে করে, এতে কোনওভাবে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ ঢাকা-বেজিং সম্পর্ককে ‘যথেষ্ট খারাপ’ করবে।
জবাবে বাংলাদেশের বিদেশ মন্ত্রী আবদুল মোমেন মঙ্গলবার বলেছেন, “চীনের রাষ্ট্রদূত তার দেশের অবস্থানের কথা বলেছেন। যে প্রতিষ্ঠানের কথা উনি বলছেন, সেই প্রতিষ্ঠানের (কোয়াড) কেউই এখনও আমাদের অ্যাপ্রোচ করেনি। এটি একটু আগ বাড়িয়ে বলাবলি হয়েছে। তবে এটা নিয়ে বিশেষ বক্তব্য নেই।’
বাংলাদেশের বিদেশ মন্ত্রীর কথায়, “এমনিতে চীন কখনও অন্যের বিষয়ে নাক গলায় না। আর এ রকম উগ্র কথা কখনও কাউকে বলতে শুনিনি। এটা খুবই দুঃখজনক। আমরা কী করব, না করব সেটা আরেকজন বড় করে বলছেন। দেশের মঙ্গলের জন্য যেটা প্রয়োজন, সেটাই আমরা করব।’ তিনি বলেন, ‘চীনের কাছ থেকে আমরা এ ব্যবহার আশা করিনি।’
চিনের রাষ্ট্রদূতকে এ বক্তব্যের জন্য কোনো বার্তা দেওয়া হবে কি না, জানতে চাইলে মোমেন বলেছেন, “আমরা কী করি না করি, সেটা সব সময় মিডিয়াকে বলি না। উই হ্যাভ ডিফারেন্ট ওয়ে অব ডুয়িং থিঙ্কস। আমরা জানি, আমরা কী করব। সবকিছু বলে দিলে তো মুশকিল”।
মোমেনের এই প্রতিক্রিয়াতেই পরিষ্কার যে মাপা জবাব দিতে চেয়েছে ঢাকা। কারণ, বাণিজ্য সহ বহু বিষয়ে বেজিংয়ের উপর ঢাকার নির্ভরশীলতা রয়েছে। ফলে সেই বিষয়টাও মাথায় রাখছে হাসিনা প্রশাসন।
তবে সাবেক বিদেশ মন্ত্রী শহীদুল হক সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন, “বাংলাদেশ সব সময় শান্তিপূর্ণ, গঠনমূলক, ভারসাম্যমূলক ও উন্নয়নমুখী বিদেশনীতি অনুসরণ করে চলেছে। যার মূল ভিত্তি বঙ্গবন্ধুর মূলমন্ত্র—‘সকলের সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে বৈরিতা নয়।’ দেশের উন্নয়নের স্বার্থে বাংলাদেশ যে কোনও উন্নয়নমূলক উদ্যোগের সঙ্গে রয়েছে, কোনও প্রতিরক্ষা কিংবা সামরিক জোটে যোগ দেয়নি। বাংলাদেশ যখন এ অবস্থা বজায় রেখে চলেছে, সেই প্রেক্ষাপটে চীনের রাষ্ট্রদূত যে মন্তব্য করেছেন, তা মোটেই যথাযথ নয়”।