দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ মাত্র একবছর আগের অভিজ্ঞতা এখনও টাটকা। তাই প্রতি মুহূর্তেই সুপার সাইক্লোনআমফানের সঙ্গে তুলনা টানা হচ্ছে বঙ্গোপসাগরে জন্ম নেওয়া অতি তীব্র ঘূর্ণিঝড় ইয়াসে ৷কিন্তু সত্যিই কি ইয়াস আমফানের মতোই ক্ষমতাসম্পন্ন?

‘ওদের মধ্যে কোনও তুলনাই চলে না’, এককথায় ইয়াসের আমফান হয়ে ওঠার সম্ভাবনা উড়িয়ে দিলেন আলিপুর আবহাওয়া দফতরের উপমহানির্দেশক সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায়। জানিয়েছেন, ‘আমফান ছিল সুপার সাইক্লোন। কিন্তু ইয়াস অতি তীব্র ঘূর্ণিঝড়।’

শক্তি বাড়িয়ে বাংলার দিকে ধেয়ে আসছে ঘূর্ণিঝড় ইয়াস৷ পূর্ব মধ্য বঙ্গোপসাগর ও উত্তর আন্দামান সাগরে ঘনীভূত গভীর নিম্নচাপ আজ ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হল। আগামী ২৪ ঘণ্টায় শক্তি বাড়িতে অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হবে ইয়াস। এরপর উত্তর উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হয়ে বুধবার সকালে উত্তর ওড়িশা ও পশ্চিমবঙ্গ উপকূলে পৌঁছবে অতি শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড়। ওই দিন সন্ধ্যায় পারাদ্বীপ ও সাগরদ্বীপের মাঝে আছড়ে পড়তে পারে ইয়াস।

কতটা শক্তিশালী হবে ইয়াস?

আলিপুর আবহাওয়া দফতর সূত্রে জানা যাচ্ছে, বুধবার ঘণ্টায় ১৫৫-১৬৫ কিমি বেগে আছড়ে পড়তে পারে ঘূর্ণিঝড় ইয়াস। সর্বোচ্চ বেগ হতে পারে ঘণ্টায় ১৮৫ কিমি। মঙ্গলবার ইয়াসের গতিবেগ থাকতে পারে ঘণ্টায় ১০০-১১০ কিমি। সর্বোচ্চ বেগ হতে পারে ঘণ্টায় ১২০ কিমি। ওই দিন অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হওয়ার পর ইয়াসের গতিবেগ থাকতে পারে ঘণ্টায় ১৩৫-১৪৫ কিমি। সর্বোচ্চ বেগ হতে পারে ১৬০ কিমি। আবহবিদদের মতে, গত বছরের ঘূর্ণিঝড় আমফানের থেকে দাপট কম হবে ইয়াসের।

পুনের ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ ট্রপিক্যাল মেটিরিওলজি-র সাইক্লোন বিশেষজ্ঞ এবং নিউমেরিক্যাল ওয়েদার প্রেডিকশন সিস্টেমের অন্যতম মডেলার পার্থ মুখোপাধ্যায় বলছেন, ‘সুপার সাইক্লোনে হাওয়ার গতি অনেক বেশি থাকবে। স্বাভাবিক ভাবেই তার ধ্বংসক্ষমতাও প্রবল। কাজেই আমফান সেই দিক থেকে ইয়াসের চেয়ে অনেক এগিয়ে।’

ঘূর্ণিঝড় বিশেষজ্ঞ বলছেন, ‘মনে রাখতে হবে ইয়াস ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হওয়ার পর সমুদ্রের উপর দিয়ে মাত্র ৬৫০ কিলোমিটারের কাছাকাছি এগিয়েই মাটি পাবে। আমফান কিন্তু প্রায় দেড় হাজার কিলোমিটার এগিয়েছিল। ইয়াস আরও ৫০০ কিলোমিটার বেশি দূরে তৈরি হলে সুপার সাইক্লোন হতে পারত।’

আমফান সুপার সাইক্লোন, ইয়াস অতি তীব্র ঘূর্ণিঝড়:

আমফানে ঝড়ের সর্বোচ্চ গতি হয়েছিল ঘণ্টায় ২৬০ কিলোমিটার। ইয়াসে ঝড়ের গতি ঘণ্টায় ১৫৫-১৬৫ কিলোমিটারের মধ্যে থাকবে

আমফান তৈরি হয়েছিল কলম্বো থেকে প্রায় ৩০০ কিলোমিটার পূর্বে, ইয়াস তৈরি হয়েছে মধ্য-পূর্ব বঙ্গোপসাগরে

ল্যান্ডফলের আগে আমফান প্রায় দেড় হাজার কিলোমিটার সমুদ্রের উপর দিয়ে এগিয়েছিল। ল্যান্ডফলের আগে ইয়াস সমুদ্রের উপর দিয়ে ৬৫০-৭০০ কিলোমিটার এগোবে।

আমফানের গতিপথ ছিল উৎস থেকে উত্তর-উত্তরপূর্বে, ইয়াসের গতিপথ উৎস থেকে উত্তর-উত্তরপশ্চিম

আমফান ভারতের ভূখণ্ড পার করে বাংলাদেশের দিকে এগিয়েছিল, ইয়াস ল্যান্ডফলের পর ঝাড়খণ্ড পেরিয়ে মধ্যভারতের দিতে এগোবে বলে প্রাথমিক ভাবে মনে করা হচ্ছে।

ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের জেরে রাজ্যজুড়ে বৃষ্টি চলবে। আজ কোথাও কোথাও বৃষ্টি হতে পারে। মঙ্গলবার দুই মেদিনীপুর, দুই ২৪ পরগনা, হাওড়া, হুগলিতে ভারী বৃষ্টি হতে পারে। পরের দিন, অর্থাৎ বুধবার ঝাড়গ্রাম, দুই মেদিনীপুর, দুই ২৪ পরগনা, হাওড়া, হুগলি, কলকাতায় অতি ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস জারি করা হয়েছে। ভারী থেকে অতিভারী বৃষ্টি হতে পারে নদিয়া, দুই বর্ধমান, বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, বীরভূম, মুর্শিদাবাদ, মালদা, দক্ষিণ দিনাজপুর জেলায়। বৃহস্পতিবার ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টি হতে পারে মালদা, দার্জিলিং, দুই দিনাজপুর, কালিম্পং, জলপাইগুড়ি জেলায়।

ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে উত্তাল হবে সমুদ্র। মৎস্যজীবীদের সমুদ্রে যেতে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।

ঘূর্ণিঝড়ের নাম কে রাখল? নামের মানে কী?

জানা যাচ্ছে, এই ঘূর্ণিঝড়ের নাম রেখেছে ওমান। এই ঝড়ের নাম ইয়াস। যার মানে হল দু:খ। পারসি ভাষা থেকে এই শব্দটি এসেছে। ভারত, বাংলাদেশ, মায়ানমার, ওমান, পাকিস্তান, কাতার, সৌদি আরব, শ্রীলঙ্কা-সহ ১৩টি দেশ নিয়ে গঠিত কমিটি এই নাম ঠিক করেছে। আন্তর্জাতিক নিয়ম অনুযায়ী, যে মহাসাগরে ঘূর্ণিঝড় তৈরি হয়, তার অববাহিকায় থাকা দেশগুলি নামকরণ করে। পৃথিবীতে মোট ১১টি সংস্থা ঝড়ের নাম ঠিক করে। ওয়ার্ল্ড মেটেরোলজিক্যাল অর্গানাইজেশন ও ইউনাইটেড নেশনস ইকোনমিত অ্যান্ড সোশ্যাল কমিশন ফর এশিয়ার সদস্য দেশগুলি ঘূর্ণিঝড়ের নামকরণ শুরু করে। যশের পর আরও যে ঘূর্ণিঝড়ের নাম ঠিক করা হয়েছে, সেগুলি হল গুলাব, সাহিন, জাওয়াদ, অশনি, সীতরাং, মানদৌস, মোচা।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here