দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ ঘরে বসেই সোশ্যাল মিডিয়া বা ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম থেকে অনেকেই খুঁজে নিয়েছেন নিজেদের রোজগারের রাস্তা। এই সময়ের অন্যতম জনপ্রিয় ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম হল ইউটিউব, আর তাকেই কাজে লাগিয়ে ঘরে বসে রোজগারের নতুন ঠিকানা খুঁজে পেয়েছেন অনেকেই।
তবে যেটা শুনলে আপনি আশ্চর্য হয়ে যাবেন, তা হল ইউটিউব থেকে এ বছরে সবথেকে বেশি টাকা রোজগার করেছে মাত্র নয় বছরের একটি শিশু। ফোর্বস ম্যাগাজিনে এই বছরের হায়েস্ট পেইড ইউটিউবার হিসেবে নিজের জায়গা করে নিয়েছে রায়ান কাজি। এই নিয়ে পর পর তিন বছর ধরে কাজি ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম থেকে রোজগারের তালিকার শীর্ষস্থানে রয়েছে। ‘রায়ান’স ওয়ার্ল্ড’ নামে একটি চ্যানেল রয়েছে টেক্সাসের এই ছোট্ট ইউটিউবারের, যেখান থেকে সে চলতি বছর আয় করেছে ২৯.৫ মিলিয়ন ডলার।
বয়স মাত্র ৯। এই বয়সেই টানা ৩ বছর সর্বোচ্চ উপার্জনকারী ইউটিউবার হল রায়ান কাজি। এক বছরে ইউটিউবার হিসেবে তার উপার্জন প্রায় ৩ কোটি ডলার। ভারতীয় মুদ্রায় যা প্রায় ২২১ কোটি টাকা!
এই দাবি ‘ফোর্বস’-এর। এই বাণিজ্যপত্রিকার তালিকা অনুযায়ী জুন, ২০১৯ থেকে জুন, ২০২০ অবধি সর্বোচ্চ উপার্জনকারী ইউটিউবারদের মধ্যে প্রথম স্থানে আছে রায়ান।
টেক্সাসের বাসিন্দা রায়ানের ইউটিউব চ্যানেলের নাম ‘রায়ানস ওয়ার্ল্ড’। সেখানে তার কাজ হল বাক্স থেকে খেলনা বার করে সেগুলির রিভিউ করা। নেটাগরিকদের কাছে তুমুল জনপ্রিয় তার চ্যানেল।
পাশাপাশি, ‘রায়ানস ওয়ার্ল্ড’ নামে তার নিজস্ব ওয়েবসাইট আছে। নিকোলোডিয়ন চ্যানেলে চলে নিজস্ব টিভি সিরিজ।
নেটদুনিয়ায় তাকে বলা হয় ‘চাইল্ড ইনফ্লুয়েন্সার’। অর্থাৎ যে শিশু বাকিদের উপর প্রভাব বিস্তার করতে জুড়িহীন।২০১৫ সালের মার্চ থেকে রায়ান প্রথমে ইউটিউব ভিডিয়ো করতে শুরু করে৷
তার আগে সে অন্য টয় রিভিউয়ার বা খেলনা সমালোচকদের ভিডিয়ো দেখত। তাদের মতো সেও টয় রিভিউয়ার হতে চায়— আবদার করত মায়ের কাছে৷
এই ইচ্ছেপূরণে ছেলের পাশে দাঁড়িয়েছিল তার পরিবার। তাদের পারিবারিক পদবি ছিল ‘গুয়ান’। সেখান থেকে তাঁরা সকলে ‘কাজি’ হয়ে যান।
রায়ান এবং তার পরিবার সম্মিলিত ভাবে মোট ৯টি ইউটিউব ভিডিয়ো চ্যানেল পরিচালনা করে। সেগুলির মধ্যে ‘রায়ানস ওয়ার্ল্ড’-ই সবথেকে জনপ্রিয়। গ্রাহক সংখ্যা ৪ কোটি ১৭ লক্ষ।
রায়ানের সবথেকে জনপ্রিয় ভিডিয়ো ‘হিউজ এগস সারপ্রাইজ টয়েজ চ্যালেঞ্জ’ ইতিমধ্যেই ২০০ কোটি ভিউজ ছাড়িয়ে গিয়েছে। বিশ্ব জুড়ে ইউটিউবে সবথেকে বেশি দেখা হয়েছে এ রকম ৬০টি ভিডিয়োর মধ্যে এটিও একটি।
তবে ইউটিউবার রায়ানের চ্যানেলের বিরুদ্ধে ইতিমধ্যেই অনেক অভিযোগ উঠেছে৷
আমেরিকার ফেডেরাল ট্রেড কমিশনের অভিযোগ, রায়ানের ভিডিয়োয় স্পনসরদের সম্পর্কে স্পষ্ট করে সব কথা প্রকাশ করা হয় না।
তা ছাড়া, রায়ানের চ্যানেলের মূল দর্শক হল প্রি স্কুল বাচ্চারা। তারা বিজ্ঞাপন এবং রিভিউ-এর মধ্যে পার্থক্য বোঝে না। ফলে তাদের শিশুমনের উপর ভিডিয়োগুলির প্রভাব সবসময় ভাল হয় না বলেই অভিযোগ।
রায়ানের নিজের ভালমন্দ নিয়েও যথেষ্ট উদ্বিগ্ন সংশ্লিষ্ট মহল। এর আগে তার কাছে বিভিন্ন ব্র্যান্ড আসত। তাদের তৈরি খেলনা রিভিউ করে দেওয়ার আর্জি নিয়ে। কিন্তু এখন রায়ান নিজেই একটি ব্র্যান্ড।
বিভিন্ন অনলাইন সংস্থায় রায়ানের নাম ও ছবি ব্যবহার করা হয় বিজ্ঞাপন ও প্রচারের স্বার্থে। নিত্যনতুন খেলনা নিয়ে খেলার মধ্যে শিশুরাও যে ভোগবাদের শিকার হচ্ছে, সে বিষয়েও উদ্বিগ্ন সমাজবিজ্ঞানীরা।
ফোর্বস-তালিকার দ্বিতীয় স্থানে আছে জিমি ডোনাল্ডসন। নেট-দুনিয়ায় তাঁর পরিচয় ‘মিস্টার বিস্ট’ বলে। ২২ বছর বয়সি এই ইউটিউবার নানা রকমের স্টান্ট দেখান। তৃতীয় স্থানে জায়গা পেয়েছে পাঁচ বন্ধুর দল ‘ড্যুড পারফেক্ট’। ‘মিস্টার বিস্ট’ এবং ‘ড্যুড পারফেক্ট’-এর ১ বছরের উপার্জন যথাক্রমে ২ কোটি ৪০ লক্ষ ও ২ কোটি ৩০ লক্ষ ডলার।
তাঁদের সকলকে টেক্কা দিয়েছে ৯ বছরের রায়ান। আন্তর্জালে খেলাঘর সাজিয়ে একরত্তি বয়সেই সে কোটিপতি।