দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ রাজ্য সরকারকে আগাম না জানিয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক যে ভাবে হটস্পট জেলাগুলি পরিদর্শনের জন্য প্রতিনিধি দল পাঠিয়েছে তা যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর শর্ত লঙ্ঘন করেছে বলে সোমবারই অভিযোগ করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। টুইট করে শুরুতেই তিনি জানিয়ে দিয়েছিলেন, ওই প্রতিনিধি দলকে বাংলায় কাজ করতে দেওয়া হবে না।
কথা মতোই কাজ। কেন্দ্রের আন্তঃমন্ত্রক প্রতিনিধি দলকে জেলা পরিদর্শনে বেরোতেই দিল না রাজ্য সরকার। কলকাতায় যে প্রতিনিধি দল এসে পৌঁছেছিল তার সদস্যরা বসে রইলেন বিএসএফের ক্যাম্প অফিসে। এ ব্যাপারে ওই প্রতিনিধি দলের প্রধান তথা প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের অতিরিক্ত সচিব অপূর্ব চন্দ্র মঙ্গলবার তাঁর হতাশা গোপন করেননি। তিনি বলেন, কেন্দ্রের তরফে পশ্চিমবঙ্গকে যে নির্দেশ পাঠানো হয়েছিল, সেই মধ্যপ্রদেশ, মহারাষ্ট্র, রাজস্থান সরকারকেও পাঠানো হয়েছিল। ওই রাজ্যগুলিতেও কেন্দ্রের প্রতিনিধি দল গিয়েছে। তাঁরা রাজ্য সরকারের সাহায্য নিয়ে ভালরকম কাজও করছেন। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গে কেন বাধা দেওয়া হল বোধগম্য হচ্ছে না।
সোমবার রাজ্যের মুখ্য সচিব রাজীব সিনহা বলেছিলেন, ওই প্রতিনিধি দল কলকাতায় পৌঁছনোর কিছুক্ষণ আগে মাত্র তিনি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের নির্দেশের কথা জানতে পারেন। নির্দেশ অনুযায়ী ওই প্রতিনিধি দলের থাকাখাওয়া ও পরিবহণের ব্যবস্থা করার কথা রাজ্য সরকারের। কিন্তু তাঁরা রাজ্য সরকারের কাছ থেকে কোনও সাহায্য না চেয়ে বিএসএফের গাড়ি নিয়ে নিয়েছেন।
এ ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দলের অন্যতম সদস্য তথা প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের অতিরিক্ত সচিব অপূর্ব চন্দ্র বলেন, “কলকাতায় পৌঁছনোর পর থেকে বার বার মুখ্য সচিবের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। রাজ্যের সাহায্য চেয়েছি। সোমবার বিকেলে রাজ্য সচিবালয়ে গিয়ে দেখাও করেছি”। তাঁর কথায়, “একদিনের বেশি হয়ে গেল নবান্ন ও নাইসেড ছাড়া আর কোথাও আমরা যেতে পারিনি। রাজ্য সরকার আপত্তি করেছে”।
কেন্দ্রের প্রতিনিধিরা বলেন, নবান্ন জানিয়েছিল আজ তাঁরা কিছু একটা ব্যবস্থা করবেন। তার পর আজ বিএসএফের কলকাতার অফিসে কেন্দ্রীয় প্রতিনিধিদের বৈঠক করতে এসেছিলেন মুখ্য সচিব। তখনই জানিয়ে দেওয়া হয় যে তাঁদের জেলা পরিদর্শনে যেতে দেওয়া হবে না।
জানা গিয়েছে, নবান্নের তরফে তাঁদের বলা হয়েছে, সময়ান্তরে জেলাওয়াড়ি পরিসংখ্যান কেন্দ্রীয় টিমকে পাঠিয়ে দেওয়া হবে। কিন্তু তার অতিরিক্ত কিছু করা যাবে না।
এ ব্যাপারে রাজ্যের তরফে আজ নতুন করে কিছু বলা হয়নি। বিকেলে নবান্নে মুখ্য সচিব সাংবাদিক বৈঠক করে এ ব্যাপারে রাজ্যের অবস্থান জানাতে পারেন বলে মনে করা হচ্ছে।
প্রসঙ্গত কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের চিঠি দিয়ে রাজ্যকে জানিয়েছিল যে কলকাতা, হাওড়া, উত্তর চব্বিশ পরগনা, পূর্ব মেদিনীপুর, জলপাইগুড়ি, দার্জিলিং এবং কালিম্পং জেলায় পরিস্থিতি ‘বিশেষ ভাবে গুরুতর’। সংক্রমণের নিরিখে এই স্পর্শকাতর জেলাগুলির পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে তেমনই ধারণা হয়েছে তাদের। তাই বিপর্যয় মোকাবিলা আইনের ৩৫(১), ৩৫(২), ৩৫(২)(এ), ৩৫(২)(ই) এবং ৩৫(২)(আই) ধারা অনুযায়ী কেন্দ্রের অধিকার প্রয়োগ করে আন্তঃমন্ত্রক প্রতিনিধি দল পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
রাজ্যের মুখ্য সচিবকে চিঠি দিয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের তরফে আরও বলা হয়েছিল, দুটি প্রতিনিধি দল গঠন করেছে কেন্দ্র। তারা ওই সাত জেলার পরিস্থিতি ঘুরে দেখবে। বিপর্যয় মোকাবিলা আইন মোতাবেক লকডাউনের শর্ত ওই জেলাগুলিতে ঠিক মতো পালিত হচ্ছে কিনা তা প্রতিনিধি দলের সদস্যরা খতিয়ে দেখবেন। সেই সঙ্গে দেখবেন, সেখানে অত্যাবশ্যকীয় পণ্য সরবরাহ কেমন হচ্ছে, মানুষ সোশাল ডিস্টেন্সিং মানছে কিনা, রাস্তায় লোকজনের যাতায়াত কেমন। তা ছাড়া স্বাস্থ্য পরিকাঠামো, হাসপাতালের পরিস্থিতিও সরেজমিনে দেখবেন প্রতিনিধি দলের সদস্যরা। তা ছাড়া হটস্পট জেলাগুলিতে নমুনা পরীক্ষা কত হয়েছে, তার পরিসংখ্যানও খতিয়ে দেখার কথা ছিল এই আন্তঃমন্ত্রক প্রতিনিধি দলের।
দুটি আন্তঃমন্ত্রক প্রতিনিধি দল পাঠিয়েছে। প্রথম টিমটি কলকাতা, হাওড়া, পূর্ব মেদিনীপুর ও উত্তর চব্বিশ পরগনায় যাওয়ার কথা ছিল। পাঁচ জনের ওই প্রতিনিধি দলের নেতৃত্বে রয়েছেন প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের অতিরিক্ত সচিব অপূর্ব চন্দ্র। সেই সঙ্গে রয়েছেন জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা সংস্থার যুগ্ম সচিব রমেশ চন্দ্র গন্ট, স্বাস্থ্য মন্ত্রকের ডেপুটি ডিরেক্টর জিলে সিংহ ভিকাল, পাবলিক হেল্থ স্পেশালিস্ট অধ্যাপক আর পতি এবং উপভোক্তা বিষয়ক মন্ত্রকের ডিরেক্টর সীতারাম মিনা।
দ্বিতীয় দলটি পৌঁছে গিয়েছে শিলিগুড়িতে। তাঁদের যাওয়ার কথা ছিল জলপাইগুড়ি, দার্জিলিং ও কালিম্পংয়ে। তার নেতৃত্বে রয়েছেন মানব সম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রকের অতিরিক্ত সচিব বিনীত জোশী। সেই সঙ্গে রয়েছেন পাবলিক হেল্থ স্পেশালিস্ট অধ্যাপক শিবানী দত্ত, বিপর্যয় মোকাবিলা সংস্থার উপদেষ্টা অজয় গাঙওয়ার, উপভোক্তা বিষয়ক দফতরের ডিরেক্টর ধর্মেশ মাকওয়ানা এবং স্বাস্থ্য মন্ত্রকের ডেপুটি সেক্রেটারি এন বি মানি।
কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্য, আন্তঃমন্ত্রক টিম পাঠানোর ব্যাপারে কেন্দ্রের এই অতি সক্রিয়তা ভাল, কিন্তু তা রাজ্যকে না জানিয়েই করা হয়েছে। এটা প্রচলিত প্রটোকল তথা প্রথার পরিপন্থী। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে মুখ্যমন্ত্রী চিঠি দিয়ে আরও বলেছেন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের নির্দেশে বলা হয়েছে সাতটি জেলায় লকডাউনের শর্ত ঠিকমতো মানা হয়নি। সেখানে পরিস্থিতি গুরুতর। কিন্তু বাস্তব ছবিটা তা নয়। কালিম্পংয়ে গত ২ এপ্রিলের পর কেউ আক্রান্ত হননি। জলপাইগুড়িতেও ৪ এপ্রিলের পর আক্রান্ত হননি কেউ। কেন্দ্রীয় সরকার যেভাবে সাতটি জেলা বেছে নিয়েছে তা একেবারেই কল্পনাপ্রসূত।