অন্তঃসত্ত্বা হস্তিনী-মৃত্যুর ঘটনায় আটক স্থানীয় কৃষক,চলছে জেরা

0
873

দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ বিস্ফোরক ঠাসা আনারস খেয়ে কেরলের অন্তঃসত্ত্বা হাতির মৃত্যুর ঘটনায় বন দফতর এক স্থানীয় কৃষককে আটক করেছে বলে জানা গেছে। তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে, ঠিক কেন ওই আনারসটি রাখা হয়েছিল, কীভাবেই বা সেটি খেয়ে ফেলল অন্তঃসত্ত্বা হাতিটি৷

ইতিমধ্যেই ২৭ তারিখে মলপ্পুরমের এই মর্মান্তিক ঘটনায় তোলপাড় দেশ, সোশ্যাল মিডিয়া। তদন্তও চলছে জোরকদমে। তারই মধ্যে আজ কেরলের বনদফতরের আধিকারিকরা ঘটনা নিয়ে মুখ খুলেছেন সংবাদমাধ্যমে। কেরলের এক বনকর্তা বলেছেন, বুনো শুয়োর বা ওই জাতীয় প্রাণীকে মারার জন্য অনেক সময়ে জঙ্গলে বসবাস করা মানুষ বিস্ফোরক বা দেশি বোমা ব্যবহার করেন। তাঁদের আন্দাজ, ভুল করে হয়তো সেটিই খেয়ে ফেলেছিল মৃত হাতিটি। সেটাই সত্যি কিনা, সত্যি হলে তা কীভাবে হল, তা জানা যেতে পারে ওই কৃষককে জিজ্ঞাসাবাদ করে।

তবে ঠিক কোথায় এই ঘটনা ঘটেছিল তা নিয়ে এখনও অথৈ জলে বনকর্তারা। মান্নারকড় ফরেস্ট ডিভিশনের অধিকর্তা কে কে সুনীল কুমার বলেছেন, “হাতিটি কোথায় এই বিস্ফোরক ঠাসা আনারস খেয়েছিল তা সুনির্দিষ্ট করে বলা অত্যন্ত মুশকিল।” তাঁর বক্তব্য, একটি পূর্ণবয়স্ক হাতি দিনে গড়ে ১০০ কিলোমিটার হাঁটতে পারে। হাতিটিকে যেখানে প্রথম আহত অবস্থায় দেখা গিয়েছিল সেখান থেকে কতদূরে তা ঘটেছিল তা খুঁজে বের করতেই এখন কালঘাম ছুটছে বনকর্তাদের।

পশ্চিমঘাট রেঞ্জের ফরেস্ট অফিসাররা জানাচ্ছেন, ২৩ মে প্রথম তাঁরা জানতে পারেন মান্নারকড় রেঞ্জের পোট্টিয়ারার কাছে একটি হাতি এসেছে। পৌঁছে দেখা যায় হাতির মুখ রক্তাক্ত, ক্ষতবিক্ষত। ২৫ মে একটি নদীতে দেখা যায় হাতিটিকে। পশু চিকিৎসকদের বক্তব্য, জ্বালাপোড়া সহ্য করতে না পেরেই হয়তো জলের মধ্যে ঠায় দাঁড়িয়েছিল হাতিটি।

তখনও বিস্ফোরক খাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করা যায়নি। মৃত্যুর পর ময়নাতদন্তেই জানা যায়, বারুদ ঠাসা আনারস খাওয়ার বিষয়টি। সেইসঙ্গে এও জানা যায়, সে মা হতে চলেছিল। কেরলের বনকর্তাদের দাবি, হাতিটি জীবিত থাকা অবস্থাতেই কুনকি (প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত) হাতি ব্যবহার করা হয় কোথা থেকে সে এসেছে তা বোঝার জন্য। কিন্তু, হাতিটির আঘাত এতটাই গুরুতর ছিল তাকে বেশিদূর নড়ানো যায়নি।

ইতিমধ্যেই বন্যপ্রাণী আইনে মামলা রুজু হয়েছে। কেরলের মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন গতকাল আশ্বাস দিয়েছেনযারা এই অমানবিক ঘটনা ঘটিয়েছে তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া হবে।

কিন্তু বনকর্তারা যা বলছেন, তা শুনে অনেকেরই সন্দেহ হচ্ছে, আদৌ কি আসল অপরাধীদের খুঁজে পাওয়া যাবে? জঙ্গলের মধ্যে কোন জায়গায় ঘটনা ঘটেছে তা-ই যদি চিহ্নিত না করা যায় তাহলে কী ভাবে দোষীদের খুঁজে বের করা সম্ভব? অনেকের মধ্যে এও প্রশ্ন উঠছে, গত ৪৮ ঘণ্টায় দু’বার সাংবাদিক বৈঠক করেছেন কেরলের বনসচিব। তিনি কেন এই প্রসঙ্গ একবারও আনেননি। তাহলে কি এসব যুক্তি দিয়ে ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে?

যদিও প্রাণীবিদ্যার অধ্যাপক আশুতোষ সামন্ত বলেন, বনের মধ্যে হাতি বা অন্য পশুদের অমানবিক কায়দায় হত্যার ঘটনা নতুন নয়। দক্ষিণের বহু রাজ্যে প্রায়ই এই ধরনের ঘটনা ঘটে। বিদ্যুতের তার বিছিয়ে রেখে হাতিদের হত্যা করার নজিরও রয়েছে ভারতে। তাঁর কথায় এই হাতিটির মৃত্যু আলাদা করে হৃদয় বিদারক হওয়ার কারণ সে মা হতে চলেছিল। তিনি এও বলেন, বন্যপ্রাণী সুরক্ষা আইন অত্যন্ত কঠোর। কিন্তু প্রয়োগের শিথিলতার জন্যই বারবার এই ধরনের ঘটনা ঘটছে।

Previous articleহাতি মৃত্যু ঠাণ্ডা মাথায় খুন, বললেন রতন টাটা
Next articleকেরলে হস্তিনী খুনে তিন জন সনাক্ত,অপরাধীদের বিচার হবেই, জানালেন পিনারাই

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here