অনলাইনে গনেশ পুজো দিয়ে নববর্ষ বরণে মাতল বাঙালি

0
667

পার্থ সারথি নন্দী: খাতায়-কলমে বাঙালি জীবনে আজ পয়লা বৈশাখ। পুরনো পঞ্জিকার শেষ পাতা তা–ই বলে গেল। নতুন পঞ্জিকা কি সেভাবে দেখা হয়েছে বাঙালির?‌ পঞ্জিকা পুঁথির কথা এখন আর ভেবে কী লাভ!‌‌ গোটা দেশ এখন শুনশান। সারা বাংলার একই চিত্র৷
আজ, মঙ্গলবার পয়লা বৈশাখ। বাঙালি জীবনে হালখাতা, চৈত্রের চড়ক মেলা, নতুন পোশাক, দুপুরে–‌‌রাতে রকমারি আহারের তরিবত—‌ সব চলে গেছে কাল–‌করোনার গ্রাসে।
পয়লা বৈশাখের দিন বাঙালি মাস্ক পরে কবে কাটিয়েছে, সেটা খুঁজে বের করতে পাড়ার ঈশ্বর কানাই দাদুর খোঁজ পড়তে পারে!‌

যদিও অদম্য বাঙালি এই করোনা রোগের রাহুগ্রাস থেকে আজ বেরিয়ে পড়েছে ৷
আজ পয়লা বৈশাখ থেকেই একটু একটু করে সেই ‘‌স্বাধীনতা’‌র জন্য দিন গোনা শুরু করেছে। আজ নতুন মাস্কেই অনলাইনে বর্ষবরণ, হালখাতা সারলেন বনগাঁর এক স্বর্ণ ব্যাবসায়ী রতন সীনহা !‌ রতন বাবু বলেন এবার আক্ষরিক অর্থেই যেন একলা বৈশাখ!‌পরিবারের পুরোহিত কে তাঁর নিজের বাড়িতে একটি মোবাইলে অনলাইনে বসানো হয়, এদিকে গহনার শোরুমে গনেশের মুর্তির সামনেও মোবাইল ক্যামেরা অনলাইন চালু করে পয়লা বৈশাখের গনেশ পুজো দেওয়া হয় এভাবেই৷ কারণ আমরা অপেক্ষায় ছিলাম প্রধান মন্ত্রী তাঁর ভাষণে কী বার্তাদেন তার জন্য৷যখন সংবাদ মাধ্যমে জানতে পারলাম লকডাউন মেয়াদ আরও বাড়ল এবং সেই সাথে করোনাভাইরাস মোকাবিলায় সোশ্যাল ডিস্ট্যান্স বজায় রাখার বিষয়েও বারবার গুরুত্বপূর্ণ ভাবে আহ্বান জানিয়েছেন নরেন্দ্র মোদী । সে কথা মাথায় রেখেই এই অনলাইন পুজোর ব্যাবস্থা করেছি। বাড়িতে তৈরী নারকেলের নাড়ু ছাড়া প্রসাদ হিসাবে যদিও আর তেমন কিছু জোগার হয়নি আজ,তবে পুজোর জন্য কিছু ফুল আনা হয় বাজার থেকে৷

এদিন সকালে বিচ্ছিন্ন ভাবে কলকাতা সহ জেলা শহর গ্রামের বাজার গুলিতে কোথাও কোথাও ভিড় দেখা গেছে। চৈত্র সেলের ভিড় নয়। পয়লা বৈশাখে হালখাতার নিয়ম রক্ষার জন্য উপচার সংগ্রহ করার জন্য।

ষোড়শ উপচারে বড় বড় দোকানে এবার হালখাতা হচ্ছে না। অক্ষয় তৃতীয়ার দিনেও ছবিটা বদলে যাবে, এমন নয়। যে–ভিড় দেখা গেছে, তা মূলত ফল–‌ফুলের বাজারে বা দশকর্মার দোকানে। রীতি কি অত সহজে বিসর্জন দেওয়া যায়?‌ যায় না বলেই বুঝি বাঙালি এত চাপের মুখেও তার সংস্কৃতিকে ঘরের চার দেওয়ালের মধ্যে উদ্‌যাপনের জন্য মুখিয়েছিল৷

হ্যাঁ বাঙালি আজও হারেনি !পয়লা বৈশাখ পালন করেছে । আজ যার যার বাড়িতে, সীমিত আয়োজনের মধ্যেই নববর্ষ পালনের তোড়জোড় ছিল। পুরোহিত আসতে পারবেন না। কোথাও কোথাও ভিডিও–‌কলে তিনি মন্ত্র পড়ে দিয়েছেন। কোথাও–বা পরিবারের বর্ষীয়ান সদস্যই পুজো সেরেছেন।

হেঁশেল সামলেছেন গোটা বাড়ির লোক। এখন তো রান্নার দিদরাও আসছেন না। মাইকে পুলিশ বার বার ঘোষণা করেছে, জরুরি জিনিসের দোকান ছাড়া আর কোনও দোকান খোলা যাবে না। মাস্ক ছাড়া বাইরে বেরোনোও যাবে না। এ গেল প্রশাসনিক নিষেধাজ্ঞা। সব বাড়িতেই এখন নিষেধাজ্ঞার ঘেরাটোপ। মিনিটে মিনিটে স্যানিটাইজার আর কোভিড–‌১৯ ট্র‌্যাকারে চোখ রেখে নববর্ষ বরণ।‌ বাঙালি পারেও বটে!‌
আজ পয়লা বৈশাখ। শুভেচ্ছা–‌বিনিময় শুরু হয়েছে সোমবার রাত থেকেই। আজ অবশ্য দেখা যায়নি দক্ষিণেশ্বর, কালীঘাট, বেলুড় মঠের ভিড়। দেখা যায় নি গঙ্গাস্নানের ছবিও।
তবু নববর্ষ পালন হচ্ছে বৈকি,‌ খুব হচ্ছে!‌ বাড়িতে–‌বাড়িতে, সোশ্যাল মিডিয়ায়, ফোনে,ফোনে.‌.‌‌.‌ এসো হে বৈশাখ!‌‌‌‌‌

Previous article৩ মে পর্যন্ত লকডাউন চলবে, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী
Next articleভয়ঙ্কর সংকটময় মুহূর্তে মানবিক আলোক চিত্র শিল্পী অশোক মজুমদার

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here