দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ হিমাচল প্রদেশের রোটাং পাসের নীচে অটল টানেলের উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। এই টানেলের মাধ্যমে হিমাচল প্রদেশের মানালি ও লাহুল-স্পিতি ভ্যালির মধ্যে যোগসূত্র স্থাপন হল। ফলে লাদাখের লেহ যাওয়ার দূরত্ব প্রায় ৪৬ কিলোমিটার কমে গিয়েছে। তার ফলে যাতায়াতের সময়ও চার থেকে পাঁচ ঘণ্টা কমে গিয়েছে। এই টানেলের ফলে ভারতের সীমান্ত পরিকাঠামো আরও শক্তিশালী হল বলেই জানালেন প্রধানমন্ত্রী।
এদিনের উদ্বোধনে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং, চিফ অফ ডিফেন্স স্টাফ জেনারেল বিপীন রাওয়াত, সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল এমএম নারাভানে। উপস্থিত ছিলেন হিমাচল প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী জয়রাম ঠাকুরও।
অটল টানেলের উদ্বোধনে এসে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “এই অটল টানেল ভারতের সীমান্ত পরিকাঠামোতে নতুন শক্তি যোগাবে। এটা বিশ্বমানের সীমান্ত যোগাযোগের উদাহরণ। অনেক দিন ধরে সীমান্ত পরিকাঠামো ভাল করার দাবি উঠছিল কিন্তু কোনও কারণে এই সব কাজ কখনও পরিকল্পনার স্তরে, আবার কখনও মাঝপথে আটকে ছিল।
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, “এই টানেল শুধুমাত্র হিমাচলের জন্যই গুরুত্বপূর্ণ নয়, এর মাধ্যমে লাদাখের সঙ্গেও যোগাযোগ হয়েছে। যাঁরা পাহাড়ে থাকেন, তাঁরা বোঝেন যাতায়াতের সময় ৫ ঘণ্টা কমে যাওয়ার কতটা সুবিধা।”
বিশ্বের দীর্ঘতম হাইওয়ে টানেল হল এই অটল টানেল। ১০ হাজার ফুট উঁচুতে ৯.০২ কিলোমিটার লম্বা এই টানেলের মাধ্যমে মানালি ও লাহুল-স্পিতি ভ্যালির মধ্যে যোগাযোগ তৈরি হচ্ছে। আগে প্রতি বছর ভারী বরফ পড়ার ফলে বছরে প্রায় ছ’মাস লাহুল-স্পিতি ভ্যালির সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যেত। কিন্তু এই টানেল চালু হয়ে গেলে তা আর হবে না বলেই প্রধানমন্ত্রীর দফতরের তরফে জানানো হয়েছে।
জানা গিয়েছে সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৩ হাজার মিটার বা ১০ হাজার ফুট উঁচুতে পীরপাঞ্জাল রেঞ্জের মধ্যে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে এই টানেল তৈরি করা হয়েছে। এর দক্ষিণ মুখ রয়েছে মানালির কাছে সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৩ হাজার ৬০ মিটার উঁচুতে। আর এর উত্তর মুখ রয়েছে লাহুল ভ্যালির কাছে সিসসুতে সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৩ হাজার ৭১ মিটার উঁচুতে।
ঘোড়ার নালের আকৃতির এই টানেল ৮ মিটার চওড়া। এমনভাবে এই টানেল বানানো হয়েছে, যাতে প্রতিদিন ৩ হাজার ছোট গাড়ি ও দেড় হাজার ট্রাক সর্বোচ্চ ৮০ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টা গতিবেগে এই রাস্তা দিয়ে চলাচল করতে পারে।
২০০০ সালের ৩ জুন এই টানেল তৈরি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল কেন্দ্রে অটল বিহারী বাজপেয়ী সরকার। সেইমতো ২০০২ সালের ২৬ মে এই টানেল তৈরি করার শিলান্যাসও হয়েছিল। আর যেহেতু অটল বিহারী বাজপেয়ী সরকার এই টানেল তৈরির সিদ্ধান্ত নিয়েছিল তাই ২০১৯ সালের ডিসেম্বর মাসে প্রয়াত প্রধানমন্ত্রীকে শ্রদ্ধা জানাতে এই টানেল তাঁর নামে করার ঘোষণা করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।
এই টানেল তৈরি করার জন্য প্রচণ্ড পরিশ্রম করতে হয়েছে বর্ডার রোডস অর্গানাইজেশনকে। কারণ পাহাড়ের চড়াই-উতরাইকে সামলে ও আবহাওয়ার খামখেয়ালিপনাকে অতিক্রম করে এই টানেল তৈরি করতে হয়েছে। বিশেষ করে সেরি নালা ফল্ট জোনে প্রায় ৫৮৭ মিটার রাস্তা তৈরি করতে খুবই সমস্যায় পড়তে হয়েছিল তাদের। অবশেষে সব বাধা দূর করে ২০১৭ সালের ১৫ অক্টোবর এই অংশের নির্মাণ শেষ হয়। এদিন সেই টানেলের উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী।