দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ হামলার আঁচ ছিল। ইঙ্গিত দিয়েছিল জইশ-ই-মহম্মদ। অভিযোগ, ভারতের গোয়েন্দা দফতর গুরুত্ব দেয়নি!

সেনা সূত্রের খবর, বৃহস্পতিবার জম্মু ও কাশ্মীরের পুলওয়ামা জেলার অবন্তীপোরায় সিআরপিএফের কনভয়ে যে ভয়ঙ্কর জঙ্গিহানায় শহিদ হলেন অন্তত ৪৪ জন সেনা এবং আহত হলেন আরও বহু, সেই হামলা যে হতে পারে, তার আঁচ আগেই পাওয়া গিয়েছিল।

সূত্রের খবর, মাত্র দু’দিন আগেই পাকিস্তানের জঙ্গি সংগঠন জইশ-ই-মহম্মদ জানিয়েছিল, কাশ্মীরে খুব ভয়াবহ আত্মঘাতী হামলা হতে চলেছে। এমনকী কী ভাবে আক্রমণ করা হবে, তা-ও অনলাইনে আপলোড করা ভিডিওর মাধ্যমে বুঝিয়ে দিয়েছিল এই জঙ্গি সংগঠন।

ওই ভিডিওতে আফগানিস্তানের একটি জায়গাকে দেখানো হয়েছিল। যেখানে এই একই রকম ভাবে ব্যবহার করা হয়েছিল গাড়ি ভর্তি বিস্ফোরক। সূত্রের খবর অনুযায়ী, জম্মু ও কাশ্মীরের পুলিশ ওই ভিডিও-সহ সম্ভাব্য জঙ্গিহানার সমস্ত খুঁটিনাটি কী কী হতে পারে, তা জানিয়েছিল কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা বিভাগকে। কিন্তু অভিযোগ, তারা তা নিয়ে তেমন ভাবে হেলদোলই দেখায়নি।

এই হামলার তীব্র নিন্দা করেছেন প্রায় সমস্ত রাজনৈতিক দলের নেতারাই। কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধী বলেন, “অত্যন্ত কাপুরুষের মতো কাজ এটা। এত জন সেনার শহীদ হয়ে যাওয়া মেনে যাওয়া না। আমি তাঁদের আত্মার শান্তি কামনা করি। তাঁদের পরিবারকে সমবেদনা জানাই। আহতদেরও দ্রুত আরোগ্য কামনা করি”।

শুক্রবারই শ্রীনগর সফরে যাওয়ার কথা কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহের । তিনি জম্মু ও কাশ্মীরের রাজ্যপাল, সিআরপিএফের প্রধান এবং স্বরাষ্ট্রসচিবের সঙ্গে কথা বলেন। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অরুণ জেটলি টুইট করে বলেন, “এই কাজের জন্য এমন সাজা দেওয়া হবে জঙ্গিদের, যা ওরা কোনও দিন ভুলতে পারবে না।”

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক সূত্রে জানানো হয়েছে, ৭০টিরও বেশি গাড়ির কনভয় নিয়ে যাচ্ছিল সিআরপিএফের জওয়ানরা। জম্মু-কাশ্মীর হাইওয়ের ওপর দিয়ে পুলওয়ামার সামনে দিয়ে যাওয়ার সময়েই গাড়ি বোমা বিস্ফোরণ করে জঙ্গিরা। প্রশ্ন উঠেছে, নিরাপত্তার ফাঁক গলে বিস্ফোরক-ভর্তি গাড়ি কী করে ঢুকে গেল এাকায়। কী করেই বা তা সেনা কনভয়ের অত কাছে চলে গেল!

আগে থেকে আন্দাজ পাওয়া সত্ত্বেও কেন সতর্ক হল না প্রশাসন, সে প্রশ্ন তুলছেন শহিদ জওয়াদের পরিবারের সদস্যরাও।


শুক্রবার জি-২০ গোষ্ঠীভুক্ত দেশগুলির প্রতিনিধিদের সঙ্গে মধ্যাহ্নভোজে মিলিত হওয়ার কথা ছিল কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধীর। তিনিও সেই কর্মসূচি বাতিল করেছেন। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক প্রিয়ঙ্কা গান্ধীর প্রথম সাংবাদিক বৈঠক করার কথা ছিল। জঙ্গি হানার খবর পেয়ে তিনি সেই বৈঠক বাতিল করেন। তিনি বলেন, এখন রাজনীতির কথা বলার সময় নয়। নিহত জওয়ানদের স্মৃতির উদ্দেশে তিনি এক মিনিট নীরবতা পালন করেন।
: পুলওয়ামায় জঙ্গি হানায় গত বৃহস্পতিবার প্রাণ হারিয়েছেন ৪৪ জনেরও বেশি। শুক্রবার তাই নির্বাচনী প্রচার বন্ধ রাখল বিজেপি। এদিন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং বিজেপির সভাপতি অমিত শাহের দেশের নানা প্রান্তে সভা করার কথা ছিল। বৃহস্পতিবার রাতেই জানিয়ে দেওয়া হয়, তাঁরা কোথাও প্রচারে যাবেন না।

শুক্রবার সকালে জরুরি বৈঠকে বসে নিরাপত্তা পরিস্থিতি খতিয়ে দেখেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং, অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি, বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ এবং প্রতিরক্ষা মন্ত্রী নির্মলা সীতারামন।

বৃহস্পতিবার বিকালে পুলওয়ামা জেলার অবন্তীপুরায় সিআরপিএফের কনভয় জঙ্গি হানার শিকার হয়। একটি স্করপিও গাড়িতে সাড়ে ৩০০ কেজি বিস্ফোরক নিয়ে কনভয়ে ধাক্কা মারে আত্মঘাতী জঙ্গি। এর আগে নিরাপত্তা রক্ষীদের ওপরে এত বড় হামলা কাশ্মীরে আর কখনও হয়নি।

আহতদের দ্রুত শ্রীনগরের আর্মি হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। পাকিস্তানের মদতপুষ্ট জঙ্গি গোষ্ঠী জইশ ই মহম্মদ হামলার দায় স্বীকার করে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক থেকে জানানো হয়েছে, আড়াই হাজার সিআরপিএফ কর্মীকে নিয়ে ৭৮ টি বাস যাচ্ছিল শ্রীনগর-জম্মু হাইওয়ে দিয়ে। ওই রাস্তাটি বৃহস্পতিবার সকালেই স্যানিটাইজড করা হয়। অর্থাৎ রাস্তায় তল্লাশি চালানো হয়। এর পরে যেভাবে জঙ্গি হানা হয়েছে, তাতে মনে হয়, নিরাপত্তা ব্যবস্থায় গুরুতর ত্রুটি ছিল।

বিস্ফোরণস্থলের যে ছবি প্রকাশিত হয়েছে, তাতে দেখা যায়, বাসের ভাঙা টুকরো ছড়িয়ে আছে অনেকখানি জায়গা জুড়ে। সেই সঙ্গে ছড়িয়ে আছে মানবদেহের ছিন্নবিছিন্ন অংশ।

সরকারি সূত্রে জানা গিয়েছে, যে ব্যক্তি স্করপিও গাড়ি নিয়ে কনভয়ে ধাক্কা মেরেছিল তার নাম আদিল আহমেদ দার। ওরফে ওয়াকাস কম্যান্ডো। তার বাড়ি কাকাপোরায়। সে গত বছরে জইশ ই মহম্মদ গোষ্ঠীতে যোগ দেয়।

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী টুইট করেছেন, জওয়ানদের আত্মদান বৃথা যাবে না। পুরো জাতি কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে নিহতদের পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছে। প্রার্থনা করি, আহতরা দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠুন। ছবি-সংগৃহীত/

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here