“ট্রাভেলগ” (পর্ব-৬)

লিখছেন~ দেবন্বিতা চক্রবর্তী,

এবার পাকদন্ডী পথ ঘুরে গেল মেইন মানালি থেকে নগ্গরের দিকে ৷ নগ্গর বিপাশার পশ্চিম তীরের শহর , নদীর অপরদিকে চোখ জুরানো শহরটার টার নাম পাতলিখুল , আর রোডটার নাম হল কাতরেইন কুলু রোড ৷ এত সব কিছু যে গুগল সার্চ করলেই পাওয়া যায় তা নয় , খুবই বিরস লাগে এসব পরতে, তার থেকে মুখের গল্প যেন অতি মধুর ৷

আমাদের এসব গল্প বললেন আমাদের টুরিস্ট গাইড শুভঙ্কর বাবু, তিনি এও জানালেন যে এই সুন্দর নগ্গর শহর নাকি আগে কুলুর রাজধানী ছিল ,পরে সেটা চলে যায় সুলতানপুর ৷ ১৭৯০ মিটার উচ্চে পাহারের একদম শিখরে রাজা বিশুধপালের হাতে এই নগরের পত্তন । পুরো শহরটা ছবির মতো সুন্দর হলেও প্রধান আকর্ষন হল রাজা সিধ সিং এর তৈরী সামার ক্যাসেল , যেখানে নাকি রাজ্যপাট ও বসত । আমরা অবাক হয়ে জিঞ্জাসা করলাম এত কিছু তিনি জানলেন কি করে?

তিনি হেসে বললেন ” প্রতিবছর এখানে টুরিস্ট নিয়ে আসতে আসতে আমিও ওদের একজন হয়ে গেছি ” ৷গল্প করতে করতে আমরা পৌঁছে গেলাম ক্যাসেলের সামনে ৷ আমরা জাস্ট হাঁ করে দেখছিলাম এই আশ্চর্য কীর্তি, হঠাৎ মনে হল দূর্গাপূজোর প্যান্ডেল দেখতে এসেছি ৷ এত সুন্দর কাঠের ও পাথরের কারুকার্য যে দেখে তাক লেগে যায় , আমরা ছোটরা তো রীতিমতো হুড়মুড় করে ঢুকে পড়লাম , গেটকিপার ও বাধা দিল না ৷পরে শুনলাম বড়োরা সবার টিকিট কেটে ঢুকেছে, এদিকে ভেতরে ঢুকে আমাদের চক্ষু চড়কগাছ ৷

আপনাদের মনে আছে নিশ্চয় জব উই মিট সিনেমার ওই গানটার দৃশ্য ….”এয়ে ইস্ক হায়ে”…ওই যেখানে শাহিদ কাপুর ওই উপরের কারুকার্যময় কাঠের ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে নীচে নৃত্যরতা সুন্দরী করিনা কাপুর খান কে দেখছে , সেখানে আমরা এখন দাঁড়িয়ে ৷ কি যে অপূর্ব এক আনন্দ হচ্ছে .. আবার দেখলাম কস্টিউম chola পাওয়া যায় যা পরে নাচা হয়।

শুনলাম ভূমিকম্পেও নাকি কিচ্ছুটি হয়নি এই ক্যাসেলের । এই দূর্গটা আধাঝুলন্ত অবস্থায় আছে সেটাও খেয়াল করলাম এতক্ষণে, আর এটি ছিল ১৮৪৬ সাল পর্যন্ত ব্রিটিশদের গ্রীষ্মকালীন বসবাসের জায়গা ৷সারা উপত্যকা যেন ধরা দিচ্ছে ব্যালকনি গুলো থেকে ৷কিন্ত কথায় আছে না এক বালতি দুধে এক ফোঁটা গো চোনা , সেই অবস্থা হল আমাদের । ক্যাসেলের দায়িত্বে থাকা একজন গার্ড যা করুন কাহিনী শোনালেন তা শুনে রোম খাঁড়া হয়ে গেল, রাজামশাই নাকি একবার রানীকে বলেছিলেন তার চোখে সবচেয়ে সুন্দর পুরুষ কে?রানীও ফচকেমি করে বলেছেন ওই পাশের ম্যাসেল ম্যান লোকটাই বেশি সুন্দর তার চোখে ৷ ওমনি রাজার রোষ গিয়ে পড়ল সেই পালোয়ানের উপর আর তাকে বলির বাখরার মতো ক্যাসল থেকে ফাঁসির দড়িতে ঝুলিয়ে দেওয়া হয় ৷

আর রানী ও রাজার শাস্তির ভয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ল দূর্গের ব্যালকনি থেকে , ইয়ার্কির কি করুন পরিনতি ! বাপ রে বাপ! সেই পালোয়ানের আত্মা নাকি এখনও রাতের দিকে ক্যাসেলে ঘুরে বেড়ায় ।এদিকে সন্ধ্যা নামছে দেখে আমরা ও তড়িঘড়ি গাড়িতে উঠে এলাকা থেকে চম্পট দেওয়া স্থির করে নিলাম ,গার্ড লোকটা বোকা বানালো কিনা কে জানে?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here