শুভেন্দুর নিরাপত্তারক্ষী ‘খুনে’ জাল গোটাচ্ছে সিআইডি, প্রাক্তন রক্ষীর মৃত্যু-তদন্তে সাংসদ দিব্যেন্দুর সঙ্গে কথা

0
471

দেশের সময় ওয়েবডেস্ক: শুভেন্দু অধিকারীর বাড়ির কাছে সিআইডি। দেহরক্ষী শুভব্রত চক্রবর্তীর রহস্যমৃত্যুর ঘটনা তদন্তভার হাতে নিতেই তৎপর রাজ্যের গোয়েন্দা বিভাগ। এদিন কাঁথিতে শুভেন্দুর শান্তিকুঞ্জের লাগোয়া বাড়িতে গেল সিআইডির চার প্রতিনিধি দল।

কথা বলেন ভাই দিব্যেন্দু অধিকারীর সঙ্গে। তবে কী বিষয়ে কথা হয়েছে তাদের মধ্যে তা বলতে নারাজ দু’পক্ষই।


জানা গিয়েছে, শান্তিকুঞ্জের ঠিক বিপরীতে একটি গাড়ির গ্যারেজ লাগোয়া বাড়িতে তাঁর দেহরক্ষী থাকতেন। সেখানেই বিশ্রাম নিতেন শুভব্রত। অন্যদিকে, মৃত্যুর এত দিন পর কেন সিআইডি তদন্তে নেমেছে তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন শুভেন্দু অধিকারী। 

প্রসঙ্গত, ২০১৮ সালের ১৩ অক্টোবর। কর্মরত অবস্থাতেই গুলিবিদ্ধ হয়েছিলেন রাজ্যের তৎকালীন মন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারীর নিরাপত্তারক্ষী শুভব্রত চক্রবর্তী। ১৪ অক্টোবর কলকাতার হাসপাতালে মৃত্যু হয়েছিল শুভব্রতর। শেষমেশ সেই ঘটনায় সম্প্রতি নতুন করে এফ আই আর দায়ের করেছেন শুভব্রতর স্ত্রী সুপর্ণা কাঞ্জিলাল চক্রবর্তী। কাঁথি থানায় নতুন করে অভিযোগ দায়ের করে ওই মহিলা বলেছেন, তিন বছরের আগের স্বামীর মৃত্যুর পুনরায় তদন্ত করতে হবে। সেই অভিযোগের ভিত্তিতেই ওই মামলার তদন্তভার তুলে দেওয়া হয়েছে সিআইডি-র হাতে। ইতিমধ্যেই সিআইডি-র তদন্তকারীরা কাঁথিতে গিয়ে ঘটনার তদন্ত শুরু করেছেন। সেই সূত্রেই কথা বলা হয়েছে শুভব্রতর আত্মীয় তথা মহিষাদলের তৃণমূল বিধায়ক তিলক চক্রবর্তীর সঙ্গে। কথা বলা হয়েছে তিলক বাবুর স্ত্রী’র সঙ্গেও।

স্বামীর মৃত্যুর ঘটনার সঠিক বিচার চেয়ে গত ৭ জুলাই পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের করেন স্ত্রী সুপর্ণা কাঞ্জিলাল চক্রবর্তী। সেই এফআইআর-এ নাম রয়েছে শুভেন্দু অধিকারীর।
এদিন প্রথমে দুপুর ১২টা নাগাদ প্রথমে কাঁথি থানায় যান সিআইডির চার প্রতিনিধি দল। এরপর দেহরক্ষী যেখানে ছিলেন সেখানে বেশ কিছু নথি এবং ঘর পরিদর্শন করেন তাঁরা।  হাসপাতালে যাওয়ার কথা রয়েছে চার সদস্যের। এই নিয়ে গতকাল প্রায় পাঁচ ঘণ্টা মৃতের স্ত্রী সুপর্ণা এবং দাদা দেবব্রত চক্রবর্তীকে জিজ্ঞাসাবাদ রাজ্যের গোয়েন্দা আধিকারিকরা।

সূত্রের খবর, ২০১৮ সালের ১৩ অক্টোবর শুভব্রত গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর তিলক চক্রবর্তীকে ফোন করেছিলেন শুভেন্দু অধিকারী। সেই সময় শুভেন্দু কী কী বলেছিলেন তিলক চক্রবর্তীকে, সেই বিষয়টি লিপিবদ্ধ করেছেন তদন্তকারীরা। জানা গিয়েছে, ওই সময় শুভেন্দু অধিকারীর নিরাপত্তার দায়িত্বে আরও যে সব রক্ষীরা ছিলেন, তাঁদেরও এবার জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। কোথায়, কীভাবে শুভব্রত গুলিবিদ্ধ হন, সেই বিষয়টি নিয়ে নিশ্চিত হতে চাইছেন সিআইডি-র তদন্তকারীরা।

কাঁথিতে যেখানে শুভব্রত গুলিবিদ্ধ হয়েছিলেন, এদিন সেখানকার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করবে সিআইডি। ফোটোগ্রাফি, ফরেনসিক সহ সিআইডি টিম ঘটনাস্থলে পরিদর্শন করে তথ্য সংগ্রহ করবে। ঘটনার দিন ঠিক কী ঘটেছিলো, শুভব্রত গুলিবিদ্ধ হওয়ার সময় অন্য যারা দেহরক্ষী ছিলেন শুভেন্দুর, তাঁরা কী দেখেছিলেন, কীভাবে ঘটল এই ঘটনা, এই বিষয়ে সেই সময়কার নিরাপত্তারক্ষীদের জিজ্ঞাসাবাদ করবে সিআইডি।

সিবিআই সূত্রে খবর, অন্য নিরাপত্তারক্ষীরা শুভব্রতকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় দেখার পর কী ব্যবস্থা নিয়েছিলেন, তখন কে কে ছিলেন ঘটনাস্থলে, অ্যাম্বুলেন্স আনতে কেন দেরি হল, সমস্ত বিষয়ই খতিয়ে দেখা হবে। গুলিবিদ্ধ হওয়ার আগে কি শুভব্রত ডিসটার্ব ছিলেন বা তাঁর কোন ফোন এসেছিল কিনা, তাও তদন্ত করে দেখছেন সিআইডি-র আধিকারিকরা।

রাজনৈতিক মহলের মতে, গোটা ঘটনায় যেভাবে কোমর বেঁধে নেমেছে সিআইডি, তাতে চাপ বাড়তে পারে বিরোধী দলনেতার। নন্দীগ্রামে হারের জ্বালা মেটাতেই তিন বছর আগের ঘটনায় তাঁকে নিশানা করছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর অভিযোগ এমনই। মঙ্গলবারও তিনি বলেছেন, ‘এ বিষয়ে আমার কিছু বলার নেই। যা বলার পুরোটাই বলবেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।’

শুভেন্দুর মৃত নিরাপত্তারক্ষী শুভব্রতর স্ত্রীর অবশ্য অভিযোগ, যে সময় তাঁর স্বামী গুলিবিদ্ধ হন, তখন প্রভাবশালী মন্ত্রী ছিলেন শুভেন্দু অধিকারী। একজন মন্ত্রীর নিরাপত্তারক্ষী হয়েও কীভাবে তাঁর স্বামী গুলিবিদ্ধ হলেন? হাসপাতালে নিয়ে যেতেও বা এত দেরি হল কেন, তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন সুপর্ণা দেবী। তাৎপর্যপূর্ণভাবে শুভব্রতর মৃত্যুর ঘটনায় যে নতুন এফআইআর করা হয়েছে, তাতে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩০২ ধারায় খুনের অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।

সুপর্ণা দেবীর অভিযোগ পত্রে নাম রয়েছে রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী ও তাঁর ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত রাখাল বেরার। কিন্তু এতদিন পর কেন এফআইআর? সুপর্ণা কাঞ্জিলাল চক্রবর্তীর দাবি, এতদিন আতঙ্কে মুখ বন্ধ করে থাকলেও আর চুপ করে বসে থাকবেন না তিনি।

ছয়-সাত বছর এই দায়িত্বে থাকার পর কীভাবে আচমকা তিনি গুলিবিদ্ধ হলেন, সেই প্রশ্ন তুলে তাঁর আরও অভিযোগ, চলতি বছরের ২১ মে বেশ কয়েকজন এসে তাঁকে ভয় দেখিয়ে যায়। শুভব্রতর মৃত্যু নিয়ে কোন জায়গা থেকে ফোন এসেছিল কিনা, অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিরা সেই বিষয়ে তাঁকে রীতিমতো হুমকি দিয়ে যায়। স্বামীহারা মহিলার দাবি, নিশ্চয় এর মধ্যে কোনও রহস্য রয়েছে। তাই স্বামীর মৃত্যু রহস্যের প্রকৃত সত্য উদঘাটনের দাবি জানিয়েছেন তিনি।

Previous articleউচ্চমাধ্যমিকের ফল প্রকাশের বিজ্ঞপ্তিতে ভুল? কী জানাল সংসদ
Next articleমাত্র সাত বছরেই পেশাদার সাংবাদিক, সঙ্গে অ্যাঙ্কারিং এও রয়েছে দাপট ,খুদের রিপোর্টিং ভিডিও এখন নেটমাধ্যমে ভাইরাল

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here