দেশের সময়ওয়েবডেস্কঃকংগ্রেস সদর দফতরে বহু বছর আগেই পোস্টার পড়েছিল প্রিয়ঙ্কা গান্ধী বঢড়াকে নিয়ে। তাতে স্লোগান লেখা ছিল, ‘দুসরি ইন্দিরা গান্ধী হ্যায়’।সোমবার সত্যিই কি লখনউ দ্বিতীয় ইন্দিরা কে ফিরে পেতে চাইছে প্রিয়াঙ্কার মধ্যে!গত ২৩ জানুয়ারি আনুষ্ঠানিক ভাবে কংগ্রেসে যোগ দিয়েছেন প্রিয়ঙ্কা। তাঁকে সর্বভারতীয় কংগ্রেসের তরফে পূর্ব উত্তরপ্রদেশের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক করেছেন কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধী। তার পর এই প্রথম, সোমবার তিন দিনের জন্য লখনউ সফরে যাবেন প্রিয়ঙ্কা। সঙ্গে রাহুল এবং উত্তরপ্রদেশের দায়িত্বপ্রাপ্ত আরেক নেতা জ্যোতিরাদিত্যা সিন্ধিয়াও যাবেন উত্তরপ্রদেশে।তার আগে লখনউতে কংগ্রেসের সদর দফতর রবিবার সাজো সাজো। দৃশ্যত ছোটাছুটি চলছে এ দিক, ও দিক। একদা এই উত্তরপ্রদেশের ক্ষমতার রাশ ছিল কংগ্রেসের হাতে। সে জমানা গিয়েছে বহুবছর হল। তার পর থেকে কংগ্রেসের সংগঠনও প্রায় শুয়ে পড়েছিল। সর্বভারতীয় কংগ্রেসের দিল্লির নেতারাই অবাক, কোথা থেকে যেন গত কদিনে কর্মী জুটে গিয়েছে। নতুন উন্মাদনা তৈরি হয়েছে পার্টিতে।লখনউ যাওয়ার আগে রবিবার সন্ধ্যায় প্রিয়ঙ্কাও আবহ তৈরিতে ত্রুটি রাখেননি। উত্তরপ্রদেশের মানুষের উদ্দেশে এক অডিও বার্তায় বলেছেন, কাল লখনউ যাচ্ছি। দেশের গরিব, পিছিয়ে পড়া মানুষের ক্ষমতায়ণের জন্য এক সমাবেশী রাজনীতির কথা বলেছেন তিনি। তাঁর কথায়, এই রাজনীতি হবে নতুন ধরনের। এতে সাধারণ মানুষেরও অংশীদারিত্ব থাকবে।ওপর ওপর এ সব পোশাকি কথার আড়ালে ভাই-বোনের আসল উদ্দেশ্য একেবারেই সোজা-সাপ্টা। কংগ্রেসের তাঁদের ঘনিষ্ঠ নেতারা বলছেন, গত প্রায় দুই দশক ধরে উত্তরপ্রদেশে যে দলই ক্ষমতায় এসেছে, তাঁদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি, স্বজনপোষণ, গুণ্ডাদের আশ্রয় দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। মুলায়ম সিংহ সমাজবাদী পার্টির সর্বাধিনায়ক। তাঁর নেতৃত্বে উত্তরপ্রদেশে প্রকৃত কোনও সামাজিক আন্দোলন হয়েছে কিনা কেউ বলতে পারে না। মায়াবতী দলিত নেত্রী, কিন্তু দলিতদের ক্ষমতায়ণের নামে তাঁর ক্ষমতা-লিপ্সা ও দেখেছে মানুষ। যোগী আদিত্যনাথের গেরুয়া রাজনীতিও সবাইকে নিয়ে চলার বার্তা দিচ্ছে না। বরং উত্তরপ্রদেশকে পিছনের দিকে হাঁটাতে চাইছেন যোগী।কংগ্রেস নেতৃত্বের আশা, এই পরিস্থিতিতে প্রিয়ঙ্কার মতো একজন ঝকঝকে তরুণ নেত্রীকে উত্তরপ্রদেশে দলের সভাপতি করলে নতুন প্রজন্মের কাছে কংগ্রেসের গ্রহণযোগ্যতা অনেকটা বেড়ে যেতে পারে। দ্বিতীয়ত, প্রিয়ঙ্কা ও জ্যোতিরাদিত্যকে উত্তরপ্রদেশে কংগ্রেস সেনাপতি করার অর্থই হল উচ্চবর্ণকে বার্তা দেওয়া। এক সময় সমাজের এই অংশের ভোটে আধিপত্য ছিল কংগ্রেসের। এই জুটিকে সামনে রেখে তাঁদের ফের কংগ্রেসের দিকে ফেরানোর চেষ্টা হবে। এবং তৃতীয়ত, এঁদের সামনে রেখে উচ্চবর্ণের মধ্যে কংগ্রেসের জমি উদ্ধারের চেষ্টা হলেও মূলত এঁরা কথা বলবেন, দলিত, পিছিয়ে পড়া ও সংখ্যালঘুদের প্রকৃত আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের ব্যাপারে।

যেমন, সোমবার লখনউ যাওয়ার আগেই উত্তরপ্রদেশে বিষ মদ কাণ্ডের মৃত্যুর ঘটনা নিয়ে একটি বিবৃতি দিয়েছেন প্রিয়ঙ্কা। তাতে অনেকটা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের রাজননৈতিক পথ নিয়েই বলেছেন, বিষ মদ খেয়ে মৃতদের পরিবারকে ভাল অঙ্কের ক্ষতিপূরণ ও পরিবারের এক জনকে সরকারি চাকরি দিতে হবে। এটা একটা ক্ষুদ্র বার্তা হলেও, এর মধ্যেই তাঁর রাজনৈতিক দর্শনেরও পরিচয় পাওয়া যাচ্ছে বলে অনেকের মত।চুম্বকে, হিন্দিবলয়ের সব থেকে বড় রাজ্যে সাবেক কংগ্রেসের যে উচ্চবর্ণ, দলিত ও সংখ্যালঘু ভোট ব্যাঙ্ক ছিল সেটাকেই ফেরানোর চেষ্টা করবেন প্রিয়ঙ্কা ও জ্যোতিরাদিত্য। তাঁদের লক্ষ্য কোনও ভাবেই শুধু উনিশের ভোট হবে না। তা হবে বৃহত্তর। ২০২২-এর বিধানসভা ভোট।কংগ্রেস সূত্র জানাচ্ছে, উনিশের ভোটে উত্তরপ্রদেশের মোট আশিটি আসনের মধ্যে ৪৪ টি আসনের দায়িত্ব থাকবে প্রিয়ঙ্কার কাছে। এবং আগামী ২ মাস সেখানে চষে ফেলবেন রাজীব কন্যা। ঠিক যে ভাবে একদা উত্তরপ্রদেশে ঝড় তুলেছিলেন ইন্দিরা গান্ধী।পর্যবেক্ষকদের মতে, প্রিয়ঙ্কাকে নিয়ে বিজেপি-র অন্দরের আশঙ্কাও ক্রমশ স্পষ্ট হচ্ছে। যে ভাবে গত কয়েক দিন ধরে লাগাতার প্রিয়ঙ্কার স্বামী রবার্ট বঢড়াকে ডেকে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট জেরা করেছে, তাতে স্পষ্ট রাজীব-কন্যার ভাবমূর্তিতে আঁচ ফেলতে চাইছেন তাঁরা।সব মিলিয়ে উত্তরপ্রদেশের রাজনীতি সোমবার থেকে নতুন মাত্রা পেতে চলেছে। তবে হ্যাঁ, আবহাওয়া দফতরের পূর্বাভাস তো কত রকমেরই থাকে। বহু সময়েই গভীর নিম্নচাপ সামান্য ঝড়ের রূপ নিয়ে মিলিয়ে যায়। কখনও আবার ক্রমশ ঝড়ের শক্তি বৃদ্ধিও হয়। পর্যবেক্ষকরা তাই বলছেন, কংগ্রেসের স্লোগান কংগ্রেসের কাছেই থাক। বরং বলা ভাল সোমবার থেকে রাজনীতির পরীক্ষায় বসছেন প্রিয়ঙ্কা। ছবি-সংগৃহীত/

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here