দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ সর্বভারতীয় স্তরে নিজেদের বিস্তৃত করার লক্ষ্যে এগোচ্ছে দল৷ তাই তৃণমূলের ওয়ার্কিং কমিটিতেও এবার জায়গা পেতে চলেছেন অন্যান্য রাজ্যের নেতারা৷ এ দিন কালীঘাটে তৃণমূলের ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠকে এমনই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে ৷ একই সঙ্গে সিদ্ধান্ত হয়েছে, দলের পরবর্তী ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠক হবে দিল্লিতে৷ যা হবে এই প্রথমবার৷

এ দিন কালীঘাটে তৃণমূলের ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠক ছিল৷ সেই বৈঠকের আগে কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দেওয়া মেঘালয়ের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী মুকুল সাংমা সহ বারো জন কংগ্রেস বিধায়ক তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে দেখা করেন৷

দলের সংবিধান বদল করতে চলেছে তৃণমূল কংগ্রেস। সর্বভারতীয় স্তরে দলকে মেলে ধরতে সেই বদলের খসড়া করার বিষয়ে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে চেয়ারপার্সন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেই। সোমবার কালীঘাটে তৃণমূল কংগ্রেসের ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠক বসেছিল। সেই বৈঠকের পরে সাংবাদিক সম্মেলনে রাজ্যসভার সাংসদ ডেরেক ও’ব্রায়েন বলেছেন, “দল বড় হচ্ছে। আমরা গ্রোয়িং পার্টি। ২০২৪ সালে গোটা দেশকে পথ দেখাবে তৃণমূল। সর্বভারতীয় স্তরে শক্তি বাড়ানোর কাজ এখন থেকেই শুরু হবে।’’

দলের ওয়ার্কিং কমিটিতে এখন ২১ জন সদস্য রয়েছেন। এই সংখ্যা আরও বাড়াতে চায় তৃণমূল। ভিনরাজ্য থেকে যাঁরা দলে আসছেন তাঁদেরও কাউকে কাউকে ওয়ার্কিং কমিটিতে জায়গা দিতে চায়।

সর্বভারতীয় তকমা পেলেও তৃণমূল মনে করছে দলের গঠনতন্ত্র, কর্মসূচি সময়পোযোগী করা প্রয়োজন। সেই দায়িত্ব ন্যস্ত করা হয়েছে নেত্রীর কাঁধেই। ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠকের পর ডেরেক বলেছেন, দলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই শেষ কথা। সর্বসম্মত ভাবে ওয়ার্কিং কমিটি এই সিদ্ধান্তই নিয়েছে।


এদিনের বৈঠকে ওয়ার্কিং কমিটির সদস্যরা ছাড়াও প্রাক্তন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী যশবন্ত সিনহা, মেঘালয়ের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী মুকুল সাংমা এবং টেনিস তারকা লিয়েন্ডার পেজ উপস্থিত ছিলেন।
যদিও তৃণমূলের সংবিধান বদল নিয়ে বিজেপি নেতা সায়ন্তন বসু বলেন, “ওই সংবিধানে নিশ্চয়ই চুরির সর্বভারতীয় রূপরেখা লেখা হবে। বাংলা হয়েছে। এবার কী ভাবে অন্য রাজ্যে হাতড়ানো যায় তার কৌশল লেখা হবে।”


সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তী বলেন, “তৃণমূলের সংবিধান খানিকটা গরুর গাড়ির হেডলাইটের মতো। ওটা যে আছে তাই জানতাম না!”

এদিন সংসদের শীত অধিবেশনের আগে কংগ্রেসের রাজ্যসভার নেতা মল্লিকার্জুন খাড়গে সমস্ত বিরোধী দলকে বৈঠকে ডেকেছিলেন। কিন্তু তৃণমূল সেখানে যায়নি। গতকালই এ ব্যাপারে স্পষ্ট করে জানিয়ে দিয়েছিলেন সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়। শুধু তাই নয়। ১২টি বিরোধী দল যে যৌথ বিবৃতি প্রকাশ করেছে এদিন, সেখানেও তৃণমূল সই করেনি। যে ছবিটা কয়েক মাস আগে বাদল অধিবেশনেও ছিল না। রাজনৈতিক মহলের মতে, তৃণমূল এতদিন মুখে বলছিল। এদিন বৈঠকে না থেকে এবং যৌথ বিবৃতিতে সই না করে আনুষ্ঠানিক ভাবে বুঝিয়ে দিল, মোদীর বিরুদ্ধে দিদি একাই লড়বেন।

সূত্রের খবর, বৈঠকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় স্পষ্ট নির্দেশ দিয়েছেন, বিজেপি-র বিরোধিতায় কোনও রকম আপোস করা হবে না৷ এক্ষেত্রে কংগ্রেসের কোনও শর্তও যে মানা হবে না, এ দিন নাম না করে তাও বুঝিয়ে দিয়েছেন তৃণমূলনেত্রী৷ এ দিনের বৈঠকের আলোচনা থেকে পরিষ্কার, কংগ্রেসকে সরিয়ে প্রধান বিরোধী দল হিসেবে জাতীয় রাজনীতিতে জায়গা করে নিতে চাইছে তৃণমূল৷ বিজেপি বিরোধিতায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই সবথেকে বিশ্বাসযোগ্য মুখ বলেও মনে করছে দল৷ তৃণমূল মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় দাবি করেন, বিজেপি থেকেও অনেকে সর্বভারতীয় ক্ষেত্রে তৃণমূলে যোগ দেওয়ার ইচ্ছে প্রকাশ করেছেন৷

বৈঠক শেষে তৃণমূল সাংসদ ডেরেক ও ব্রায়েন বলেন, ‘দল সর্বভারতীয় স্তরে বিস্তার লাভ করছে৷ তৃণমূলের ডিএনএ-তে কোনও পরিবর্তন হচ্ছে না৷ কিন্তু দলের সংবিধানে কিছু পরিবর্তন করা হবে৷’ তৃণমূল সাংসদ আরও জানান, দলের ওয়ার্কিং কমিটির পরবর্তী বৈঠক হবে দিল্লিতে৷

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here