দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ দুই দেশের প্রতিরক্ষমন্ত্রীদের আলোচনার মাঝেই বিশ্বাসঘাতকতা চীনের! অরুণাচল প্রদেশে চীনের সীমান্তের কাছ থেকে ৫ যুবককে অপহরণের অভিযোগ উঠল লালফৌজের বিরুদ্ধে। সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে গোটা বিষয়টি সামনে এসেছে।অরুণাচল প্রদেশের কংগ্রেস বিধায়ক নিনং এরিং এই দাবি করেছেন।
শনিবার টুইট করে এই কথা বলেন নিনং এরিং। টুইটে তিনি লেখেন, “শকিং খবর, আমাদের রাজ্য অরুণাচল প্রদেশের আপার সুবণসিরি জেলা থেকে পাঁচজনকে চিনের পিপলস লিবারেশন আর্মি অপহরণ করেছে বলে খবর। কয়েক মাসে আগে একই ধরনের একটা ঘটনা ঘটেছিল। পিপলস লিবারেশন আর্মি ও চিনকে একটা যোগ্য জবাব দেওয়া উচিত।” প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর দফতরকে ট্যাগ করে এই দাবি করেছন তিনি।
SHOCKING NEWS: Five people from Upper Subansiri district of our state Arunachal Pradesh have reportedly been ‘abducted’ by China’s People’s Liberation Army (PLA).
— Ninong Ering (@ninong_erring) September 4, 2020
Few months earlier,a similar incident happened. A befitting reply must be given to #PLA and #CCPChina. @PMOIndia https://t.co/8gRdGsQfId pic.twitter.com/KbDMJ3bUi2
নিজের দাবির পক্ষে আরও কয়েকটি টুইট তুলে ধরেছেন এরিং। সেখানে প্রকাশ রিংলিং নামের একজন জানিয়েছেন, তাঁর ভাই প্রসাদ রিংলিং ও আরও চারজনকে ভারত-চিন সীমান্তে সেরা-৭ থেকে অপহরণ করেছে পিপলস লিবারেশন আর্মি। যে পাঁচজনকে অপহরণের কথা বলা হয়েছে তাঁদের নামও প্রকাশ করা হয়েছে। সেগুলি হল- প্রসাদ রিংলিং, তনু বাকার, এনগারু দিরি, দংটু এবিয়া ও টোচ সিংকাম। সেইসব টুইটেও পাঁচ যুবককে উদ্ধার করার আবেদন করা হয়েছে প্রশাসনের কাছে।
এর আগেও অরুণাচল প্রদেশে ঘটেছে এই ধরনের ঘটনা। ১৯ মার্চ আপার সুবণসিরি জেলাতেই ম্যাকমোহন লাইনের কাছে আসাপিলা সেক্টর থেকে ২১ বছরের এক যুবককে অপহরণ করে পিপলস লিবারেশন আর্মি। এবার আরও পাঁচজনকে অপহরণ করা হল। সরকারকে এই ঘটনার যোগ্য জবাব দেওয়ার আর্জি জানিয়েছেন ওই কংগ্রেস বিধায়ক।এই বিষয়ে অবশ্য এখনও প্রধানমন্ত্রীর দফতর বা প্রতিরক্ষামন্ত্রকের তরফে কোনও জবাব দেওয়া হয়নি।
এখনও অবশ্য উত্তপ্ত হয়ে রয়েছে পূর্ব লাদাখের প্যাঙ্গং রেঞ্জ। প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা তথা এলএসি থেকে ২০ কিলোমিটার দূরত্বে প্যাঙ্গং হ্রদের দক্ষিণে যুদ্ধট্যাঙ্ক নামিয়েছে চিনের পিপলস লিবারেশন আর্মি। সাঁজোয়া গাড়ি নিয়ে কালা টপের নীচ দিয়ে চুসুল, থাকুং এলাকার দিকে এগোচ্ছে তারা। ভারতীয় সেনা সূত্রে এমনটাই জানা গিয়েছে।
প্যাঙ্গং লেকের দক্ষিণে কালা টপ সহ একাধিক পাহাড়ি এলাকা এখন ভারতীয় সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। সেনা সূত্র জানাচ্ছে, কালা টপের দখল নিতে না পেরে চিনের বাহিনী এখন পাহাড়ি পাদদেশগুলোতে নিজেদের যুদ্ধট্যাঙ্ক সাজাচ্ছে। মলডো থেকে হেভি ওয়েট ট্যাঙ্ক, আধুনিক অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে থাকুং-এর দিকে এগোতে দেখা গেছে তাদের।
প্যাঙ্গং লেকের দক্ষিণ প্রান্ত স্প্যানগুর গ্যাপের উঁচু পাহাড়ি এলাকায় চিন ও ভারত দুই দেশের বাহিনীই টহল দেয়। গত শনিবার চুমার এলাকা দিয়ে ভারতের নিয়ন্ত্রণাধীন এলাকায় ঢুকে আসার চেষ্টা করেছিল লাল ফৌজ। তাদের লক্ষ্য ছিল কালা টপ ও হেলমেটের দখল নিয়ে নেওয়া। চেপুজি ক্যাম্প থেকে কয়েকটি আর্মড ভেহিকলকে বের হতে দেখেই সতর্ক হয়ে যায় ভারতীয় বাহিনী। চিনের চেষ্টা রুখে দেওয়া হয়। এরপরেই চুসুলের কাছে ভারতের ট্যাঙ্ক রেজিমেন্ট প্রস্তুত হয়ে যায়। নিশানা স্থির করে বসে টি-৯০ যুদ্ধট্যাঙ্ক। এইসব দেখেই ফের নিজেদের ক্যাম্পে ফিরে যায় চিনের বাহিনী।
ভারতীয় সেনা জানাচ্ছে, এই স্প্যানগুর গ্যাপ খুবই গুরুত্বপূর্ণ এলাকা। এই রেঞ্জের মুকপারি, মগর হিল, চুসুল থেকে থাকুং পর্যন্ত পাহাড়ি এলাকা এখন ভারতীয় সেনার নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। তাই পাহাড়ি উপত্যকায় এখন নিজেদের সামরিক বহর বাড়াচ্ছে চিন। তার মাঝেই অরুণাচল থেকে এই অপহরণের ঘটনা সামনে এল।
প্রশাত রিঙলিং এর দাদা প্রকাশ রিঙলিঙের ফেসবুক পোস্টে গোটা ঘটনাটি প্রকাশ্যে আসে। সোশ্যাল মিডিয়ায় তিনি অভিযোগ করেছেন, ‘নাচো এলাকা থেকে আমার ভাই সহ মোট পাঁচজনকে চীনা সেনা অপহরণ করে নিয়ে গিয়েছে। আমি স্থানীয় প্রশাসন ও ভারত সরকারকে অনুরোধ করছি, দ্রুত ব্যবস্থা নিন। ওঁদের ফিরিয়ে আনুন।’ ওই এলাকার এসপি তরু গুসার জানান, ‘আমাদের কাছে এখনও কোনও অভিযোগ দায়ের করা হয়নি। সোশ্যাল মিডিয়া থেকে পুরো বিষয়টি জানতে পেরেছি। বিষয়টি খতিয়ে দেখছি।’ তিনি আরও জানান, সেনার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা চলছে।
শনিবার গোটা বিষয়টি নিয়ে মুখ খুলেছেন অরুণাচলের কংগ্রেস বিধায়ক নিনং এরিং। তাঁর দাবি, ‘রাশিয়ায় ভারত–চীন বৈঠকের মাঝেই পাঁচ ভারতীয় যুবককে তুলে নিয়ে গেল চীনা ফৌজ। ভুল বার্তা দিল লালফৌজ। মাছ ধরতে যাওয়ার সময় পাঁচ যুবককে অপহরণ করা হয়। এটা ঘটনা চীন আবার অশান্তি পাকাতে শুরু করেছে। প্রধানমন্ত্রী মোদি অরুণাচল প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী পেমা খান্ডুকে অনুরোধ করছি।
পাঁচ অপহৃত যুবককে ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করুন।’ কংগ্রেস বিধায়কের দাবি, ‘লাল ফৌজ এখন লাদাখ থেকে অরুণাচল প্রদেশে নজর দিতে শুরু করেছে। অশান্তি পাকাচ্ছে।’ অরুণাচল প্রদেশের বিজেপি সাংসদ ও কেন্দ্রীয় মন্ত্রী কিরেন রিজিজুকেও গোটা বিষয়টি দেখার অনুরোধ করেছেন কংগ্রেস বিধায়ক।