দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ বৈঠকেও গলল না সম্পর্কের বরফ। সীমান্ত সমস্যা নিয়ে নিজেদের অবস্থান থেকে সরে এল না চিন। বরং রাশিয়ার মাটিতে ভারতের সঙ্গে বৈঠকের পরই চীনের হুঙ্কার, “এক ইঞ্চি জমিও ছাড়ব না।’‌ এমনকী, লাদাখ সীমান্তে অশান্তির দায় ভারতের ঘাড়ে চাপাল চিন। শুক্রবার রাশিয়ার মস্কোতে ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং ও চিনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ওয়েই ফেংগের মধ্যে বৈঠকের পরের দিনই বেজিংয়ের তরফে বিবৃতি দিয়ে জানানো হল, লাদাখে সীমান্ত নিয়ে ভারত ও চিন, দু’দেশের মধ্যে যে সমস্যা হয়েছে তার জন্য সম্পূর্ণভাবে দায়ী ভারত।

শনিবার চিনের তরফে জারি করা এই বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “ভারত ও চিন সীমান্তে উত্তেজনার কারণটা পরিষ্কার। এর জন্য সম্পূর্ণভাবে দায়ী ভারত। চিন নিজেদের জমির এক ইঞ্চিও ছাড়বে না। চিনের সেনাবাহিনী দেশের সার্বভৌমত্য ও সীমান্ত রক্ষা করার ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসী, সমর্থ ও তৈরি।”

এই বিবৃতিতে সীমান্ত সমস্যা মেটানোর বিষয়ে ভারতকে এগিয়ে আসার দাবি জানিয়েছে চিন। বলা হয়েছে, “চিনের প্রেসিডেন্ট শি জিংপিং ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর মধ্যে যা আলোচনা হয়েছিল তা বাস্তবায়িত করুক ভারত এবং আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে এই সমস্যার সমাধান হোক। দু’দেশেরই লক্ষ্য থাকা উচিত নিজেদের মধ্যে সম্পর্কের উন্নতি ঘটানো। স্থিতিশীলতা, শান্তি ও সীমান্তের সামগ্রিক অবস্থা উন্নত করতে উদ্যোগী হওয়া উচিত দুই দেশের।”

এদিকে লাদাখে এখনও উত্তেজনা রয়েছে। প্যাঙ্গং লেকের দক্ষিণ প্রান্ত স্প্যানগুর গ্যাপের উঁচু পাহাড়ি এলাকায় চিন ও ভারত দুই দেশের বাহিনীই টহল দেয়। গত শনিবার চুমার এলাকা দিয়ে ভারতের নিয়ন্ত্রণাধীন এলাকায় ঢুকে আসার চেষ্টা করেছিল লাল ফৌজ। তাদের লক্ষ্য ছিল কালা টপ ও হেলমেটের দখল নিয়ে নেওয়া। চেপুজি ক্যাম্প থেকে কয়েকটি আর্মড ভেহিকলকে বের হতে দেখেই সতর্ক হয়ে যায় ভারতীয় বাহিনী। চিনের চেষ্টা রুখে দেওয়া হয়।

এরপরেই চুসুলের কাছে ভারতের ট্যাঙ্ক রেজিমেন্ট প্রস্তুত হয়ে যায়। নিশানা স্থির করে বসে টি-৯০ যুদ্ধট্যাঙ্ক। এইসব দেখেই ফের নিজেদের ক্যাম্পে ফিরে যায় চিনের বাহিনী। ভারতীয় সেনা জানাচ্ছে, এই স্প্যানগুর গ্যাপ খুবই গুরুত্বপূর্ণ এলাকা। এই রেঞ্জের মুকপারি, মগর হিল, চুসুল থেকে থাকুং পর্যন্ত পাহাড়ি এলাকা এখন ভারতীয় সেনার নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। তাই পাহাড়ি উপত্যকায় এখন নিজেদের সামরিক বহর বাড়াচ্ছে চিন।

লাদাখ সফরে গিয়ে ভারতের সেনাপ্রধান মনোজ মুকুন্দ নারাভানে বলেছেন, চীনকে আটকাতে সবরকমভাবে প্রস্তুত ভারতের বাহিনী। প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখায় উত্তেজনা রয়েছে ঠিকই, তবে ভারত তার নতুন সামরিক কৌশল নিয়েছে। বায়ুসেনা প্রধান আর কে এস ভাদুরিয়া গতকালই গোটা পরিস্থিতি সরেজমিনে দেখতে উত্তর-পূর্ব এয়ার ফোর্স বেসে গিয়েছিলেন। জানা গেছে, আকাশসীমাকে সুরক্ষিত করতে ইতিমধ্যেই এয়ার ডিফেন্স মিসাইল সিস্টেম মোতায়েন করেছে ভারত। প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখায় চক্কর কাটছে ভারতীয় বায়ুসেনার একাধিক কমব্যাট ফাইটার এয়ারক্রাফ্ট।

শুক্রবার রাশিয়ার মস্কোয় সাংহাই কোঅপারেশন অর্গানাইজেশন (এসসিও)-এর বার্ষিক সম্মেলনে চিনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ওয়েই ফেংগের সঙ্গে বৈঠকে বসেন ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং। চিনের তরফেই এই বৈঠকের আর্জি জানানো হয়েছিল। নৈশভোজের আমন্ত্রণে সম্মতি জানায় ভারত। ভারতীয় সময় রাত সাড়ে ৯টা নাগাদ শুরু হওয়া এই বৈঠকে প্রতিরক্ষাসচিব অজয় কুমার এবং রাশিয়ায় ভারতের রাষ্ট্রদূত ডি বি ভেঙ্কটেশ বর্মাও উপস্থিত ছিলেন। প্রায় আড়াই ঘণ্টা ধরে চলে বৈঠক।

সেখানেই চিনের প্রতিরক্ষামন্ত্রীর উদ্দেশে রাজনাথ সিং বার্তা দেন, সীমান্তে শান্তি বজায় রাখতে গেলে সবচেয়ে আগে দরকার বিশ্বাস। দুই দেশই শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানে তখনই আসবে যখন বিশ্বাসের মর্যাদা রক্ষা হবে। আগ্রাসন দেখিয়ে জবরদস্তি অনুপ্রবেশ বন্ধ হবে, আন্তর্জাতিক নীতির সম্মান রক্ষিত হবে এবং বিশ্বাস রেখেই দুই দেশ শান্তির শপথ নেবে। তবে বৈঠকের পর চিনের এই বিবৃতি সমস্যা আরও বাড়াবে বলেই মনে করছে কূটনৈতিক মহল।

প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখায় শান্তি ও সুস্থিতি যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ফিরিয়ে আনতে সার্বিকভাবে সেনা অপসারণের জন্য কূটনৈতিক ও সামরিক বাহিনী স্তরে দু’দেশের আলাপ আলোচনা চালিয়ে যাওয়াটাই এখন সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। বর্তমান পরিস্থিতি দায়িত্ব নিয়ে সামলানো উচিত। সীমান্তে উত্তেজনা ছড়াতে পারে এমন কোনও পদক্ষেপ দু’দেশের কারোরই করা উচিত নয়।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here