দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ শনিবার বঙ্গে ভোট চতুর্থী। চতুর্থ দফায় রাজ্যের মোট ৫টি জেলায় ৪৪টি আসনে ভোটগ্রহণ। যার মধ্যে রয়েছে হাওড়া, হুগলি, দক্ষিণ ২৪ পরগনার মতো দক্ষিণবঙ্গের জেলা।
প্রথমবার ভোট দিলে অনেক কেন্দ্রে উপহার হিসেবে তরুণ ভোটারদের হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে চারাগাছ। কিন্তু বাংলার চতুর্থদফার ভোটে তরুণ ভোটার প্রথমবার ভোট দিতে এসে পেলেন গুলির ক্ষত। মতদান করতে এসে হারাতে হল প্রাণ। শনিবার ঘটনাটি ঘটেছে কোচবিহারের শীতলকুচিতে। এদিকে এই তরুণের মৃত্যুর পর তিনি কোন দলের সমর্থক ছিলেন তা নিয়ে চলছে টানাপোড়েন।
মৃত যুবকের পরিবারের দাবি, তিনি বিজেপি-র সদস্য ছিলেন। এদিকে, স্থানীয় তৃণমূলের দাবি ১৮ বছরের ওই তরুণ আদপে তৃণমূলের সমর্থক ছিলেন। পুরো ঘটনায় অভিযোগ উঠেছে তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীদের দিকে। যদিও যাবতীয় অভিযোগ অস্বীকার করেছে তৃণমূল।
উত্তর ও দক্ষিণবঙ্গ মিলিয়ে পাঁচ জেলার ৪৪টি আসনে ভোটগ্রহণ চলছে। মোট পনেরো হাজার নশো চল্লিশটি কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ প্রক্রিয়া চলবে সন্ধে সাড়ে ৬টা পর্যন্ত।
হাওড়া, হুগলি, দক্ষিণ ২৪ পরগনা, আলিপুরদুয়ার ও কোচবিহারে ভোটগ্রহণ শুরু হয়ে গেছে। হাওড়ার ৯টি আসনে, দক্ষিণ ২৪ পগনার ১১টি আসনে, হুগলির ১০ আসনে, আলিপুরদুয়ারের পাঁচ ও কোচবিহারের ৯টি আসনে ভোট আজ।
হাওড়ার যে ৯টি আসনে আজ ভোটগ্রহণ- বালি, হাওড়া উত্তর, হাওড়া মধ্য, শিবপুর, হাওড়া দক্ষিণ, সাঁকরাইল, পাঁচলা, উলুবেড়িয়া পূর্ব এবং ডোমজুড়।
দক্ষিণ ২৪ পরগনার যে ১১টি আসনে ভোটগ্রহন হচ্ছে-সোনারপুর দক্ষিণ, ভাঙড়, কসবা, যাদবপুর, সোনারপুর উত্তর, টালিগঞ্জ, বেহালা পূর্ব, বেহালা পশ্চিম, মহেশতলা, বজবজ এবং মেটিয়াবুরুজ।
হুগলির ১০টি আসন হল- উত্তরপাড়া, শ্রীরামপুর, চাঁপদানি, সিঙ্গুর, চন্দননগর, চুঁচুড়া, বলাগড়, পাণ্ডুয়া, সপ্তগ্রাম এবং চণ্ডীতলা।
আলিপুরদুয়ারের ৫টি আসন হল-কুমারগ্রাম, কালচিনি, আলিপুরদুয়ার, ফালাকাটা ও মাদারিহাট।
কোচবিহারের ৯টি আসন হল- মেখলিগঞ্জ, মাথাভাঙা, কোচবিহার উত্তর, কোচবিহার দক্ষিণ, শীতলকুচি, সিতাই, দিনহাটা, নাটাবাড়ি ও তুফানগঞ্জ।
সকাল ৭টা থেকে ভোটগ্রহণ শুরু হওয়ার পরে বিক্ষিপ্ত অশান্তির খবর পাওয়া গেছে নানা জায়গা থেকে।
উত্তপ্ত কোচবিহারের শীতলকুচি চলল গুলি। শীতলকুচিতে গুলিবিদ্ধ হয়ে মৃত ১। মাথা ছুঁয়ে গুলি বেরিয়ে গেছে টুলু মিয়া নামক এক তৃণমূল কর্মীর। অভিযোগ বিজেপি-র দিকে। এলাকাজুড়ে ব্যপক উত্তেজনা। অন্যদিকে বিজেপি কর্মীদের উপর হামলার অভিযোগ তৃণমূলের বিরুদ্ধে। এক বিজেপি কর্মীর জখম হওয়ারও খবর মিলেছে। প্রতিবাদে রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখাচ্ছে বিজেপি কর্মী ও সমর্থকরা। ঘটনাস্থলে পৌঁছেছে বিশাল পুলিশবাহিনী ও কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানরা।
বিজেপি কর্মীর রহস্যমৃত্যু। ঘটনাটি ঘটেছে উলুবেরিয়ায়।
কচুয়া ১৫০ নং বুথে ইভিএম খারাপের অভিযোগ। দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করে থাকার পর ভোট দিতে পারেননি অনেকেই।
ভোট শুরুর আগে বেহালা পূর্ব বিধানসভার রামজীবনপুর এলাকায় বিজেপি কর্মীদের বাড়ি লক্ষ্য করে ইট, পাথর ছোড়ার অভিযোগ উঠেছে। গাড়ি ভাঙচুর করা হয়েছে। অভিযোগের তির শাসক দলের দিকে।
অন্যদিকে, সকাল থেকে অশান্তি চলছে যাদবপুর এলাকাতেও। শহিদ স্মৃতি কলোনিতে যুবশক্তি সঙ্ঘের বুথে বিজেপি এজেন্টের মুখ ফাটিয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে তৃণমূলের বিরুদ্ধে।শীতলকুচির ঘটনায় রিপোর্ট তলব নির্বাচন কমিশনের।
চুঁচুড়ায় আশাকর্মীরা ভোট প্রভাবিত করছেন, বিস্ফোরক লকেট চট্টোপাধ্যায়।গান্ধী কলোনীর ভারতী বালিকা বিদ্যালয়ে বাবুল সুপ্রিয়। অভিযোগ, সেখানে বিজেপি-র পোলিং এজেন্টকে বসতে দেওয়া হয়নি।
ভোটগ্রহণ ঘিরে সাতসকালেই তৃণমূল এবং বিজেপি সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে ব্যাপক উত্তেজনা ছড়াল বেলুড়ের লালবাবা কলেজে। চলে হাতাহাতি, ভাংচুর। পরে পুলিশ এবং কেন্দ্রীয় বাহিনী এসে পরিস্থিতি সামাল দেয়।
বালি বিধানসভা কেন্দ্রের ৬৪ নম্বর বুথ রয়েছে লালবাবা কলেজে। ভোটগ্রহণ শুরু হওয়ার আগে সেখানে ধুন্ধুমার বাধে বলে জানা গিয়েছে। বিজেপি-র অভিযোগ, তাদের এজেন্টকে বসতে দেওয়া হয়নি।
তবে তৃণমূলের দাবি, ভোটগ্রহণ শুরু হওয়ার আগে মক পোলিং চলছিল। সেইসময় ইভিএম-এ সমস্যা ধরা পড়ে। তা নিয়ে প্রশ্ন তুলতেই ঝামেলা শুরু করেন বিজেপি সমর্থকরা। বচসা থেকে শুরু হয় হাতাহাতি।
গোটা ঘটনায় এলাকায় উত্তেজনা ছড়ালে, তড়িঘড়ি পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে নামে পুলিশ ও কেন্দ্রীয় বাহিনী। দু’পক্ষকেই বুথ থেকে বার করে দেওয়া হয়। তার পরই শুরু হয় ভোটগ্রহণ।
সোনারপুর দক্ষিণে কালিকাপুর রাম কমল বিদ্যাপীঠ ২৩৭ এ বুথে ইভিএম মেশিন খারাপ। তার জন্য ক্ষোভ উগরে দিচ্ছেন ভোটাররা। ভোটকেন্দ্রে তৃণমূল প্রার্থী লাভলী মৈত্র।
কসবায় বসতে দেওয়া হচ্ছে না বাম এজেন্টদের। ১০৭ নম্বর বুথ বিজয়নগর হাইস্কুলে উত্তেজনা।
বেহালা পশ্চিমের ১২৭ নম্বর ওয়ার্ডের সরসুনা স্যাটেলাইট টাউনশিপ এলাকায় ইভিএম খারাপের অভিযোগ। দীর্ঘক্ষণ লাইনে দাঁড়িয়ে ভোটাররা। বয়স্করা অনেকেই ভোট না দিয়ে ফিরে যাচ্ছেন এমনটাই অভিযোগ ওঠে৷
সোনারপুর দক্ষিণের হাসানপুর বিদ্যাধরপুর জুনিয়র হাইস্কুলে লম্বা লাইন ভোটারদের। এই বিধানসভার বিজেপি প্রার্থী অঞ্জনা বসু সকাল থেকে বিভিন্ন বুথে ঘুরছেন।
হাওড়া উত্তরের গোলাবাড়িতে বোমাবাজি। পুরো এলাকা ঘিরে ফেলে পুলিশ। বহুতল থেকে ছোঁড়া হচ্ছে বোমা।
সোনারপুর উত্তর ১৪১ বুথ, নফর চন্দ্র স্কুলে দির্ঘক্ষণ অচল থাকে ইভিএম।
চতুর্থ দফায় ৯০০ কোম্পানি বাহিনীকে ব্যবহার করা হয়েছে। সরাসরি বুথ পাহারায় মোতায়েন করা হয়েছে ৭৯৩ কোম্পানি বাহিনী। বাকি বাহিনীকে ব্যবহার করা হবে ভোট পরবর্তী কাজের জন্য। কোচবিহার ও দক্ষিণ ২৪ পরগনায় যে পরিমাণ বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে তা নজিরবিহীন।
নির্বাচনী নির্ঘণ্টেই স্পষ্ট হয়েছিল, দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার জন্য বিশেষ ব্যবস্থা নিচ্ছে কমিশন। কারণ গত পঞ্চায়েত থেকে লোকসভা—এই জেলায় ব্যাপক ভোট লুঠের অভিযোগ তুলেছিল বিরোধীরা। এবার দেখা যায়, একমাত্র এই দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলাতেই তিন দফায় ভোট করাচ্ছে কমিশন।
শনিবার দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার ১১টি আসনে ভোটগ্রহণ ভাঙড়, বজবজ, মহেশতলার মতো আসনে ভোট রয়েছে শনিবার। যা রাজনৈতিক ভাবে অত্যন্ত স্পর্ষকাতর বলেই মত অনেকের। তা ছাড়া কলকাতা লাগোয়া যাদবপুর, কসবা, বেহালার দুটি আসনেও ভোট হবে শনিবার।
দেখা যাচ্ছে বারুইপুর জেলা পুলিশের অন্তর্গত কেন্দ্রগুলির জন্য ৪৫ কোম্পানি, কলকাতা পুলিশের আওতাধীন দক্ষিণ ২৪ পরগনার যে যে এলাকায় ভোট রয়েছে তার জন্য ১০১ কোম্পানি বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। ডায়মন্ড হারবার জেলা পুলিশের অন্তর্গত এলাকায় মোতায়েন করা হয়েছে ৪৫ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী।