‘মান্থা’র প্রভাবে ঝেঁপে বৃষ্টি কলকাতায়! ফুঁসছে দিঘা- মন্দারমণির সমুদ্র , পর্যটকদের সমুদ্রে যেতে নিষেধাজ্ঞা

0
48

পূর্বাভাস আগেই ছিল, বুধবার বেলা গড়াতেই তা সত্যি হল। ঘূর্ণিঝড় ‘মান্থা’র  প্রভাবে কলকাতার বিস্তীর্ণ এলাকায় নামল ঝেঁপে বৃষ্টি। সকাল ১০টা, সপ্তাহের এই সময়টা মূলত অফিস টাইম, বহু মানুষ থাকেন রাস্তায়। হঠাৎ বৃষ্টিতে তাই অনেকেই আটকে পড়েছেন। ফলে স্বাভাবিকভাবেই তাঁদের গন্তব্যে পৌঁছাতেও দেরি হচ্ছে। তবে আবহাওয়া দফতর জানিয়ে দিয়েছে, আজ সারাদিন আবহাওয়া এমনই থাকবে। তাই বাড়ি থেকে বেরোনোর সময় সঙ্গে ছাতা বা রেইনকোট রাখুন।

অতি শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় ‘মান্থা’  মঙ্গলবার রাতেই অন্ধ্রপ্রদেশের উপকূলে আছড়ে পড়ে। আবহাওয়া দফতর জানায়, কাকিনাড়ার কাছাকাছি মছলিপত্তনম ও কলিঙ্গপত্তনমের মধ্যে ল্যান্ডফল প্রক্রিয়া শুরু হয় এবং পরবর্তী তিন থেকে চার ঘণ্টা ধরে চলে তার তাণ্ডব। ঝড়ের সময় বাতাসের গতি ঘণ্টায় ৯০ থেকে ১০০ কিলোমিটার। দুর্যোগে প্রাণহানিও হয়েছে। অন্ধ্রপ্রদেশে  জারি হয়েছে হাই অ্যালার্ট। তবে ‘মান্থা’ ইতিমধ্যেই শক্তি হারিয়ে সাধারণ ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়েছে। যার পরোক্ষ প্রভাবে বাংলার বেশ কিছু জেলায় বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে।

অন্যদিকে , ঘূর্ণিঝড় ‘মান্থা’র প্রভাবে অশান্ত হয়ে উঠেছে পূর্ব মেদিনীপুরের উপকূল এলাকা। মঙ্গলবার রাত থেকেই জেলার বিভিন্ন অংশে শুরু হয়েছে ভারী বৃষ্টিপাত। বুধবার সকাল পর্যন্ত অব্যাহত রয়েছে দফায় দফায় বৃষ্টির প্রবল দাপট। কাঁথি, রামনগর, হেঁতালিয়া, নন্দীগ্রাম, তমলুক-সহ একাধিক এলাকায় বৃষ্টির জেরে নিম্নাঞ্চলগুলিতে জল জমতে শুরু করেছে। তমলুক শহরে মঙ্গলবার বিকেলেই প্রবল হাওয়ায় জগদ্ধাত্রী পুজোর আলোর গেট ভেঙে পড়ে। বুধবার সকাল থেকে আবারও বৃষ্টির তীব্রতা বাড়ায় জনজীবন ব্যাহত হয়েছে। 

দিঘা, তাজপুর ও মন্দারমণি-সহ সমুদ্রতীরবর্তী এলাকাগুলিতে বুধবার সকাল থেকেই চলছে প্রশাসনের মাইকিং। পর্যটকদের সমুদ্রে নামার ক্ষেত্রে কড়া নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। নিরাপত্তার স্বার্থে প্রতিটি ঘাটে দড়ি বেঁধে দেওয়া হয়েছে এবং বেশ কয়েকটি ঘাটে ব্যারিকেডও বসানো হয়েছে। সমুদ্রের জল ফুলে উঠেছে, উত্তাল ঢেউ আছড়ে পড়ছে তীরবর্তী অঞ্চলে। আবহাওয়া দপ্তরের পূর্বাভাস অনুযায়ী, আগামী ২৪ ঘণ্টা প্রবল বৃষ্টি ও ঝোড়ো হাওয়া অব্যাহত থাকতে পারে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে ইতিমধ্যেই বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীকে প্রস্তুত রাখা হয়েছে। নন্দীগ্রাম, খেজুরি, কাঁথি ও রামনগরের নিচু এলাকাগুলিতে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। পর্যটকদের আপাতত হোটেলের ভিতরেই অবস্থান করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

ঘূর্ণিঝড় ‘মান্থা’ বর্তমানে বঙ্গোপসাগরের উপর সক্রিয় রয়েছে। এর প্রভাবে উপকূল জুড়ে ঘন কালো মেঘ, দফায় দফায় বজ্রবিদ্যুৎ-সহ বৃষ্টি চলছে। জেলা প্রশাসন সতর্কতা জারি করেছে। এলাকার বাসিন্দাদের অযথা বাইরে না বেরনোর আবেদন জানানো হয়েছে। ঝড়বৃষ্টির কারণে ফসলেরও ক্ষতির আশঙ্কা তৈরি হয়েছে বলে জানিয়েছেন কৃষকরা। মৎস্যজীবীদের সমুদ্রে মাছ ধরতে যেতে বারণ করা হয়েছে।

অন্ধ্রপ্রদেশের উপকূলে আছড়ে পড়েছে ঘূর্ণিঝড় মান্থা। প্রভাব পড়তে শুরু করেছে রাজ্যেও। ভারী বৃষ্টির ফলে পাকা ধান নষ্টের আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। বুধবার সকাল থেকে দক্ষিণ ২৪ পরগনায় শুরু হয়েছে বৃষ্টি। সঙ্গে বইছে ঝোড়ো হাওয়া। মৎস্যজীবীদের সমুদ্রে যেতে নিষেধ করা হয়েছে। প্রশাসনের তরফে প্রতিটি মহকুমা ও ব্লকস্তরে কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে এবং পরিস্থিতির উপর নজর রাখা হচ্ছে।

এই অকাল বৃষ্টিতে মাথায় হাত ধান চাষীদের। দক্ষিণ ২৪ পরগনার উপকূল তীরবর্তী এলাকায় বোরো ধান ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। দক্ষিণ ২৪ পরগনার উপকূল তীরবর্তী এলাকার সাগর, নামখানা, পাথরপ্রতিমা, গোসাবা, ক্যানিং, জয়নগর, ডায়মন্ড হারবার-সহ একাধিক জায়গায় এই সময় বোরো ধান চাষ করে কৃষকেরা। বৃষ্টির ফলে ধান গাছের গোড়াতে জমতে শুরু করেছে জল আর এই জমা জলের কারণে মাঠে নষ্ট হবে ফসল এমনটাই আশঙ্কা এলাকাবাসীদের। ঘূর্ণিঝড়ের ফলে উপকূল তীরবর্তী এলাকায় মাটির নদী বাঁধগুলি ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে এলাকা প্লাবিত হওয়ার দুশ্চিন্তায় দিন কাটাচ্ছে এলাকার মানুষেরা। 

এ বিষয়ে সাগরদ্বীপের বাসিন্দা প্রণব সরকার বলেন, “ইতিমধ্যেই ঘূর্ণিঝড় মান্থার প্রভাব পড়তে শুরু করে দিয়েছে আমাদের এই এলাকায়। অতিবৃষ্টির কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে ধান চাষ। আমাদের দুশ্চিন্তার অন্যতম কারণ মাটির নদীবাঁধ। সমুদ্র যদি উত্তাল হয়ে যায় তাহলে মাটির বাঁধ ভেঙে এলাকা প্লাবিত হতে পারে। নোনা জল ঢুকে গ্রামের ফসল নষ্ট হয়ে যাবে। ইতিমধ্যে ব্লক প্রশাসনের পক্ষ থেকে মাইকিং করে মৎস্যজীবীদের সমুদ্রে যেতে নিষেধ করা হয়েছে।

মৎস্যজীবীরা উপকূলে ফিরে আসছেন। সরকারের কাছে আমাদের অনুরোধ ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক এবং মৎস্যজীবীদের পাশে দাঁড়ান রাজ্য সরকার”।

কৃষক কার্তিক বিশ্বাস বলেন, “ধান গাছের প্রচুর ক্ষতি হয়েছে। অতিবৃষ্টির কারণে মাঠের ধান মাঠেই নষ্ট হয়েছে। ধান গাছের গোঁড়াতে জমা জল থাকার কারণে নষ্ট হয়েছে ফসল। কি হবে বুঝতে পারছি না।”

আবহাওয়া দপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, বুধবার দক্ষিণবঙ্গের দক্ষিণ ২৪ পরগনা, পূর্ব মেদিনীপুর, পশ্চিম মেদিনীপুর, ঝাড়গ্রামে ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস রয়েছে। এই চার জেলায় হলুদ সর্তকতা জারি রয়েছে। পাশাপাশি কলকাতা-সহ দক্ষিণবঙ্গের সব জেলায় বজ্রবিদ্যুৎ-সহ হাল্কা থেকে মাঝারি বৃষ্টির পূর্বাভাস রয়েছে। সঙ্গে ঘণ্টায় ৩০ থেকে ৪০ কিমি বেগে দমকা ঝোড়ো হাওয়া বইতে পারে। জারি রয়েছে হলুদ সর্তকতা।

আগামিকাল বৃহস্পতিবার বীরভূম, মুর্শিদাবাদ, পূর্ব বর্ধমান, পুরুলিয়ায় ভারী বৃষ্টির হলুদ সতর্কতা রয়েছে। এই জেলাগুলিতে ৭ থেকে ১১ সেন্টিমিটার বৃষ্টিপাত হতে পারে। কলকাতা সহ দক্ষিণবঙ্গের বাকি জেলাগুলিতে বজ্রবিদ্যুৎ সহ হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টি, দমকা ঝোড়ো হাওয়া বইতে পারে। 

Previous articleMatua Community on CAA: হিন্দুত্বের কার্ডে নাগরিকত্বের দাওয়াই! মতুয়া কার্ডের জন্য দিতে হচ্ছে ১০০ টাকা, উঠছে প্রশ্ন
Next articleIndia’s Got Talent বলিউডের হাওয়া লেগেছে বনগাঁর মেয়ের !  ইন্ডিয়া গট ট্যালেন্টের মঞ্চে অন্তরা: দেখুন ভিডিও

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here