দেশের সময় ওয়েবডেস্ক: তৃণমূল কংগ্রেসের আনন্দ সাড়ে পাঁচঘণ্টাও স্থায়ী হল না। বৃহস্পতিবার সকালে ভাটপাড়া পুরসভায় আস্থা ভোটের পর সবুজ আবিরে উৎসব শুরু করে দিয়েছিল শাসকদল। কিন্তু বিকেলেই কলকাতা হাইকোর্ট ওই আস্থা ভোট খারিজ করে দিল। জানিয়ে দিল, ভাটপাড়ার ভবিষ্যৎ পুর আইন মেনে ঠিক হবে। পরবর্তী পদক্ষেপ কী হবে তা আদালত বলে দেবে।
ব্যারাকপুরের বিজেপি সাংসদ অর্জুন সিং-এর দুর্গ বলে খ্যাত ভাটপাড়া পুরসভায় বড় ধাক্কা খেতে হল বিজেপিকে। বৃহস্পতিবার ছিল ভাটপাড়া পুরসভার আস্থা ভোট। সেখানে বিজেপির কোনও কাউন্সিলর যাননি। অন্যদিকে বোর্ড দখলের ম্যাজিক ফিগারের থেকে বেশি সংখ্যক তৃণমূল কাউন্সিলর এক্সিকিউটিভ অফিসারের ডাকা বৈঠকে উপস্থিত হন। ১৯-০ ব্যবধানে জিতে ভাটপাড়া পুরসভার দখল নেয় শাসকদল।
তখনই অর্জুন বলেছিলেন, আদালতে দেখা হবে তৃণমূলের সঙ্গে। ব্যারাকপুরের সাংসদ আরও বলেন, “আগামী ২০ জানুয়ারি চেয়ারম্যান সৌরভ সিং আস্থা ভোটের জন্য বৈঠক ডেকেছেন। তার আগে এই ধরনের বৈঠক পুর আইন অনুযায়ী বেআইনি।” হলও তাই।
ভাটপাড়া পুরসভা দখলে নিতে বিশেষ পরিশ্রম করতে হয়নি বিজেপিকে। অর্জুন সিং-এর দাপটে জোড়াফুল বদলে রাতারাতি পদ্মফুল হয়ে গিয়েছিল। লোকসভা ভোটে দাঁড়ানোর সময়ে নিজে চেয়ারম্যান পদ ছেড়ে সেই চেয়ারে বসিয়ে এসেছিলেন ভাইপো সৌরভ সিংকে। কিন্তু হালিশহর, কাঁচরাপাড়া, গারুলিয়া, বনগাঁর মতো অর্জুন-দুর্গের ভাটপারা পুরসভাও পুনর্দখলে মরিয়া হয়ে নামে তৃণমূল।
ভাটপাড়া পুরসভার মোট ওয়ার্ড সংখ্যা ৩৫টি। অর্জুন সিং সাংসদ হওয়ার পর কাউন্সিলর পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন। মৃত্যু হয়েছে ভীম সিং নামের এক কাউন্সিলরের। একটি ওয়ার্ড দখলে রয়েছে বামেদের। ফলে এই মুহূর্তে বোর্ড গড়তে দরকার ১৭ জন কাউন্সিলরের সমর্থন। পাঁচজন কাউন্সিলর দল বদল করেননি। তাঁরা তৃণমূলেই রয়ে গিয়েছিলেন। মাঝে পুরনো দলে ফেরেন ১২জন কাউন্সিলর। ফলে যে সংখ্যা দরকার বোর্ড গড়ার জন্য সেটা আগেই জোগাড় করে ফেলেছিলেন জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক, পার্থ ভৌমিকরা। পরে আরও দু’জন গেরুয়া সঙ্গ ত্যাগ করে ফিরে আসেন তৃণমূলে। এদিন সকালে সেই ১৯ জনকে নিয়েই ভাটপাড়া দখল করল তৃণমূল।
কিন্তু আগেই সৌরভ সিং অনাস্থা প্রস্তাবের জন্য বৈঠকের তারিখ ঘোষণা করেছেন। বলা হয়েছে ২০ জানুয়ারি ওই বৈঠক হবে। সেখানেই ঠিক হয়ে যাবে কার পক্ষে কত সংখ্যা। কিন্তু অত দিন অপেক্ষা করতে রাজি ছিল না তৃণমূল। তিন কাউন্সিলর চিঠি দিয়ে আস্থা ভোট নিতে বলেন এক্সিকিউটিভ অফিসারকে। তিনিও ডেকে দেন। কিন্তু বিজেপির বক্তব্য, চেয়ারম্যান হিসেবে সৌরভ সিং যখন তারিখ ঘোষণা করেছেন, তখন আর কেউ অন্য দিন বৈঠক ডাকতে পারেন না।
যদিও বিচারপতি অরিন্দম সিনহা এদিনের ফলাফল ও বৈঠক খারিজ করে দেওয়ার পর তৃণমূলের তরফে প্রস্তুতি শুরু হয়েছে ডিভিশন বেঞ্চে যাওয়ার।