দেশের সময়, বনগাঁ: প্রায় এক বছর হয়ে গেল, মালিকেরা বেতন বাড়াচ্ছেন না। অথচ কারখানায় উৎপাদন হচ্ছে। তবু মালিকেরা করোনা পরিস্থিতির কথা বলে বেতন বাড়াচ্ছেন না। অস্বাভাবিক হারে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির ফলে চিরুনি শ্রমিকেরা অসহায় অবস্থায় দিন কাটাচ্ছেন। বেতন বৃদ্ধি না হলে না খেয়ে থাকতে হবে তাঁদের পরিবারের সদস্যদেরকে,অতএব বড় সমস্যার সম্মুখিন হয়ে পড়েছেন তাঁরা তাই এক রকম বাধ্য হয়েই বেতন বৃদ্ধির দাবিতে সোমবার থেকে বনগাঁর চিরুনি শ্রমিকেরা কর্মবিরতি শুরু করলেন বলে জানিয়েছেন বনগাঁ সেলুলয়েড ওয়াকার্স ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক রঞ্জন সেন ৷এর ফলে উৎপাদন সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে গেল।’’
রঞ্জন বাবুর কথায়,‘‘সোমবার থেকে শ্রমিকেরা কর্মবিরতি শুরু করেছেন। চলবে ২২ ডিসেম্বর পর্যন্ত। এই সময়ের মধ্যে আমাদের বেতন বৃদ্ধির দাবি মালিকেরা না মানলে কর্মবিরতির দিন পরবর্তী সময়ে আরও বাড়ানো হবে।’’
চিরুনি শ্রমিকরা জানিয়েছেন, দীর্ঘ কয়েক মাস ধরেই চিরুনি কারখানায় স্বাভাবিক কাজকর্ম শুরু হয়েছে। উৎপাদন হচ্ছে। অথচ মালিক পক্ষ তাঁদের বেতন বাড়াচ্ছেন না।
বেতন বৃদ্ধির দাবিতে গত ফেব্রুয়ারি মাসে শ্রমিকেরা প্রথম রাস্তায় নামেন। পরবর্তী সময়ে করোনা পরিস্থিতি ও লকডাউনের কারণে কারখানা বন্ধ হয়ে যায়। উৎপাদন বন্ধ হয়। শ্রমিকদের কর্মসূচি থেমে গিয়েছিল। কয়েক মাস হল ফের কারখানা চালু হয়েছে। উৎপাদন শুরু হয়েছে। শ্রমিকদের দাবি, এরপরেও তাঁদের বেতন বাড়ানো নিয়ে মালিকেরা কোনও রকম ব্যাবস্থা নিচ্ছেন না।
শ্রমিক সংগঠন সূত্রে জানা গিয়েছে, বনগাঁয় এখন ছোট-বড় মিলিয়ে চিরুনি কারখানার সংখ্যা ১৩৫টি। সেখানে কয়েকশো শ্রমিক কাজ করেন। রঞ্জন বাবু জানিয়েছেন, রোজগার না থাকায় গত এক বছরে প্রায় ১০০ জন শ্রমিক কাজ ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়েছেন।
করোনা পরিস্থিতি এবং লকডাউনের কারণে বনগাঁর চিরুনি শিল্প কার্যত এখন ধুঁকছে। বাইরের রাজ্যগুলিতে আগের মতো চিরুনি পাঠাতে পারছেন না বলে জানিয়েছেন মালিকেরা। সে কারণে রোজগার কমেছে।
চিরুনি শ্রমিক সুজয় ঘোষ,বিমল ঘোষেরা বলেন, লকডাউনে কয়েক মাস কাজ ছিল না। এখনও যা পরিস্থিতি, সংসার চালানো আর সম্ভ হচ্ছে না। বেতন না বাড়লে পথে বসার মতো অবস্থা হবে। শ্রমিকেরা কাজের ভিত্তিতে সপ্তাহে ৯০০-১৬০০ টাকা বেতন পান। শ্রমিকদের দাবি, বেতন বাড়িয়ে ১৪০০-২২০০ টাকা করতে হবে।
বনগাঁ সেলুলয়েড ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সূত্রে শ্রমিকদের বেতন বৃদ্ধির দাবির বিষয়ে জানাগিয়েছে, চুক্তি অনুযায়ী প্রতি দু’ই থেকে তিন বছর অন্তর শ্রমিকদের বেতন বৃদ্ধি করা হয়। গত জানুয়ারি মাসে পুরনো চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়েছে। নতুন করে বেতন বৃদ্ধি নিয়ে শ্রমিকদের সঙ্গে আলোচনা শুরু হয়েছিল। এর মধ্যে লকডাউন শুরু হয়ে যায়। কারখানা বন্ধ হয়। কয়েক মাস আগে উৎপাদন শুরু হলেও বাজারের অবস্থা খুবই খারাপ। বাইরের রাজ্যে চিরুনি পাঠানো যাচ্ছে না। শ্রমিকদের বেতন বাড়ানোর পরিকল্পনা রয়েছে। তবে শ্রমিকরা যতটা বেতন দাবি করছেন, তা বাড়ানো সম্ভব নয় এই মুহুর্তে। শ্রমিকরা অনড় তাঁদের দাবিতে।