দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ ঠিক ১২ দিনের মাথায় পুলওয়ামা হামলার জবাব দিল ভারত। কার্পেট বম্বিং করে ভারতীয় বায়ুসেনা গুঁড়িয়ে দিয়েছে পাকিস্তানের মদতপুষ্ট জইশ-ই-মহম্মদের সবচেয়ে শক্তিশালী, বড় এবং সক্রিয় ঘাঁটি। ভারতে হওয়া বিভিন্ন বড় হামলার মূল চক্রীদের অনেকেই খতম হয়েছে বলে দাবি করেছে বায়ুসেনা। আর এই প্রত্যাঘাতের পর পরই প্রকাশ্যে এসেছে বালাকোটে থাকা জইশের ঘাঁটির বেশ কিছু ছবি।

জঙ্গিদের ডেরাতে বোমা, গুলি, কার্তুজ একে-৪৭-এর বাইরেও যে ঝাঁ চকচকে বিলাসবহুল ব্যবস্থা থাকতে পারে তা বোধহয় আগে জানতেন না আম আদমি। তবে জইশের সবচেয়ে সক্রিয় ঘাঁটির ছবি প্রকাশ্যে আসতেই পরিষ্কার হলো সবটা। ৬০০জন একসঙ্গে থাকার ব্যবস্থা ছিল জইশ-ই-মহম্মদের বালাকোটের এই ডেরায়। বিশাল বিশাল হল ঘরের পাশাপাশি ছিল অসংখ্য ডরমেটরি। সুদৃশ্য সুইমিং পুল থেকে শুরু করে অত্যাধুনিক যন্ত্রাংশ বসানো জিম, জেহাদিদের মনোরঞ্জনের ব্যবস্থাও ছিল ভরপুর। আর এই সবের সহাবস্থান ছিল ঘন জঙ্গলে ঘেরা বালাকোটের দুর্গম পাহাড়ি এলাকায়।

২০০৩-২০০৪ সালে জইশের এই প্রশিক্ষণ শিবির নির্মাণ শুরু হয়। ইউএসএসআর-এর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা আফগানদের নিযুক্ত করা হয় ট্রেনার হিসেবে। পাকিস্তানের যুব সমাজের একটা বড় অংশকে এই শিবিরেই ট্রেনিং দিত তারা। যে হলঘরে চলত ফাইনাল ট্রেনিং আয়তনে তা সুবিশাল। চারদিক মোড়া থাকত জইশের ফেস্টুন আর জেহাদি বার্তা লেখা পতাকায়। শুধু তাই নয়। যেসব দেশে হামলা চালানোর প্রশিক্ষণ দেওয়া হতো সেই সব দেশের পতাকাও লাগানো থাকতো।

সেনাবাহিনীর অনুমান, যাতে প্রতিদিন জঙ্গিদের মধ্যে একটু একটু করে ঘৃণার পরিমাণ বাড়ে এবং মন একেবারে বিষিয়ে যায় সে জন্যই ঝোলানো হতো এইসব পতাকা। জইশের ঘাঁটির ছবি থেকে জানা গিয়েছে, এই হলঘরেই ২০১৮ সালের ১ এপ্রিল বাছাই করা হয়েছিল একদল জঙ্গিকে। আর এদের বেছে নিয়েছিল জইশ চিফ মাসুদ আজহারের ভাই মুফতি আবদুল রউফ আজহার।
বিপুল পরিমাণ অস্ত্রভাণ্ডার সবসময়ই মজুত থাকত জইশের এই ঘাঁটিতে। ডেরা পর্যবেক্ষণের মূল দায়িত্বে ছিল মাসুদ আজহারের শ্যালক মৌলানা ইউসুফ আজহার ওরফে উস্তাদ ঘোরি। এমনকী ইউসুফ আজহারের ব্যবহার করা এসইউভি গাড়ির ছবিও এ বার প্রকাশ্যে এসেছে।

বালাকোটের ডেরার ছবি সামনে আসতেই প্রকাশ্যে এসেছে আরও এক বিস্ফোরক তথ্য। সূত্রের খবর, ২৫০জনেরও বেশি জঙ্গিকে একসঙ্গে প্রশিক্ষণ দেওয়া হতো এই শিবিরে। আর সবই নাকি চলত পাকিস্তানের গুপ্তচর সংস্থা ‘আইএসআই’-এর নাকের ডগায়। ওই সূত্রের দাবি, এই ভয়ানক জঙ্গি কার্যকলাপের ব্যাপারে বেশ ভালোমতোই ওয়াকিবহাল ছিল আইএসআই
বালাকোটে কুনহার নদীর কাছেই ছিল জইশ-ই-মহম্মদের এই প্রশিক্ষণ শিবির। অত্যাধুনিক অস্ত্র চালনা থেকে শুরু করে, আত্মঘাতী জঙ্গি হানার ছক, কিংবা বিভিন্ন অত্যাধুনিক প্রযুক্তি সম্পন্ন এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস বা বম্ব—–এই সবের ব্যাপারেই একেবারে চোস্ত করে তোলা হতো জেহাদিদের। আর এই সবকিছুর মধ্যেই খুঁটিনাটি নখদর্পনে রেখে জঙ্গিদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছিল সেনার কনভয়ে হামলার জন্য। অনুমান, পাশেই নদী থাকায় জলপথে হামলার ট্রেনিংও দেওয়া হতো জঙ্গিদের। এর পাশাপাশি চলতো নানা রকমের ক্লাস। মাসুদ আজহারের সঙ্গে জইশের বাকি মাথারাও এই ক্লাস নিতে আসতো। আর এই ক্লাসেই বিভিন্ন ধর্মীয় আলোচনায় হতো বলে সূত্রের খবর।

মঙ্গলবার ভোর সাড়ে তিনটে নাগাদ জইশের মূল ঘাঁটিতে আক্রমণ করে বায়ুসেনা। পাক অধিকৃত কাশ্মীরের একের পর এক জঙ্গি ঘাঁটি গুঁড়িয়ে দেয় বায়ুসেনার ১২টি মিরাজ-২০০০ যুদ্ধবিমান। কার্পেট বম্বিংয়ের মাধ্যমে প্রায় এক হাজার কিলো বোমা বর্ষণ করা হয় জঙ্গি ক্যাম্পগুলির উপর। বায়ুসেনা জানায় যে উদ্দেশ্য নিয়ে তারা মিশনে নেমেছিল তা ১০০ শতাংশ সফল হয়েছে।

এরপরেই খবর আসে, ভারতীয় বায়ুসেনার চরম প্রত্যাঘাতে খতম হয়েছে জইশ চিফ মাসুদ আজহারের বড় ভাই ইব্রাহিম আজহার, ছোট ভাই মৌলানা তলহা সইফ এবং শ্যালক ইউসুফ আজহার। ১৯৯৯ সালে কন্দহর বিমান হাইজ্যাকের ঘটনার অন্যতম চক্রী ছিল ইউসুফ ও ইব্রাহিম। তবে শেষ পাওয়া খবর অনুযায়ী, রাওয়ালপিন্ডির সেনা হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে জইশ-ই-মহম্মদের মাথা মৌলানা মাসুদ আজহার।

ছবি সৌজন্য: এনডিটিভি

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here