পার্থ সারথি নন্দী: বনগাঁ: লকডাউনে টানা ৬৯ দিন বন্ধ থাকার পরে ১ জুন থেকে খুলতে শুরু করেছে সোনার গয়নার দোকান।
উত্তর২৪পরগনার গণপরিবহণ ধাপে ধাপে স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে৷ স্থানীয় রুটের কিছু বাস অটো রাস্তায় নেমেছে ফলে বাগদা, বয়রা, হ্যালেঞ্চা,গোপাল নগর, চাঁদপাড়া, গাইঘাটা এলাকার ক্রেতাদের দেখা মিলছে বনগাঁ শহরের সোনা গয়নার দোকানে।
কোভিড ১৯ নিয়ম মেনে দোকান খোলায় অতিরিক্ত খরচ বইতে হচ্ছে ব্যবসায়ীদের। বনগাঁয় নিউ সিংহ জুয়েলার্সের কর্ণধার বিনয় সিনহা বলেন সবার আগে মানুষের জীবন এবং তাঁদের স্বাস্থ্য। ফলে আমরা প্রতিটি ক্রেতার স্বাস্থ্য সুরক্ষাকে গুরুত্ব দিয়ে তাঁদের জন্য মাস্ক,স্যানিটাইজার সহ সমস্ত সরঞ্জামের ব্যাবস্থা রেখেছি, যাতে করোনা সংক্রমণ থেকে তাঁদেরকে যথা সম্ভব রক্ষা করা যায়।
বাজারে চাহিদা বাড়াতে গয়না কেনার জন্য ব্যাঙ্কঋণ চালুরও দাবি করছেন বিডিন্ন স্বর্ণ সমিতি এবং ব্যাবসায়ী প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে।
একেতেই করোনার জেরে চোখ রাঙাচ্ছিল সোনার চড়া দামও। শুক্রবার বনগাঁয় প্রতি ১০ গ্রাম গয়নার সোনা ছিল জিএসটি ছাড়া ৪৬,০০০ টাকা। তার উপরে রুজি-রোজগারে চোট খাওয়া সাধারণ মানুষ এখন খরচে রাশ টানার পথ নিয়েছে। তাতেই কপালে ভাঁজ বাড়ছে গয়না শিল্পের।
এ দিনই এক সমীক্ষা জানিয়েছে, ভবিষ্যৎ নিয়ে চূড়ান্ত অনিশ্চয়তায় রোজগেরেদের বড় অংশ। তাঁরা বলছেন, ক’মাস খরচে যথাসম্ভব রাশ টানবেন। বড় মাপের খরচের ক্ষেত্রে ব্যক্তিগত ঋণের কথাও ভাবছেন অনেকে। এই অবস্থায় গয়না কেনার জন্যও মাসিক কিস্তিতে ঋণ দেওয়ার দাবি তুলেছেন সোনার ব্যবসায়ীরা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক স্বর্ণ ব্যাবসায়ী অভিযোগ করে বলেন, “টিভি, ফ্রিজ, এসি কিনতে ব্যাঙ্ক এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠান ঋণ দেয়। কিন্তু ইচ্ছে থাকলেও তারা সোনার গয়না কিনতে ধার দিতে পারে না। প্রায় ৮ বছর আগে এই ঋণে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল রিজার্ভ ব্যাঙ্ক। বলা হয়েছিল দেশে গয়নার ব্যবহার কমানোই এর লক্ষ্য।’’
সোনার গয়না ব্যাবসায়ী রতন সিনহা জানান, “গয়না ব্যবসার উপরে সাড়ে ৮ কোটি মানুষের রুটি-রুজি নির্ভর করে। মোট জিডিপির ৭% আসে এই শিল্প থেকে। রফতানির বড় অংশ দখল করে আছে গয়না। এখন এই ব্যবসার যে হাল, তাতে একে বাঁচিয়ে রাখতে অবিলম্বে অন্যান্য ভোগ্যপণ্যের মতো গয়নায় ব্যাঙ্কঋণ চালু করা জরুরি।’’
রতন বাবুর দাবি, “ছোট-বড় সব দোকানেই ৫ জনের বেশি ক্রেতাকে ঢোকানো যাবে না বলে নির্দেশ। অথচ একটা গয়না কিনতে তো একসঙ্গে ৫-৬ জন আসেন। পছন্দ করতেও সময় লাগে বেশি। অন্য ক্রেতাদের ততক্ষণ বাইরে দাঁড় করিয়ে রাখব, সেটা তো হয় না। তাই শোরুমের পাশে একটি অস্থায়ী বসার জায়গা করেছি যাতে ক্রেতারা সেখানে একটু ক্ষণিকের বিশ্রাম নিতে পারেন ।
বঙ্গীয় স্বর্ণ শিল্পী সমিতি বনগাঁ শাখার ভাইস প্রেসিডেন্ট কল্যাণ তারনের অবশ্য দাবি, “দীর্ঘ দিন বন্ধ থাকার পরে ফের কেনাবেচার মহরা দিতেই দোকান খুলেছি।’’তবে বিক্রি না-বাড়লে যে আগামী দিনে অবস্থা আরও সঙ্গীন হবে, তা মানছেন স্বর্ণ শিল্পের প্রায় সকলেই। স্বর্ণ ব্যাবসা এবং স্বর্ণ শিল্প কে বাঁচাতে গেলে চাই সরকারি অনুদান৷ বিশেষ করে কয়েক লক্ষ শ্রমিক রয়েছেন এই শিল্পের সঙ্গে যুক্ত যাঁরা কোন রকম সরকারি সাহায্য পাচ্ছেন না, কেন্দ্র সরকার তাঁদের জন্য না ভাবলে আগামী দিনে এঁদের অভাবে জেরে স্বর্ণ শিল্পটাই মুখ থুবরে পড়বে৷