দেশের সময় ওয়েবডেস্ক:যেন পরাজয়ের অনুশোচনা শেষে বসন্তের সূচনা। পাঁচ রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচনের ফলাফল প্রকাশ পাওয়ার পর তেমনই চিত্র বাংলার কংগ্রেস শিবিরে। যদিও নির্বাচন হওয়া তেলেঙ্গানা ও মিজোরামে ক্ষমতা পায় নি তার‍া, তবে তিনটি বড়ো রাজ্য মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থান ও ছত্তীসগঢ়ে বিজেপি-কে পরাজিত করে বিরাট সাফল্য হাত শিবিরে। যার প্রতিফলন লক্ষ্যনীয় এরাজ্যেও। উল্লেখ্য বঙ্গ রাজনীতি-তে বিগত বেশ কয়েক বছর আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে থাকেনি কংগ্রেস। ২০১৬সালে বিধানসভা নির্বাচনে বাংলায় দ্বিতীয় দল হয়ে উঠে এলেও জোট সঙ্গী বামেদের সঙ্গ ত্যাগ ও শেষ পঞ্চায়েত নির্বাচনে বিজেপি-র নজরকাড়া ফলাফলে যথেষ্ট চিন্তিত ছিল কংগ্রেস। আর সদ্য শেষ হওয়া পাঁচ রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচনের ফলাফলে হয়তো সমাপ্তি ঘটলো সেই অনুশোচনার। রানি রাসমণি অ্যাভিনিউ-র মঞ্চে তখন চিত্রটা‍ পরিস্কার। নেতৃত্বের কন্ঠস্বরে সারমর্ম “অতীত নয়, বরণ করবো আগামীকে”। পাশাপাশি লক্ষ্যনীয় প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি হিসেবে সৌমেন মিত্র-র ভূমিকা। জল্পনার অবসান ঘটিয়ে কংগ্রেস হাইকম্যান্ডের সিদ্ধান্তে সদ্য যিনি প্রদেশ কংগ্রেস-এর উচ্চপদে আসীন হয়েছেন। যদিও এই প্রথম নয়। অতীতেও এই পদের দায়িত্ব গ্রহন করেছিলেন তিনি। আর তার তার সভাপতি থ‍াকা সময়কালে কংগ্রেস ত্যাগ করে তৃণমূল কংগ্রেস-এর জন্ম দেন রাজ্যের বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তবে উনিশ শতকের শেষ সময়ের সাথে রাজ্যে বর্তমান সময় রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটের মিল কোথাও না থাকলেও অভিজ্ঞতার মূল্য যে কতটা হয়তো তাই প্রমান করলো ১২তারিখে কলকাতা-র জনসভা। কংগ্রেস নেতা অনিমেষ দাস-এর কথায়, “প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি হিসেবে সৌমেন মিত্র-র ভূমিকা কখনও অস্বীকার করা সম্ভব নয়”। “দায়িত্ব গ্রহন করে পুরো দলকে এক ছাতার নিচে নিয়ে আসতে যে তৎপরতা তিনি দেখিয়েছেন তা নিঃসন্দেহে বাংলার কংগ্রেস রাজনীতিতে এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়ের জন্ম নেবে”। যার বাস্তব চিত্রটাও দেখা গেল ১২তারিখ। বাংলার রাজনীতিতে পুনরায় দলকে প্রাসঙ্গিক করে তোলার লক্ষ্যে মঞ্চে যখন সৌমেন-অধীর-ডালু-দীপা-দের উজ্জল উপস্থিতি। পাশাপাশি তিন রাজ্যে জয়ের উন্মাদনাকে পাথেয় করে দলীয় কর্মী সমর্থকদের উচ্ছাসে তখন গা ভাসিয়েছে ধর্মতলার রাজপথ। মঞ্চ থেকে আগুয়ান কন্ঠে সৌমেন মিত্র-র ঘোষণা, “তিন রাজ্যের ফলাফলে প্রমানিত আগামীদিনে দেশের যোগ্য উত্তরাধিকারী রাহুল গান্ধী”। “সেই গদি পাওয়ার আশা ত্যাগ করুন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়”। “আমরা সকলে সংঘবদ্ধ থাকবো”। “বুথ স্তর থেকে শুরু হবে আন্দোলনের সূচনা”। বিরোধী দলনেতা আব্দুল মান্নান বলেন, “নতুন করে ঐক্যবদ্ধ হয়ে বাংলায় নবজাগরণ ঘটাবে কংগ্রেস”। “যারা দল ত্যাগ করেছেন বলবো তারা ফিরে আসুন”। এ প্রসঙ্গে ফোনে “দেশের সময়”-কে বিস্তারিত প্রতিক্রিয়া দেন কংগ্রেস নেতা কৃষ্ণপদ চন্দ। তিনি বলেন, “এটা ঠিক যে দীর্ঘদিন বাংলায় সাংগঠনিক ভাবে পিছিয়ে ছিল কংগ্রেস”। “তবে আমরা লড়াই-এর ময়দান থেকে সরে আসিনি”। “ন্যায্য দাবী নিয়ে লড়াই করেছি”। “হাইকম্যান্ডের নির্দেশ মতো সফল হয়েছে একের পর এক দলীয় কর্মসূচী”। “আমরা মানুষের কাছে পৌঁছানোর চেষ্ঠা করেছি”। “অবশেষে পুনরায় মানুষ কংগ্রেস-কে গ্রহন করেছে”। “মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থান, ছত্তীসগঢ়ের ফলাফল তাই প্রমান করলো”। “তার সাথে এই রাজ্যেও নতুন করে আন্দোলনের পথে যাওয়ার জন্য আমরা তৈরি”। “যার জন্য হাইকম্যান্ডের নির্দেশ মতো প্রয়োজন হলে সাম্প্রতিক দল বিজেপি-র বিরুদ্ধে গড়ে তোলা হবে মহাজোট”। “এভাবে যে বিজেপি-কে পরাজিত করে দেশে সু-শাসন আনা সম্ভব মধ্যপ্রদেশে সরকার গঠনের ক্ষেত্রে সমাজবাদী পার্টি ও বহুজন সমাজবাদী পার্টির কংগ্রেস-কে সমর্থন তা স্পষ্ট করেছে”। অতএব অতীতের সমস্ত গ্লানি দূর করে আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে কি পুনরায় জাতীয় ও রাজ্য রাজনীতি-তে নিজেদের প্রাসঙ্গিকতা ফিরে পেতে সক্ষম হবে কংগ্রেস? এখন এই প্রশ্নেই সরগরম রাজনৈতিক মহল।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here