দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ গতকাল কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী অমিত শাহ যখন কলকাতায় সভা করতে এসেছিলেন তখন রাজপথে তাঁকে কালো পতাকা দেখিয়েছিলেন বাম-কংগ্রেস সমর্থকরা। অনেকেই তখন প্রশ্ন করেছিলেন, এ ব্যাপারে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও তাঁর দল নীরব কেন। কেন দিল্লির হিংসার ঘটনা নিয়ে কোনও কথা বলছেন না বাংলার মুখ্যমন্ত্রী।
মমতা তাঁদের হতাশ করলেন না। বরং সোমবার সকালে নেতাজি ইনডোর স্টেডিয়ামের মঞ্চ থেকে বড় অভিযোগ করলেন গেরুয়া শিবিরের বিরুদ্ধে। যদিও কারও নাম তিনি মুখে আনেননি। তবে বলেন, “দিল্লিতে যা হয়েছে তাতে আমাদের অনেকের হৃদয় কাঁদছে, আমরা মর্মাহত, দুঃখিত। গত কয়েকদিন ধরে দিল্লিতে যে মানুষ খুন হয়েছে তা প্ল্যানড জেনোসাইড, গণহত্যা। তার পর তাকে সাম্প্রদায়িক হিংসার চেহারা দেওয়া হয়েছে। আমরা একে ধিক্কার জানাচ্ছি”।
এখানেই থামেননি দিদি। তিনি বলেন, দিল্লিতে ওই গণহত্যার পর কলকাতায় এসেছিলেন (পড়ুন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী অমিত শাহ)। একবারও ক্ষমা চাননি। বলছেন, দখল নেবেন। দেখব, কে কোথাকার দখল নেয়। যে দিল্লিতে লোকসভা ভোটে সাতটা আসনে জিতেছে সেখানে রক্ত বয়েছে। অসমে ক্ষমতা দখল করেছে সেখানে মানুষকে ভিটে ছাড়া করছে। কিন্তু মনে রাখতে হবে বাংলা, দিল্লি নয়। এখানে গোলি মেরে কাউকে ওড়ানো যাবে না।
দিল্লির হিংসার ঘটনা নিয়ে এর পরই আরও প্রশ্ন তোলেন মমতা। তিনি বলেন, দিল্লিতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ব রয়েছে কেন্দ্রের সরকারের উপর। ওদের হাতে পুলিশ রয়েছে, আধা সামরিক বাহিনী রয়েছে, সিআইএসএফ রয়েছে, এসএসবি রয়েছে। তার পরেও এতো মানুষ হিংসার ঘটনা মারা যায় কী করে? আমাকে তো অনেকে বলছে এটা প্ল্যানড জেনোসাইড। ছক করে খুন করা হয়েছে। তাঁর কথায়, এখনও অনেক মানুষের খোঁজ নেই। সাতশ লোককে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। নালা থেকে লাশ বেরোচ্ছে। এই অন্যায়ের শাস্তি হবেই।
তৃণমূলনেত্রী এদিন যে ভাষায় কেন্দ্রে বিজেপি সরকারকে আক্রমণ করেছেন তাৎপর্যপূর্ণ হলেই মনে করছেন অনেকেই। কারও কারও মতে, গতকাল কলকাতায় দাঁড়িয়ে অমিত শাহ যে চরম রাজনৈতিক আক্রমণ করেছেন, তারই পাল্টা দিলেন দিদি।
পর্যবেক্ষকদের অধিকাংশই মনে করছেন, গতকাল অমিত শাহকে যেহেতু কলকাতায় সভা করার অনুমতি দিয়েছিল মমতা-সরকার, তার পর তৃণমূলের বিক্ষোভ দেখানোর জায়গা ছিল না। তাতে দ্বিচারিতা হতো। কিন্তু অমিত শাহর রাজনৈতিক আক্রমণের পর মমতার জবাবও অনিবার্য ছিল।
এ ব্যাপারে অবশ্য বাম ও কংগ্রেসের নেতারা ঘরোয়া আলোচনায় টিপ্পনি করতে ছাড়েননি। তাঁদের অনেকের বক্তব্য, তৃণমূল দিল্লি হিংসার ঘটনা নিয়ে ইচ্ছা করেই চুপ করে ছিল। আর তার মাধ্যমে বিজেপিকে খুশি করতে চেয়েছিল। তাতে চিড়ে ভিজছে না দেখে এখন মুখ খুলেছে।
দিদিকে বলো প্রচার শুরু হয়েছে প্রায় সাত মাস হল। সেই প্রচার বন্ধ হচ্ছে না। তবে একুশের ভোটের দিকে তাকিয়ে এদিন নতুন ক্যাম্পেন শুরু করে দিলেন প্রশান্ত কিশোর এবং তাঁর টিম-‘বাংলার গর্ব মমতা’। যে ইভেন্ট লঞ্চের মঞ্চে উপস্থিত থাকলেন দিদিও। যিনি অনুষ্ঠানের শুরুতে দলের নেতা কর্মীদের সংবিধানের প্রস্তাবনা পাঠ করালেন।
লোকসভা ভোটে বাংলায় ৪২টি আসনের মধ্যে বিজেপি ১৮ আসন জিতে নেওয়ার পরই উদ্বেগের স্রোত বয়েছিল তৃণমূলের অন্দরে। নিচুতলার মানুষের সঙ্গে কোথায় এবং কীভাবে সেই বিচ্ছিন্নতা তৈরি হয়েছিল দলের ভিতরে। দূরত্ব কীভাবে মোছা যায় সেজন্য সাহায্য নেওয়া শুরু হয়েছিল ভোট কুশলী প্রশান্ত কিশোর এবং তাঁর প্রতিষ্ঠান আই-প্যাকের।
তৃণমূলের প্রচারের দায়িত্ব পেয়েই প্রশান্ত কিশোর প্রথমে দিদিকে বলো কর্মসূচির সূচনা করেছিলেন। তা ‘সফল’ হওয়ার পর সোমবার শুরু হল ‘আমার গর্ব মমতা’ প্রচার।
কী হবে এর মাধ্যমে?
দলের তরফে যে পুস্তিকা সরবরাহ করা হয়েছে তাতে বলা হয়েছে, ২ মার্চ থেকে ১০ মে পর্যন্ত চলবে এই অভিযান। এই কর্মসূচির আওতায় ৭৫ হাজারেরও বেশি দলীয় নেতা ও কর্মী রাজ্যের ১৫ হাজার জনবসতিতে যাবেন এবং বাংলার প্রায় আড়াই কোটি মানুষের কাছে পৌঁছবেন। মানুষের সঙ্গে তৃণমূলের যোগাযোগকে পুনরুজ্জীবিত করে তোলাই এই কর্মসূচির লক্ষ্য।
এদিনের অনুষ্ঠানে যুব তৃণমূল সভাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, তিন পর্যায়ে হবে এই কর্মসূচি। কেন বাংলার গর্ব মমতা তার তিনটি কারণ রয়েছে। এই মুহূর্তে ভারতের মাটিতে দাঁড়িয়ে কেউ যদি সংবিধানের প্রস্তাবনার রক্ষক ও অভিভাবক হয়ে থাকেন, তিনি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দ্বিতীয়ত বাংলার সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যকে যিনি আগলে রেখেছেন—তিনি মমতা। এবং যিনি বাংলার গৌরবকে পুনরুদ্ধার করার জন্য অক্লান্ত পরিশ্রম করছেন-তিনি বাংলার গর্ব মমতা। ভিডিওসংগৃহীত-ছবি।