মাঝে মাঝে একটা বাঁশি বেজে ওঠে । বাঁশিটা বাইরের , কিন্তু সুরটা যেন ভেতরের । তখন বেরিয়ে পড়তে ইচ্ছে করে । মনে হয় যাই । তবে ফিরে যেতে ইচ্ছে করে পূর্বের দিনগুলোতে । টাইম মেশিনে চেপে ।এখন ঘর থেকে বেরুনো বারন ।
কতদিন যে আমার শহরকে দেখিনি ! কেমন আছে চাকদা রোড ? কেমন আছো তুমি যশোর রোড ? ত্রিকোণ পার্ক ? আমাদের ব্রিজগুলিই বা আছে কেমন ! সন্ধ্যা নেমেছে । ভেতরে বাঁশির সুর বেজে উঠল … চলো যাই চলো যাই । সবাইকেএকবার দেখে আসি । … লুকিয়ে বেরিয়ে পড়লাম । সাইকেল চেপে । মুখে মুখোশ । পকেটে স্যানিটাইজার । এ কী শহর আমার ! প্রায় জনহীন । কিন্তু রাস্তায় আলো । অল্প রাতেই সারসার বন্ধ দোকান পাট । দু একটা মোটরবাইক যাচ্ছে । দুচারজন মানুষ এদিক ওদিক যাচ্ছে । চিনতে পারছিনা । ওদেরও মুখ ঢাকা । মনে হচ্ছে লজ্জায় আমরা মুখ ঢেকেছি ।
শুনশান রাখালদাস সেতুর ওপর উঠতেই একজন মুখঢাকা আমার সমবয়স্ক এগিয়ে এসে বললেন , লজ্জায় মুখ ঢাকতে হচ্ছে আমাদের । প্রকৃতিকে এত মেরেছি আমরা ! দেখুন , এখন কত পরিষ্কার চারদিক । … বলেই লোকটা যেন উধাও হয়ে গেল ।তাকিয়ে দেখি সত্যিই , যেন ষাটের দশকের রাত্রির বনগাঁ শহর ।
তবে রাস্তায় এত আলো ছিলনা । তা কী হয়েছে ? এখন আলো আছে মানুষ নেই । যারা ক’জন আছি , তারা লজ্জায় মুখ দেখাতে পারছেনা ! ফিরে আসছি । একটা ছোট্ট দোকানের ঝাঁপের ফাঁক দিয়ে মনমরা আলোর রেখা বেরিয়ে একটা গলিতে পড়ছে । রাস্তা দিয়ে একটা পুলিশের গাড়ি চলে গেল । ওই আলোর রেখার ওখানে দাঁড়িয়ে রয়েছে একজন নারী । হাত নেড়ে আমায় ডাকলো । মুখে মুখোশ । সাইকেল হাঁটিয়ে কাছে গেলাম । চেনা চেনা লাগছে । বুঝতে পারছি না । নারীটি তার ডান হাতখানা সামনে বাড়িয়ে দিয়ে বলল , একটু হাত ধরে এগিয়ে দেবেন আমাকে ? গোড়ালিতে খুব লেগেছে । ভাবলাম , সাহায্য করব কী? আর ওই হাত ধরা ঠিক হবে! কিন্তু বাড়ানো হাতটি আমার খুব যেন চেনা । অবশেষে সঙ্কোচেই পকেট থেকে স্যানিটাইজার বের করে, হাতে মেখে নিয়ে হাতটি ধরে , অন্য হাতে সাইকেল নিয়ে এগোতে থাকি । কিন্তু এ হাতের ছোঁয়া এত চেনা লাগছে কেন ! রাস্তা আরো সুনসান । হাঁটতে হাঁটতে নারী কন্ঠটি বলে ওঠে , অলিকে তুমি চিনতে পারলেনা ! মাথা যেন ফেটে গেল আমার । আলোকিত আকাশের দিকে তাকিয়ে দেখি সেখানে তারার বদলে শতসহস্র মুখোশ উঠেছে । এ লজ্জা কি আমাদের সবার নয় ।