দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ লাদাখে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা বরাবর চিনের সঙ্গে উত্তেজনা যে ক্রমশ বাড়ছে তা আর গোপন বিষয় নয়। এ ব্যাপারে ঘরোয়া রাজনীতিতেও এখন প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। এই পরিস্থিতিতে আজ মঙ্গলবার সন্ধেয় জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল এবং চিফ অফ ডিফেন্স স্টাফ বিপিন রাওয়াতের সঙ্গে বৈঠকে বসেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। সরকারের শীর্ষ সূত্রে এই খবর জানা গিয়েছে।
সাউথ ব্লক সূত্রে খবর, এর আগে তিন বাহিনীর প্রধানদের সঙ্গে এদিন বৈঠক করেছেন প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিং। তা ছাড়া বিদেশ মন্ত্রী জয়শঙ্করের সঙ্গেও তিন বাহিনীর প্রধানের পৃথক বৈঠক হয়েছে।
লাদাখে চিনের সেনা মোতায়েন বাড়ানো দেখে ইতিমধ্যেই কৌশলগত পদক্ষেপ করেছে নয়াদিল্লি। এমনিতেই লে ও লাদাখে ভারতীয় সেনাবাহিনীর সেনা মোতায়েন বছরভর ভাল। সেখানে সবরকম প্রস্তুতি রাখা হয়েছে বলেই সেনাসূত্রে খবর। তা ছাড়া গত শুক্রবার লে-তে ১৪ কোরের সদর দফতরে গিয়ে এ ব্যাপারে দীর্ঘ বৈঠক করেছেন সেনা প্রধান মনোজ মুকুন্দ নারবানে।
মে মাসের গোড়া থেকে লাদাখে চিনের সঙ্গে সীমান্তে অশান্তি লেগেই রয়েছে। গত ৫ মে লাদাখে দু’পক্ষের প্রায় আড়াইশ জন সেনা জওয়ানের মধ্যে তুমুল মারপিট হয়। প্রসঙ্গত, গত প্রায় চার দশক ধরে ওয়েস্টার্ন সেক্টরে এবং সিকিম সেক্টরে টহলদারির সময়ে ছোটখাটো ঝগড়া প্রায়ই হয়েছে। কিন্তু একটিও বুলেট খরচ করেনি কেউ। এ বারও তা হয়নি। কিন্তু মে মাসের গোড়া থেকে উপর্যুপরি ঘটনায় দেখা যায়, লোহার রড, ডাণ্ডা নিয়ে মারপিট করতে আসছে চিনা সেনারা। হাতাহাতিতে দু’পক্ষেরই বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন।
এরই পাশাপাশি দেখা গিয়েছে, লাদাখে প্যাঙ্গং সো-তে কখনও মোটরবোটে টহলদারি শুরু করেছে চিনা সেনা। কখনও তাদের হেলিকপ্টার ঢুকে পড়ছে ভারতীয় সীমানার মধ্যে। সেই সঙ্গে প্যাঙ্গং সো-র পূর্ব দিকে গালওয়ান উপত্যকায় প্রচুর সেনা মোতায়েন শুরু করেছে বেজিং। অন্তত ১০০টি তাঁবু গেড়েছে তারা। তা ছাড়া লাদাখে গাড়ি কুনসায় চিন যে রাতারাতি বিমানঘাঁটি তৈরি করেছে তার উপগ্রহ চিত্রও সামনে এসে গিয়েছে।
শুধু সেনা কর্তারা নন, কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞরাও চিনের এই গতিবিধি নিয়ে সন্দিহান। তাঁরা মনে করছেন, লাদাখে পিপলস লিবারেশন আর্মির স্থানীয় কমান্ডারের এটা কাজ নয়। বেজিংয়ের মাথা রয়েছে এর নেপথ্যে। তবে কী কারণে বেজিং পায়ে পা লাগিয়ে ঝগড়া চাইছে তা স্পষ্ট নয়। অনেকের মতে আন্তর্জাতিক কূটনীতিতে চিন ক্রমশই একঘরে হচ্ছে। আমেরিকার সঙ্গে এক প্রকার শীতযুদ্ধ শুরু হয়ে গিয়েছে। ব্রিটেন এবং ইউরোপের সঙ্গেও দূরত্ব বেড়েছে। সম্প্রতি চিনের সঙ্গে বৈঠক বাতিল করেছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন। করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ে জাপানও দায়ী করছে বেজিংকে। এবং নয়াদিল্লিও যে চিনকে এ ব্যাপারে সন্দেহের চোখে দেখছে তাও পরিষ্কার। কোভিডের জন্য তৈরি হওয়া মন্দার সুযোগ নিয়ে চিনা বাণিজ্য সংস্থাগুলি যাতে ভারতে আধিপত্য বাড়াতে না পারে সেই দরজা বন্ধ করে দিয়েছে নয়াদিল্লি।
কূটনীতিকদের মতে, সার্বিক এই পরিস্থিতিতে হতে পারে কোনও নতুন ছুতো খুঁজছে চিনের শাসক দল। যা তাদের বরাবরের স্বভাব। তা ছাড়া এও হতে পারে, ঘরোয়া অর্থনীতির অধোগতি, আন্তর্জাতিক কূটনীতিতে ব্যর্থতার জন্য দেশের মধ্যেই চাপে কমিউনিস্ট শাসকরা। তাই দৃষ্টি ঘোরাতেই এই পথে হাঁটছে।