জ্যোতিপ্রকাশ ঘোষ
পূর্বরেলের একটি জনবহুল স্টেশন হল উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলার বনগাঁ – শিয়ালদহ শাখার “গোবরডাঙা” রেলওয়ে স্টেশন। স্থানীয় বাসিন্দারা জানাচ্ছেন, বৃটিশ ভাইসরয় লর্ড কার্জনের আমলে গড়ে ওঠা ছোট্ট এই স্টেশনটিতে আজও লোক চক্ষুর আড়ালে রয়ে গিয়েছে এক ঐতিহাসিক নির্দশন। গোবরডাঙা থেকে বনগাঁ অভিমুখে তিন নম্বর প্লাটফর্মের বাঁদিকে ঝোপঝাড়ের আড়ালে ঢাকা পড়ে গিয়েছে একটি ছোট্ট প্লাটফর্ম, যা আজও গোবরডাঙার জমিদারদের স্মৃতি চিহ্ন বহন করে চলেছে, লোকমুখে যেটি “সাড়ে তিননম্বর” প্লাটফর্ম নামে খ্যাত। এই “সাড়ে তিননম্বর” প্লাটফর্মটির দৈর্ঘ্য সম্পূর্ন প্লাটফর্মের দৈর্ঘ্যের এক তৃতীয়াংশের কাছাকাছি।
জনশ্রুতি, তৎকালীন গোবরডাঙার জমিদারদের খুব হাতি পোষার শখ ছিল। হাতিশালায় স্থান পেতো দেশ বিদেশের বিভিন্ন হাতি। একসময় বাংলাদেশের এক নবাবের কানে গোবরডাঙার জমিদারদের এই হাতি পোষা’র বিষয়টি পৌঁছায়। নবাব বেশ কয়েকটি হাতি জমিদারের কাছে চেয়ে পাঠান। এই শুনে জমিদার মশাই পড়লেন মহাফাঁপরে! এতদূরে অল্প সময়ের মধ্যে কিভাবে হাতি পাঠানো সম্ভব! তখন দমদম থেকে বনগাঁ হয়ে বাংলাদেশের খুলনা পর্যন্ত নিয়মিত ভাবে রেলচলাচল করত। ঠিক হল ট্রেনে করে হাতি পাঠানো হবে। কিন্তু হাতিকে কিভাবে ট্রেনে তোলা যাবে? ওদিকে নবাবের ফরমান যতদ্রুত সম্ভব হাতি পাঠাতে হবে। শেষ পর্যন্ত জমিদারের আহ্বনে এগিয়ে আসে তৎকালীন বৃটিশ সরকার। জমিদারের অনুরোধে ট্রেনে করে হাতি পাঠানোর জন্য তৈরি করে দেওয়া হয় গোবরডাঙার “সাড়ে তিননম্বর” প্লাটফর্ম। পরবর্তীকালে জমিদার বাড়ির লোকজনরা ট্রেনে নামা-ওঠার জন্য এই প্লাটফর্মটি ব্যবহার করতেন।
১৯৪৭ সালে ভারতবর্ষ স্বাধীন হওয়ার পর জমিদারি প্রথা বিলোপ হয়ে গেলে আস্তে আস্তে এই প্লাটফর্মটির গুরুত্ব কমে যায়। নিয়মিত সংস্কারের অভাবে আস্তে আস্তে অপরিচ্ছন্ন ও ভগ্নপ্রায় হয়ে পড়ে পরাধীন ভারতের স্মৃতি বহন কারী এই “সাড়ে তিননম্বর” প্লাটফর্মটি। এবার এই প্ল্যাটফর্মটিকে সংস্কারের দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী। গোবরডাঙার বাসিন্দা উত্তম সরকার বলেন, “আমাদের দীর্ঘদিনের দাবি ঐতিহাসিক গুরুত্বসম্পন্ন এই “সাড়ে তিননম্বর” প্লাটফর্মটির অবিলম্বে সংস্কার করে রেলের ইতিহাসের পাতায় স্থান দেওয়া হোক।” এই প্রসঙ্গে রেলের এক আধিকারিক জানিয়েছেন, “স্থানীয় প্রশাসনের থেকে এই সংক্রান্ত কোনো প্রস্তাব পেলে অবশ্যই গুরুত্ব দিয়ে দেখা হবে।”