দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ বেআইনি কয়লা ও গরু পাচারের টাকা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে যেত বলে রবিবার সরাসরি অভিযোগ করেছে বিজেপি। রীতিমতো সাংবাদিক বৈঠক করে শুভেন্দু অধিকারী, অমিত মালব্যরা দাবি করেছেন, এই সব বেআইনি পাচার থেকে অন্তত ৯০০ কোটি টাকা তুলেছেন ‘ভাইপো।’
একুশের বিধানসভা নির্বাচনের আবহে কয়লা কেলেঙ্কারি ঘিরে সরগরম রাজ্য রাজনীতি। শুভেন্দু অধিকারীর বিস্ফোরক অভিযোগের পর অবশেষে চব্বিশ ঘন্টার পর সোমবার কয়লাকাণ্ড নিয়ে মুখ খুললেন তৃণমূল সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ৷
ট্যুইট করে তিনি বলেছেন, “কয়লা ও সেই সংক্রান্ত সমস্ত সম্পদ কেন্দ্রের এক্তিয়ারে রয়েছে, তা কেন্দ্রীয় এজেন্সিই পাহারা দেয়। বিজেপি নেতারা যদি মনে করে বেআইনি পাচার থেকে টাকা পেয়েছেন, তা হলে যাঁদের উপর জাতীয় সম্পদ রক্ষার দায়িত্ব ছিলে তাঁদের বিরুদ্ধে তদন্ত করতে কে বাধা দিচ্ছে কেন্দ্রকে।”
অভিষেকের বক্তব্য, “এটা হাস্যকর যে কয়লা ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের অফিসাররা তাঁদের বস (পড়ুন মোদী-শাহর) কথা না শুনে তৃণমূলের কথা শুনছে। কাদের বোকা বানাচ্ছে বিজেপি!” মোদ্দা কথায়, বেআইনি কয়লা পাচার যদি হয়ে থাকে তা হলে তার দায় কেন্দ্রের উপরেই চাপাতে চেয়েছেন অভিষেক।
বেআইনি কয়লা পাচার কাণ্ডে তদন্তে নামার পরই ইস্টার্ন কোলফিল্ডের একাধির অফিসার ও কর্মীর বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করেছে সিবিআই। তাঁদের বাড়িতে দিনের পর দিন তল্লাশি অভিযান চলেছে। এমনকি রেল ইয়ার্ডের দায়িত্বে থাকা কর্মী অফিসারদের বিরুদ্ধেও তদন্ত চলছে। আবার গরু পাচারের বিরুদ্ধে তদন্তে নেমেও বিএসএফের কর্তাকে গ্রেফতার করেছে সিবিআই। কিন্তু একই সঙ্গে সিবিআইয়ের অভিযোগ, বেআইনি কয়লা পাচার চক্রের মূল পাণ্ডা ছিল অনুপ মাঝি ওরফে লালা। তাঁকে মদত দিয়েছিল বেশ কিছু প্রভাবশালী। সিবিআই তাঁদের সন্ধানেই রয়েছে।
পাচার চক্রের সূত্র ধরে ইতিমধ্যে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্ত্রী রুজিরা নারুলা ও তাঁর শ্যালিকা মেনকা গম্ভীরকে জেরা করেছে সিবিআই। জেরা করেছে মেনকার স্বামী ও শ্বশুরকেও।
বস্তুত তৃণমূলের এক শ্রেণির নেতার বিরুদ্ধে পাচার চক্রে জড়িয়ে থাকার অভিযোগ নতুন নয়। শুধু বিজেপি সেই অভিযোগ তুলেছে তাও নয়। রবিবার সিপিএম সাধারণ সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্রও বলেছেন, “পাচার চক্রের বড় টাকা যেত হরিশ মুখার্জি স্ট্রিটে। এরা দুর্নীতির গলা জলে ডুবে থেকে লেকচার দিচ্ছে।”
তবে শুভেন্দু তথা বিজেপি সিধে ‘ভাইপোকে’ নিশানা করেছে। ফাঁস হওয়া একটি অডিও টেপকে সামনে রেখে তাঁরা অভিযোগ করেছেন, মাসে মাসে কীভাবে বেআইনি কয়লা ও গরু পাচার থেকে টাকা তোলা হত। এদিকে কয়লা পাচার কাণ্ডে অভিযুক্ত মূল পাণ্ডা লালাকে সোমবারও জেরা করেছে সিবিআই। ইতিমধ্যে জল্পনাও তৈরি হয়েছে যে লালা রাজসাক্ষী হতে পারে। তার পর ধরপাকড়ে গতি আনতে পারে কেন্দ্রীয় এজেন্সি।
All coal assets fall directly under Centre & are guarded by the Central agencies.
— Abhishek Banerjee (@abhishekaitc) April 5, 2021
If BJP thinks TMC leaders got money from those illegally operating the coal assets, then what’s stopping Centre from investigating all culprits who failed to manage these national assets? (1/2)
এদিন তৃণমূল ভবনে সাংবাদিক বৈঠকে ব্রাত্য বসু বলেন, ‘কয়লা খনি কেন্দ্রের। কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা বাহিনী পাহাড়া দেয়। বিজেপি বলছে তৃণমূল নাকি ৯০০ কোটি টাকা নিয়েছে। তাহলে কত কোটি টাকা কয়লা মন্ত্রী নিয়েছেন? এই অভিযোগের ভিত্তিতে কয়লা মন্ত্রীর পদত্যাগ করা উচিত… কাল ওরা যে সাংবাদিক বৈঠক করেছে, তার ভিত্তিতে ফৌজদারি মামলা করব আমরা।’
উল্লেখ্য, রবিবার সাংবাদিক বৈঠকে শুভেন্দু অধিকারী বলেন, ‘ সরকারি মদতে কয়লা দুর্নীতি হয়েছে। বিনয় মিশ্রের সঙ্গে তৃণমূলের যোগসাজশ রয়েছে। বিনয় মিশ্র সম্পর্কে চুপ তৃণমূল। ৯০০ কোটি টাকা ভাইপোর কাছে পৌঁছে দেন বিনয় মিশ্র। ধৃত আইসি অশোক মিশ্র টাকা পৌঁছে দিতেন। পুলিশের একাংশ এই চক্রে জড়িত। মুখ্যমন্ত্রী দায়িত্ব এড়াতে পারেন না। মমতাই প্রধান কর্মকর্তা।’ তৃণমূলের ভোটকুশলী প্রশান্ত কিশোরকেও টাকা দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন শুভেন্দু। ভাইরাল অডিয়ো টেপ নিয়ে শুভেন্দুর দাবি, ওই টেপে যাদের গলা ও কথাবার্তা শোনা যাচ্ছে তাঁরা গণেশ বাগারিয়া ও বিনয় মিশ্র। এই অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে পাল্টা সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের দাবি, ‘অডিয়ো টেপে টিভিতে দেখা গিয়েছে, দুটো লোক কথা বলছে। কিন্তু কে বা কারা কথা বলছে তা কেউ জানে না। কেউ পরিচয় নিশ্চিত ও করতে পারছে না। শুধু কুৎসা করতে সম্পূর্ণ সাজানো একটা টেপ।’