দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ ভয়াবহ আকার নিয়েছে করোনাভাইরাস। বৃহস্পতিবার সন্ধে পর্যন্ত ভারতে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭৩। হুহু করে ছড়াচ্ছে আতঙ্ক। এই পরিস্থিতিতে সর্দি, কাশি, জ্বরের মতো উপসর্গ দেখা গেলে ঘরে কী করবেন সেই সংক্রান্ত সাতদফা নির্দেশিকা জারি করল কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রক।
রকরোনাভাইরাসের সংক্রমণ রুখতে শপিং করা বন্ধ করুন, এমন পরামর্শই দিচ্ছেন বিশ্বের তাবড় বিশেষজ্ঞরা। বৈজ্ঞানিকদের কথায়, ক্যুরিয়ারের প্যাকেটের মধ্যেও অজান্তেই লুকিয়ে চলে আসতে পারে নোভেল করোনাভাইরাস বা COVID-19 ভাইরাস। দৈনন্দিনের নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রেই মধ্যেই বাড়তে পারে নোভেল করোনাভাইরাস, অসংখ্য গবেষণার পর এমনটাই বলছেন মন্টানার ন্যাশনাল ইনস্টিটিউটস অফ হেলথ ভাইরোলজি ল্যাবরেটরির গবেষকরা।
বিশ্বজুড়ে ত্রাস সৃষ্টি করেছে করোনাভাইরাস। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা ‘হু’-ও একে মহামারী বলে ঘোষণা করেছে। গত কয়েকমাস ধরে এই ভাইরাস সংক্রান্ত নানা গবেষণা চলছে বিভিন্ন দেশে। করোনা রুখতে সঠিক উপায় বের করার জন্য তোলপাড় করে ফেলছেন বিজ্ঞানীরা। এর মধ্যেই প্রকাশ্যে এসেছে এক সাংঘাতিক তথ্য। কোন কোন জায়গায় করোনাভাইরাসের স্থায়িত্ব কতদিন কিংবা ঠিক কোন কোন জায়গায় থেকে এই ভাইরাসের সংক্রমণ সবচেয়ে বেশি মাত্রায় হতে পারে তাই নিয়ে গবেষণা চলছিল। এবার সামনে এসেছে সেই গবেষণার ফলাফল। ইউনিভার্সিটি অফ ওয়াশিংটন স্কুল অফ পাবলিক হেলথের বিখ্যাত মাইক্রোবায়োলজিস্ট মেরিলিন রবার্টসের কথায়, “দূষিত জায়গা থেকে মানবশরীরে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঘটলে সেটা একদম শেষ প্রান্তে দাঁড়িয়ে থাকার সমান।“
মন্টানার ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের বৈজ্ঞানিকরা নানা পরীক্ষা-নিরিক্ষার মাধ্যমে জানিয়েছেন, মূলত প্লাস্টিক এবং স্টেনলেস স্টিল-জাত জিনিসপত্রের মধ্যে সবচেয়ে বেশিদিন বেঁচে থাকতে পারে এই করোনাভাইরাস। এইসব জিনিসে এই ভাইরাসের স্থায়িত্বের মেয়াদ অন্তত চারদিন। সবচেয়ে আতঙ্কের বিষয় হল এই ধরনের জিনিস সবচেয়ে বেশি পরিমাণে সাধারণত আমাদের বাড়িতেই থাকে। নিস্তার নেই রাস্তাঘাটেও। পাবলিক ট্রান্সপোর্ট থেকে চলার পথের প্রায় সর্বত্রই প্লাস্টিক এবং স্টেনলেস স্টিলের নানা জিনিসে আমাদের হাত লাগে। এমনকি হাসপাতালেও হদিশ মেলে এই জাতীয় জিনিসপত্রের। আর এই দু’ধরনের জিনিসই করোনাভাইরাসের সবচেয়ে পছন্দের। প্লাস্টিক কিংবা স্টিলের জিনিসের মধ্যে চারদিন পর্যন্ত বহাল তবিয়তে বেঁচে থাকে এই ভাইরাস। ছড়িয়েও পড়ে অনায়াসে। তবে প্লাস্টিক কিংবা স্টেনলেস স্টিলের প্রতি ভালবাসা থাকলেও তামার জিনিসে করোনাভাইরাসের স্থায়িত্বের মেয়াদ মাত্র ৪ ঘণ্টা। তবে সেই ৪ ঘণ্টাও যথেষ্টই বিপজ্জনক।
১। অনলাইন শপিং করলে ক্যুরিয়ারের মাধ্যমেই জিনিস ডেলিভারি হয়। এই ক্যুরিয়ারের প্যাকিং বক্স, তার বাইরে থাকা প্লাস্টিকে মোড়ক, এমনকি মোবাইলের খাপ অথবা কোনও কন্টেনারে করে খাবার আনালে তার মধ্যেও থাকতে পারে নোভেল করোনাভাইরাস।
২। প্রায় সব বাড়িতেই প্লাস্টিকের ব্যবহার হয় যথেষ্ট পরিমাণে। এছাড়া রান্নাঘরের বেশিরভাগ বাসনপত্রই হয় স্টেনলেস স্টিলের। গবেষণা বলছে এইসবের মধ্যেও লুকিয়ে থাকতে পারে করোনাভাইরাস।
কেমন পরিবেশে দীর্ঘদিন বেঁচে থাকে করোনাভাইরাস, বাড়াতে পারে শক্তি—-
কী কী জিনিসের থেকে নোভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণ হতে পারে তার তালিকা জেনে ইতিমধ্যেই আতঙ্কিত বিশ্ববাসী। সংক্রমণ রুখতে বারবার সাবান দিয়ে হাত ধোওয়ার পাশাপাশি চলছে হ্যান্ড স্যানিটাইজারের ব্যবহার। চিকিৎসকরা বলছেন হাত না ধুয়ে কোনওভাবেই সেটা মুখে লাগানো যাবে না। এরই মধ্যে আরেকটি চমকে যাওয়ার মতো তথ্য প্রকাশ্যে এনেছে জার্মানির রুঢ় (Ruhr) বিশ্ববিদ্যালয়। তাদের গবেষণা জানিয়েছে, রুম টেম্পারেচারের মত পরিবেশে নিজেদের শক্তি বাড়াতে পারে এই করোনাভাইরাস। সেটাও প্রায় ৯ দিনের জন্য। তবে গড়ে চার থেকে পাঁচদিন আয়ু থাকে এই ভাইরাসের। Greifswald University Hospital-এর হাইজিন অ্যান্ড এনভারনমেন্টাল মেডিসিন বিভাগের প্রফেসর গুনার ক্যাম্পফ জানিয়েছেন, কম উষ্ণতা এবং অতিরিক্ত আর্দ্রতা করোনাভাইরাসের জীবনকাল বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।
সারা বিশ্বে এখন নোভের করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা ১ লক্ষ ২৫ হাজার ২৫৪ জন। চিনের উহান শহরেই ছিল এই ভাইরাসের উৎসস্থল কিন্তু চিনের পাশাপাশি ইউরোপীয় দেশগুলি যেমন ইতালি, ফ্রান্স, এছাড়াও ইরান, আমেরিকা, দক্ষিণ কোরিয়া এমনকি ভারতেও ত্রাস ছড়িয়েছে এই ভাইরাস। ক্রমশ বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা। তাই আপাতত জনগণ অনলাইন শপিং কিংবা ফুড ডেলিভারি অ্যাপে মজে থাকবেন নাকি এই তথ্য প্রকাশ্যে আসার পর অনলাইন শপিং এবং ফুড ডেলিভারির ব্যবসায় আচমকাই ধস নামবে, সেটাই এখন দেখার।
এক নজরে দেখে নিন স্বাস্থ্যমন্ত্রক তাদের নির্দেশিকায় কী বলেছে—
১. যাঁর মধ্যে এই উপসর্গ দেখা দিচ্ছে তাঁকে থাকতে হবে আলাদা একটি ঘরে। যেখানে পর্যাপ্ত আলো বাতাস খেলে। সেই ঘরে থাকতে হবে আলাদা শৌচাগার। যা অন্য কেউ ব্যবহার করবেন না।
২. যদি ওই ঘরে পরিবারের অন্য কোনও সদস্য থাকেনও তাহলে উপসর্গ দেখা দেওয়া ব্যক্তির থেকে সেই সদস্যকে থাকতে হবে অন্তত কয়েক মিটার দূরে। কোনও ভাবেই গা ঘেঁষাঘেঁষি করে থাকা যাবে না।
৩. যে ব্যক্তি কোয়ারেন্টাইনে থাকবেন তিনি যেন কোনও ভাবেই বয়স্ক, শিশু বা গর্ভবতী মহিলার কাছাকাছি না যান।
৪. ওই ব্যক্তির গতিবিধি বাড়ির মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখতে হবে। কোনও ভাবেই তিনি যেন সামাজিক বা ধর্মীয় অনুষ্ঠানে যোগ না দেন। সেখানে অনেক মানুষ থাকলে প্রকোপ ছড়ানোর সম্ভাবনাও প্রবল।
৫. যাঁর এই উপসর্গ দেখা যাবে, তিনি যেন কোনওভাবেই বাড়ির অন্য সদস্যদের থালা, কাপ ইত্যদি না ব্যবহার করেন।
৬. সারাক্ষণ মাস্ক পরে থাকতে হবে। প্রতি ছ’ঘণ্টা থেকে আটঘণ্টা অন্তর পাল্টাতে হবে মাস্ক।
৭. যে ঘরে থাকবেন সেখানে যদি অন্য কেউ পরিষ্কারের জন্য যান, তাহলে তাঁকে অবশ্যই হাতে গ্লাভস ও মুখে মাস্ক পরে যেতে হবে।