দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ জিওমার্টের সঙ্গে হোয়াটসঅ্যাপ মিলে গেলে দেশজুড়ে ডিজিটাল ব্যবসায় বিপ্লব আসবে, বলেছিলেন রিল্যায়ান্স কর্তা মুকেশ আম্বানি। তারই প্রথম পদক্ষেপ শুরু হয়ে গেল লকডাউনের মাঝেই। হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে পরীক্ষামূলকভাবে বাজার পরিষেবা চালু হল কয়েকটি জায়গায়। জিওমার্টলাইট ওয়েবসাইটে জানা গেছে, প্রাথমিক ভাবে এই পরিষেবা মিলছে মহারাষ্ট্রের নবি মুম্বই, থানে এবং কল্যাণে। কিছু দিনের মধ্যেই গোটা দেশে শুরু হবে এই পরিষেবা।
মুকেশ আম্বানির সংস্থা জিও প্ল্যাটফর্মস লিমিটেডে ৪৪ হাজার কোটি টাকার লগ্নি করেছেন ফেসবুকের মালিক মার্ক জুকারবার্গ। জিও প্ল্যাটফর্মের ৯.৯৯ শতাংশ মালিকানা কিনে নিয়েছে ফেসবুক। ফেসবুক-হোয়াটসঅ্যাপের সঙ্গে গাঁটছড়া বেঁধে নতুন ই-কমার্স ব্যবসার উদ্যোগ নিয়েছে রিল্যায়ান্স। দেশের ছোট ব্যবসায়ীদের ডিজিটাল মডেলের আওতায় আনতে রিল্যায়ান্স জিও-র নতুন ই-কমার্স প্ল্যাটফর্ম জিওমার্টকে হোয়াটসঅ্যাপের সঙ্গে জুড়ে দিয়েছেন মুকেশ আম্বানি। আগামীদিনে তিন কোটিরও বেশি ছোট ছোট, মাঝারি দোকানকে এই ই-কমার্স প্ল্যাটফর্মের ছাতার তলায় নিয়ে আসা হবে বলে ঘোষণা করেছেন তিনি।
ফিন্নোভিতি কনসাল্টিং-এর সিনিয়র কনসালটান্ট বিক্রম পিএন বলেছেন, “লকডাউনের এই জটিল সময়ে রিল্যায়ান্স জিও ও হোয়াটসঅ্যাপ মানুষের মুশকিল আসান করে দিয়েছে। প্রাথমিকভাবে দেশের কিছু জায়গায় এই ডিজিটাল বাজার পরিষেবা শুরু হয়েছে। তবে সব রাজ্যেই এই পরিষেবার সুবিধা মিলবে। হোয়াটসঅ্যাপকে মাধ্যম করেই গোটা দেশে ছড়িয়ে পড়বে জিওমার্টের ডিজিটাল বাজার পরিষেবা। লাভবান হবেন ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ীরা।”
কীভাবে হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে দোকানবাজারের সুবিধা পাবেন গ্রাহকরা? রিল্যায়ান্স জিও জানিয়েছে, তার জন্য রয়েছে একটি হোয়াটসঅ্যাপ নম্বর। ৮৮৫০০ ০৮০০০ এই নম্বরটিই মোবাইল ফোনে সেভ করে রাখতে হবে। এই নম্বর থেকে গ্রাহকদের কাছে আসবে একটি লিঙ্ক। সেই লিঙ্কের ভ্যালিডিটি ৩০ মিনিট। এই সময়ের মধ্যেই লিঙ্কটি ব্যবহার করতে হবে। লিঙ্কে ক্লিক করলে একটা নতুন ওয়েবপেজ খুলবে। সেখানে গ্রাহককে নাম, ঠিকানা এবং ফোন নম্বর দিতে হবে। অনলাইন স্টোরে কী কী সামগ্রী মিলবে তার একটা তালিকা দেওয়া থাকবে। সেখানে দামের কথাও বলা থাকবে। তালিকা দেখে প্রয়োজনমতো সামগ্রী সিলেক্ট করে অর্ডার দিতে হবে। পেমেন্টের আলাদা কোনও ঝামেলা নেই। পেটিএম বা অন্য ডিজিটাল মাধ্যমের দরকার পড়বে না। দাম মেটানো যাবে হোয়াটসঅ্যাপেই। তার অপশনও থাকবে।
গ্রাহকের অর্ডার এলেই সেটা নির্দিষ্ট দোকানে পৌঁছে যাবে। সেটা জিওমার্টের নিজস্ব স্টোর হতে পারে বা তার আওতায় থাকা যে কোনও ডিপার্টমেন্টাল স্টোর, স্থানীয় মুদির দোকান বা ছোটখাটো দোকানও হতে পারে। ডেলিভারি দেওয়ার আগে গ্রাহকের কাছে ফের মেসেজ আসবে। সেখানে বলে দেওয়া হবে কোন দোকান থেকে জিনিস সংগ্রহ করতে হবে। এই মুহূর্তে হোম ডেলিভারি চালু হচ্ছে না বলেই জানা গেছে। তবে খুব তাড়াতাড়ি সেটাও শুরু হয়ে যাবে।
রিল্যায়ান্স জিও জানাচ্ছে, মুদির দোকান, ছোট ডিপার্টমেন্টাল স্টোর বা হকারদের অনলাইনে কেনাবেচা করার কোনও রাস্তা এতদিন ছিল না। লকডাউনে তাই এইসব ব্যবসায়ীরাই সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ। জিওমার্ট ও হোয়াটসঅ্যাপ এক হয়ে এই ছোট ব্যবসায়ীদের রোজগারের নতুন রাস্তা খুলে দেবে। দেশের একটা বড় অংশই মেসেজিং প্ল্যাটফর্ম হিসেবে হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহার করে। এখন জিওমার্ট এইসব ছোট স্টোরগুলিকে হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে জুড়ে দেবে।
জিওমার্ট আর হোয়াটসঅ্যাপের জুটিতে সুবিধা দুটো। প্রথমত, ছোট ব্যবসায়ীরাও ডিজিটাল কেনাবেচায় অভ্যস্ত হবেন। লকডাউন বা ভবিষ্যতে এমন সঙ্কটের পরিস্থিতি এলে অনলাইনেই গ্রাহকরা জিনিসপত্রের অর্ডার দিতে পারবেন। ডিজিটাল ব্যবসার এক নতুন দিগন্ত খুলে যাবে দেশে। ছোট ব্যবসায়ীদের রুজি রোজগারে টান পড়বে না। দ্বিতীয়ত, সুবিধা রয়েছে গ্রাহকদেরও। বাড়ি বসেই সহজে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস চলে আসবে হাতে। জিওমার্ট যেহেতু রিল্যায়ান্স জিও-র প্ল্যাটফর্ম, কাজেই অফারও চলতে থাকবে বিভিন্ন সময়ে।