দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ করোনার ভ্যাকসিনের জন্য খুব বেশি অপেক্ষা করতে হবে না। একুশের শুরুতেই অন্তত ৬টি ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানির ভ্যাকসিন চলে আসবে বিশ্বের বাজারে। ভাইরাস আতঙ্কের মধ্যে ভরসার কথা বললেন মাইক্রোসফট কর্তা বিল গেটস।
করোনার টিকা নিয়ে আগেও আশার কথা শুনিয়েছিলেন গেটস। তিনি বলেছিলেন আমেরিকা, রাশিয়া, ভারত, চিন, ইজরায়েল সহ বেশ কয়েকটি দেশ করোনার ভ্যাকসিন গবেষণায় অনেকটাই এগিয়ে রয়েছে। তাই সুখবর আসতে পারে যে কোনও সময়েই।
ভ্যাকসিন গবেষণা ও বিশ্বের নানা প্রান্তে ভ্যাকসিনের ডোজ পৌঁছে দেওয়ার জন্য যথাযোগ্য ব্যবস্থা নেবেন বলেও জানিয়েছিলেন মাইক্রোসফট কর্তা। আজ একটি সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে গেটস বলেন, কয়েকটি ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানির ভ্যাকসিন চূড়ান্ত পর্বের ট্রায়ালে রয়েছে। তাদের ক্লিনিকাল ট্রায়ালের রেজাল্টও ভাল। তাই আশা করা হচ্ছে কিছু ভ্যাকসিন আগামী বছরের একেবারে শুরুর দিকেই চলে আসবে।
কোভিড ভ্যাকসিন তৈরি করতে ইতিমধ্যেই বিভিন্ন সংস্থাকে আর্থিক সাহায্য করছে বিল ও মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশন। পেনসালিভানিয়ার বায়োটেক ফার্ম ইনোভিও ফার্মাসিউটিক্যালসের ভ্যাকসিন গবেষণায় সামিল বিল গেটসও। জানা গিয়েছে, এই ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানির কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন গবেষণার কাছে যাবতীয় আর্থিক অনুদান দিয়েছে বিল এবং মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশন এবং কোয়ালিশন ফর এপিডেমিক প্রিপেয়ার্ডনেস ইনোভেশনস।
গ্লোবাল অ্যালায়েন্স ফর ভ্যাকসিন অ্যান্ড ইমিউনাইজেশন (গাভি)-র সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে বিশ্বের নানা দেশে ভ্যাকসিনের ডোজ পৌঁছে দেওয়ার জন্য আগাম পরিকল্পনাও করে রেখেছেন তিনি। কোন দেশ ভ্যাকসিনের গবেষণায় কতদূর এগোল তা জানতে রাষ্ট্রপ্রধান বা সেই সব দেশের চিফ মেডিক্যাল অফিসারদের সঙ্গে আলোচনা করছেন মাইক্রোসফট কর্তা।
গেটস বলেছেন, এশিয়া, ইউরোপ, আমেরিকার বিভিন্ন কোম্পানির সঙ্গে যোগাযোগ করছে তাঁদের ফাউন্ডেশন। বছরে ১০০ কোটি বা ২০০ কোটি ভ্যাকসিনের ডোজ যদি তৈরি করা যায়, তাহলে কোভিড আক্রান্ত দেশগুলিতে দ্রুত সেই ডোজ পৌঁছে দেওয়া হবে। বিশ্বে ভ্যাকসিনের গণবন্টন ব্যবস্থা বা কোভ্যাক্স কর্মসূচীরও অংশ তিনি।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার উদ্যোগে বিভিন্ন নামী কর্পোরেট সংস্থা এই কর্মসূচীতে অংশগ্রহণ করেছে। ভ্যাকসিনের ডোজ চলে এলে বিশ্বের নানা প্রান্তে বিশেষত আর্থিকভাবে পিছিয়ে পড়া দেশগুলিতে ভ্যাকসিন পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্ব এই কোভ্যাক্স মিশনের।
ভ্যাকসিনের সমবন্টন নিয়েও এ দিন কথা বলেন বিল গেটস। তিনি জানান, এক দেশে সংক্রমণ বন্ধ হলেও বিশ্বজুড়ে অতিমহামারী ঠেকানো সম্ভব নয়। করোনার মোকাবিলায় তাই সব দেশকেই এগিয়ে এসে সম্মিলিতভাবে কাজ করতে হবে। গরিব দেশগুলিকে আগে ভ্যাকসিন দিতে হবে। প্রত্যন্ত এলাকাগুলিতে সংক্রমণের হার বন্ধ হলে তবেই সার্বিকভাবে এই অতিমহামারীকে ঠেকানো যাবে।
ভ্যাকসিন গবেষণায় ভারতের ভূমিকারও প্রশ্ংসা করেন গেটস। তিনি বলেন, বেশিরভাগ কোভিড ভ্যাকসিন তৈরি হচ্ছে পশ্চিমের দেশগুলিতে। তাদের উচিত ভ্যাকসিন উৎপাদন ও বিতরণে ভারতের সঙ্গে জোটবদ্ধ হওয়া। কারণ ভ্যাকসিন তৈরিতে খুব ভাল কাজ করছে ভারতের ফার্মাসিউটিক্যাল ও বায়োটেকনোলজি কোম্পানিগুলো।
ড্রাগ ও ভ্যাকসিন তৈরিতে ভারতের সুনাম আছে বিশ্বের বাজারে। ভারতে যে পরিমাণ ভ্যাকসিন ও ওষুধ তৈরি হয়, বিশ্বের কোনও দেশে তেমনটা হয় না। করোনার টিকা তৈরির কাজে ভারতের ফার্মাসিউটিক্যালগুলির সেই প্রচেষ্টাই দেখা যাচ্ছে। কোটি কোটি ভ্যাকসিনের ডোজ তৈরি করার পরিকাঠামো রয়েছে ভারতের।
গেটসের কথায়, কয়েকটি বিদেশি কোম্পানি ইতিমধ্যেই ভারতের ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানিগুলির সঙ্গে চুক্তি করে ভ্যাকসিন তৈরি করছে। তবে আরও বেশি সংস্থাকে এই ব্যাপারে এগিয়ে আসতে হবে। ভারতের বিপুল জনসংখ্যায় করোনার সংক্রমণ বেড়েই চলেছে। তাই ভ্যাকসিনের সমবন্টন ভারতে খুবই দরকার বলে জানিয়েছেন গেটস।
অক্সফোর্ডের সঙ্গে চুক্তি করে ভারতে ভ্যাকসিন তৈরি করছে সেরাম ইনস্টিটিউট। তাছাড়া মার্কিন ফার্মা জায়ান্ট নোভাভ্যাক্সের সঙ্গেও সেরামের চুক্তি হওয়ার কথা আছে। তাদের তৈরি আরএনএ ভ্যাকসিন ক্যানডিডেট NVX-CoV2373 এবার তৈরি হতে পারে ভারতেই। টিকার উৎপাদন ও বিপণনের জন্য সেরামের সঙ্গে কথাবার্তা চলছে বলেও খবর।
গেটস বলেছেন, জনসন অ্যান্ড জনসন, সানোফি, মোডার্না, ফাইজারের মতো সংস্থাদেরও উচিত ভারতের সঙ্গে চুক্তি করে ভ্যাকসিন তৈরি করা। তাহলেই বিশ্বের নানা প্রান্তে ভ্যাকসিনের ডোজ পর্যাপ্ত পরিমাণে ছড়িয়ে পড়বে।