দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃপাখির চোখের মতো হয়তো তিনি লক্ষ্য স্থির করে ফেলেছেন। লোকসভা ভোটে ব্যারাকপুর থেকে প্রার্থী হবেনই। তাই হয়তো দিদি বোঝানোর পরেও বরফ গলল না। বিজেপি সূত্রের দাবি, আজ মঙ্গলবার কালীঘাটে তাঁর বাড়িতে সাংবাদিক বৈঠক ডেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যখন
প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করবেন, ঠিক একই সময়ে দিল্লিতে বিজেপি দফতরে গিয়ে গেরুয়া শিবিরে যোগ দেবেন ভাটপাড়ার বিধায়ক অর্জুন সিং। সেই সঙ্গে বিজেপি-তে যোগ দেওয়ার কথা বোলপুরের সাংসদ অনুপম হাজরার। এছাড়াও উত্তর চব্বিশ পরগনার বাগদা বিধানসভার বিধায়ক দুলাল বরও যোগ দিতে পারেন বিজেপি-তে।
ব্যারাকপুর লোকসভা কেন্দ্র থেকে গত দু’টি মেয়াদে তৃণমূলের সাংসদ দীনেশ ত্রিবেদী। কিন্তু তা নিয়ে অর্জুনের বহুদিনের অভিমান রয়েছে। দলের মধ্যে অর্জুন বারবার বলেছেন, এক জন বহিরাগতকে জেতাতে বারবার পরিশ্রম করব কেন? সারা বছর ধরে সংগঠন করি আমরা, আর ভোট এলে প্রার্থী কিনা দীনেশ?
এই পরিস্থিতিতে ব্যারাকপুরে প্রার্থী মনোনয়ন নিয়ে এ বার তৃণমূলে দোলাচল ছিল। কিন্তু শেষমেশ গত সপ্তাহে অর্জুনকে ফোন করে দিদি জানিয়ে দেন, দীনেশকেই ফের প্রার্থী করা হচ্ছে, দেখিস যেন অন্তর্ঘাত না হয়। সূত্রের মতে, অর্জুন দিদিকে জানিয়ে দেন, বিরোধিতা করতে হলে দলের বাইরে গিয়ে সরাসরি করব, দলে থেকে অন্তর্ঘাত করব না।
অর্জুন যে বিজেপি-র দিকে পা বাড়িয়ে দিয়েছে এর পরেই দলের কাছে স্পষ্ট হয়ে যায়। তাই গতকাল সোমবারও অর্জুন ও দীনেশকে একইসঙ্গে নবান্নে ডেকে রফা করার চেষ্টা করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। একটি সূত্রের মতে, লোকসভা ভোটের পর অর্জুনকে মন্ত্রিসভায় নেওয়ার প্রতিশ্রুতিও দেওয়া হয়।
কিন্তু অর্জুন তাতে সন্তুষ্ট নন বলেই, তাঁর ঘনিষ্ঠ সূত্রে বলা হচ্ছিল। তাঁর ঘনিষ্ঠ এক নেতা এও বলেন, দাদা বলছেন ওনার আর ১৮ বছর বয়স নয় যে ললিপপে খুশি হয়ে যাবেন।
যদিও মঙ্গলবার সকালেও তৃণমূল নেতারা দাবি করছিলেন যে অর্জুনকে দিদি বোঝাতে সফল হয়েছেন। সব্যসাচী দত্তর মতই রণে ভঙ্গ দিয়েছেন ভাটপাড়ার বিধায়ক। তবে বেলার দিকে বিজেপি-র নির্বাচন কমিটির আহ্বায়ক তথা প্রবীণ নেতা মুকুল রায় বলেন, “আজ বিকেলেই অর্জুন সিং, অনুপম হাজরা ও দুলার বর বিজেপি-তে যোগ দেবেন।”
বাগদার বিধায়ক দুলাল বর ষোলোর ভোটে কংগ্রেসের টিকিটে জিতলেও পরে যোগ দেন তৃণমূলে। ফলে তৃণমূল থেকে আরও একজন জনপ্রতিনিধি বিজেপি-র পথে। দুলাল বর দীর্ঘদিনের পোড় খাওয়া নেতা। নিজের এলাকায় সংগঠনও মজবু। তাঁকে বনগাঁ লোকসভায় প্রার্থী করা হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। এ বার বনগাঁ লোকসভা বিজেপি-র অন্যতম টার্গেট। গেরুয়া শিবিরের নেতারা মনে করছেন, এই আসনে জেতা সম্ভব। গতমাসেই বনগাঁ লোকসভার অন্তর্গত ঠাকুরনগরে সভা করে গিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। মতুয়া মহাসঙ্ঘের ধর্মসভায় যোগ দিয়েছিলেন মোদী। সেই সভাতেও মানুষের ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো।
অন্যদিকে বোলপুরের সাংসদ অনুপম হাজরাকে কয়েক মাস আগেই বহিষ্কার করেছে তৃণমূল। প্রথম প্রথম দলের সঙ্গে সুসম্পর্ক থাকলেও চোদ্দর ভোটের দেড় বছরের মাথাতেই অনুপম-তৃণমূল সম্পর্কে চিড় ধরে। ষোলোর বিধানসভা ভোটে প্রচারেও ডাকা হয়নি অধ্যাপক সাংসদকে। তারপর থেকে একের পর এক দল বিরোধী পোস্ট করেছেন সোশ্যাল মিডিয়ায়। অস্বস্তিতে পড়তে হয়েছে দলকে।
তৃণমূলের বীরভূম জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের সঙ্গে অনুপমের মুখ দেখাদেখি বন্ধ হয়ে যায়। কয়েক দিন আগেই মুকুল রায় সাংবাদিক বৈঠকে বলেছিলেন, “অনুপম আমার বাড়িতেই আছে। কেসের ভয়ে যোগ দিচ্ছেন ন।”
বিজেপি নেতাদের বক্তব্য ছিল, নির্বাচন কমিশন ভোটের নির্ঘণ্ট ঘোষণা করে দিলেই প্রশাসন চলে যাবে কমিশনের অধীনে। তৃণমূলের নির্দেশে কেস দেওয়ার ব্যাপার থাকবে না। তখনই অনেকে যোগ দেবেন বিজেপি-তে। রবিবার ঘোষণা হয়েছে নির্বাচন। আটচল্লিশ ঘণ্টার মধ্যেই একাধিক হেভিওয়েট তৃণমূল নেতা বিজেপি-তে যোগ দিচ্ছেন বলেই মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত এমনই দাবি বিজেপি নেতাদের।