“আমি একা মানুষ। বই লিখি, গানের সিডি বানাই, তা দিয়েই আমার চলে যায়!”মমতা

0
1034

দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ : রাজ্য বিজেপি সভাপতি দিলীপ ঘোষের কথার সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথা যেন মিলে গেল!
বাংলায় গরু পাচার, কয়লা পাচার নিয়ে ইদানীং জোরদার তদন্তে নেমেছে কেন্দ্রীয় এজেন্সি সিবিআই। শনি-রবিবারই ৪৫ জায়গায় তল্লাশি চলেছে। তা ছাড়া সারদা তদন্ত ফের মাথা তুলেছে। কারণ, মঙ্গলবারই ভয়েস রেকর্ডের জন্য সিবিআই তলব করেছিল ব্যবসায়ী আসিফ খানকে।

পরিস্থিতি যখন এমনই তখন আকছার রাজ্য বিজেপি সভাপতি ঠোঁটে হাসি ঝুলিয়ে বলছেন, “দেখুন না! মাস খানেকের মধ্যেই কত জন জেলে যাবে। সব ফাঁকা হয়ে যাবে!”
মুখ্যমন্ত্রীও এ দিন যেন সেটাই আন্দাজ করছেন। তবে দিলীপবাবুর মুড আর মুখ্যমন্ত্রীর মেজাজ ছিল উত্তর মেরু-দক্ষিণ মেরু। দিলীপবাবুরা এই তদন্তের রাজনৈতিক ফসলের অপেক্ষায় রয়েছেন। আর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মঙ্গলবার বোঝাতে চেয়েছেন, এই প্রতিহিংসার রাজনীতি বাংলার মানুষ ভাল ভাবে নেবেন না। তাই যেন ভেবে কাজ করে দিল্লি।

এদিন নবান্নে সাংবাদিক বৈঠক করেন মুখ্যমন্ত্রী। সেখানেই তিনি বলেন, “ভোটের আগে অনেক এজেন্সি লাগাবে। অনেককে জেলে পুরবে। অনেক বদনাম করবে। কিন্তু আমি সরকারি পয়সায় এক কাপ চাও খাই না। এ সব কথা বলার আগে চিন্তা করবেন, বাংলার মানুষ কীভাবে নেবে!”


মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথায়, “আমি পার্লামেন্টের পেনশন নিই না। মাসে ১ লক্ষ টাকা করে পাই। বিধানসভা থেকে ১ লক্ষ টাকা মাইনে পেতে পারি। তাও নিই না। আমি সার্কিট হাউজে গিয়ে থাকলে তার জন্য নিজের পকেট থেকেই টাকা মিটিয়ে দিই।” মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, “আমি একা মানুষ। বই লিখি, গানের সিডি বানাই, তা দিয়েই আমার চলে যায়।”


এ কথা বলেই কেন্দ্রের বিরুদ্ধে সুর চড়িয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, “আমি একটু ছবি আঁকি তা নিয়েও হিংসে। কেন এঁকেছি, কাকে টাকা দিয়েছি, কত প্রশ্ন! সেই টাকা আমি মুখ্যমন্ত্রী ত্রাণ তহবিলে দিয়েছি, রাজ্যপালের ত্রাণ তহবিলে দিয়েছি। আমি কি আমার দলকে একটু টাকা দিতে পারি না?”

দুর্নীতি নিয়ে এর পরেই কেন্দ্রের দিকে আঙুল তুলেছেন মুখ্যমন্ত্রী। পিএম কেয়ার তহবিলের অডিট কেন হয়নি সেই প্রশ্নও তুলেছেন টেবিল চাপড়ে।


পর্যবেক্ষকদের অনেকে মনে করছেন, মুখ্যমন্ত্রীর এদিনের কথা থেকে কয়েকটি বিষয় তাৎপর্যপূর্ণ। এক: গরু, কয়লা, চিটফান্ড দুর্নীতি নিয়ে সিবিআই-ইডি যে ভাবে সক্রিয় হয়েছে তাতে বেশ কিছু লোক যে গ্রেফতার হতে পারে তা হয়তো তিনি অনুমান বা আশঙ্কা করছেন।
দুই: এই পরিস্থিতিতে তিনি তাঁর ব্যক্তিগত সততার কথা তুলে ধরেছেন। তাঁর ব্যক্তিগত সততাকে অতীতেও তিনি রাজনৈতিক পুঁজি করেছেন। সেই সঙ্গে বুঝিয়েছেন ২৯৪টি আসনে তিনিই প্রার্থী।


তিন: সারদা তদন্তে বারবার মুখ্যমন্ত্রীর আঁকা ছবির নিলামের কথা উঠে এসেছে। চিত্র প্রযোজক শ্রীকান্ত মোহতা গ্রেফতারের পর সিবিআই যে প্রেস রিলিজ প্রকাশ করেছিল সেখানেও মুখ্যমন্ত্রীর আঁকা ছবির প্রসঙ্গ ছিল। অনেকে মনে করছেন, সারদার চার্জশিটেও সেই প্রসঙ্গ রাখা হতে পারে। আর তার মাধ্যমে মুখ্যমন্ত্রীর ব্যক্তিগত সততা নিয়ে প্রশ্ন তুলে দেওয়ার চেষ্টা হতে পারে।

মুখ্যমন্ত্রীর এদিনের সাংবাদিক বৈঠকের পর প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী তাঁর প্রতিক্রিয়ায় বলেন, “সততার প্যাকেজ আজ বিক্রি হচ্ছে না। কাটমানি, তোলাবাজি, সিন্ডিকেট, চিটফান্ড, কয়লা, বালি, গরু— কোনও কিছুতেই দুর্নীতি বাদ যায়নি গত প্রায় দশ বছরের মেয়াদে। এ সব ঢপের কথা কেউ আর খাবে না।”

Previous articleস্যানিটাইজার ঢেলে জ্বালিয়ে দেওয়া হল সাংবাদিককে, গ্রেফতার ৩ উত্তরপ্রদেশের ঘটনা
Next articleভোটের আগে কর্মসংস্থান নিয়ে বড় ঘোষণা মুখ্যমন্ত্রীর

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here