দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ কয়েক ঘণ্টার মধ্যে তীব্রতা বাড়িয়ে ‘অতি শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড়’ থেকে আরও বেশি শক্তিশালী ‘সুপার সাইক্লোন’-এ পরিণত হয়েছে ‘আমফান’। সোমবার সকালেই ইন্ডিয়ান মেটিরিওলজিক্যাল ডিপার্টমেন্ট অর্থাৎ আইএমডি-র তরফে জানানো হয়েছিল আগামী ৬ ঘণ্টায় আরও শক্তি বাড়াবে এই সাইক্লোন। আশঙ্কা সত্যি করে ‘সুপার সাইক্লোন’-এ পরিণত হল আমফান।
আবহাওয়া দফতরের পূর্বাভাস বুধবার ২০ মে অর্থাৎ অর্থাৎ বুধবারই ভূখণ্ডে আছড়ে পড়ার কথা এই সুপার সাইক্লোনের। তথ্য বলছে, রবিবার পর্যন্ত এর গতি ছিল ৯ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টায়। আজ অর্থাৎ সোমবার তা বেড়ে হয়েছে ১৩ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টা। আজ সকালেই দিঘা থেকে ৯৪০ কিলোমিটার দূরে অবস্থান করছিল ঝড়টি। কয়েক ঘণ্টার মধ্যে আরও ১০০ কিলোমিটার এগিয়ে এসেছে।
আবহাওয়া দফতরের অনুমান ছিল, বুধবারই পশ্চিমবঙ্গের দিঘা উপকূল এবং বাংলাদেশের হাতিয়া দ্বীপের মধ্যে দিয়ে বয়ে যাবে সুপার সাইক্লোন আমফান। দুর্যোগের ৪৮ ঘণ্টা আগেই পশ্চিমবঙ্গ এবং ওড়িশা উপকূলে হলুদ সতর্কতাও জারি করেছে আইএমডি।
কিন্তু আবহাওয়া দফতর ও বিভিন্ন বেসরকারি আবহাওয়া সংস্থার সর্বশেষ আপডেট বলছে, এই মুহূর্তে ঘূর্ণিঝড়টি কলকাতা থেকে মাত্র ১০৬৭ কিমি দক্ষিণ-পশ্চিমে এবং দিঘা থেকে ৯৮০ কিমি দক্ষিণ-পশ্চিমে রয়েছে। তবে আশার কথা, গত ১২ ঘণ্টায় সামান্য গতিপথের বদল হয়েছে আমফানের। উত্তর-পূর্ব দিকে ঘুরেছে গতিমুখ। ফলে আছড়ে পড়ার আশঙ্কা ছিল যে এলাকায়, তার কিছুটা বদল আসতে পারে। দিঘার বদলে দক্ষিণ ২৪ পরগনার উপকূল ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
আবহাওয়ার পূর্বাভাসে দেখানো হয়েছে যে ১৯ তারিখের পর থেকে ক্রমশই স্থলভূমির সঙ্গে দূরত্ব কমবে আমফানের। আবহবিদেরা আশঙ্কা করছেন, যেখানেই এই ল্যান্ডফল ঘটুক, তার আগে যদি একটুও শক্তি না কমায় আমফান, তবে এই সুপার সাইক্লোন আছড়ে পড়ার সময়ে ঘণ্টায় সর্বোচ্চ গতিবেগ ১৮৫ থেকে ২০০ কিলোমিটারের কাছাকাছি থাকতে পারে। এই গতিবেগে রাজ্যের উপকূলে আঘাত হানলে সর্বনাশ ঘটতে পারে। আয়লা বা বুলবুলের থেকেও দ্বিগুণ শক্তি নিয়ে আছড়ে পড়তে পারে এই ঝড়। তেমনটা হলে বড় বিপর্যয় এড়ানো কঠিন হবে।
আসন্ন সুপার সাইক্লোনের প্রভাবে আগামী কাল অর্থাৎ মঙ্গলবার সকাল থেকেই বৃষ্টি শুরু হয়ে যেতে পারে রাজ্যের উপকূলবর্তী এলাকা, কলকাতা শহর ও তার পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে। এর পর যত সময় এগোবে তত বৃষ্টি এবং হাওয়ার দাপটও তত বাড়বে। মঙ্গলবার দুপুর থেকেই ঝড়-বৃষ্টি শুরু হবে কলকাতা-সহ সাত জেলায়। বুধবার রাজ্যে ভারী থেকে অতি ভারী এবং কোথাও কোথাও আরও বেশি ভারী বৃষ্টিরও সম্ভাবনা রয়েছে। এর পাশাপাশি ভয়াবহ জলোচ্ছ্বাস দেখা দিতে পারে উপকূলীয় এলাকায়। পূর্ব মেদিনীপুর আর দক্ষিণ ২৪ পরগনার উপকূলবর্তী অঞ্চলে স্বাভাবিকের থেকে ২-৩ মিটারের বেশি ঢেউ উঠতে পারে বলে আগাম সতর্ক করেছে আবহাওয়া দফতর।
কেন্দ্রীয় আবহাওয়া দফতরের অনুমান, ঘূর্ণিঝড়টি বুধবার রাত থেকে বৃহস্পতিবার সকালের মধ্যে দিঘা দিয়ে রাজ্যে ঢুকে পড়বে। তবে রাজ্যে প্রবেশের আগে কিছুটা শক্তিক্ষয় হতে পারে তার। এই শক্তিক্ষয় হওয়া খুব জরুরি। এর উপরেই নির্ভর করছে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বা বিপর্যয়ের তীব্রতা কতটা হবে। আছড়ে পড়ার পরে আমফান ক্রমশ উত্তরে এগোবে।
১৮ থেকে ২১ মে পর্যন্ত মৎস্যজীবীদের সমুদ্রে যেতে নিষেধ করা হয়েছে ইতিমধ্যেই। নিচু জায়গা থেকে বাসিন্দাদের উঁচু জায়গায় নিয়ে যেতে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। ঘর থেকে বেরোতে বারণ করা হয়েছে জরুরি প্রয়োজন ছাড়া। লঞ্চ পরিষেবা পুরোপুরি বন্ধ। কাঁচা বাড়ি সম্পূর্ণ ভেঙে যেতে পারে বলে আশঙ্কা। বিদ্যুতের খুঁটি, ল্যাম্পপোস্ট উপড়ে যেতে পারে। বড় নারকেল গাছ বা তাল গাছের ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা। রেললাইনে গাছ পড়তে পারে, ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা।
পাশপাশি এনডিআরএফ-এর মোট ১৭টি দল দুই রাজ্যে পৌঁছে গিয়েছে। এক একটি দলে রয়েছে ৪৫ জন কর্মী। ওড়িশায় গিয়েছে ১০টি দল এবং বাংলায় পৌঁছেছে ৭টি দল। পশ্চিমবঙ্গের দুই চব্বিশ পরগনা, পূর্ব এবং পশ্চিম মেদিনীপুর, হাওড়া এবং হুগলিতে পাঠানো হয়েছে এনডিআরএফ-এর টিম। অন্যদিকে ওড়িশার পুরী, জগৎসিংহপুর, কেন্দ্রপদা, বালাসোর, জাজপুর, ভদ্রক এবং ময়ূরভঞ্জে পৌঁছে গিয়েছে জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলাকারী দল। ওড়িশা উপকূলের ১২টি জেলায় কড়া নজর রয়েছে জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলাকারী দিলের। এই তালিকায় রয়েছে গঞ্জাম, গজপতি, পুরী, জগৎসিংহপুর, কেন্দ্রাপাড়া, ভদ্রক, বালাসোর, ময়ূরভঞ্জ, জাজপুর, কটক, খুর্দা এবং নারায়ণগড়।