দেশেরসময় ওয়েবডেস্কঃ অর্জুন সিং তৃণমূল ছেড়ে বিজেপি-তে যোগ দেওয়ার পর থেকেই জল্পনার শুরু হয়েছিল, ভাটপাড়ার ভবিষ্যৎ কী? সংখ্যা গরিষ্ঠ কাউন্সিলর কোন দিকে? বাংলার দিদির দিকে? নাকি শিল্পাঞ্চলের দাদার দিকে? সবটা বুঝে নিতেই সোমবার বিধানসভায় দলীয় কাউন্সিলরদের নিয়ে বৈঠক করলেন ফিরহাদ হাকিম, জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকরা৷
ভাটপাড়ার মোট কাউন্সিলর ৩৫ জন। এক জনের মৃত্যু হয়েছে। বাকি ৩৪ জনের মধ্যে তৃণমূল ৩৩, কংগ্রেস ১। এ দিন ২২ জন তৃণমূল কাউন্সিলর দেখা করেন মন্ত্রীর সঙ্গে। বৈঠকে উপস্থিত ছিলনে, রাজ্যের খাদ্যমন্ত্রী তথা উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলা তৃণমূল সভাপতি জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক, বিধায়ক পার্থ ভৌমিক, পরশ দত্ত এবং নির্মল ঘোষ। বোর্ড টিকিয়ে রাখতে যত জন কাউন্সিলর দরকার, তার থেকে বেশিই এসেছিলেন এ দিন। কিন্তু রাজনৈতিক মহলের কৌতূহল, বিধানসভায় বসে কথা দেওয়া এক জিনিস।
আর চেয়ারম্যান অর্জুন সিং-এর বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাবের পক্ষে পুরসভায় ভোট দেওয়া এক্কেবারে অন্য জিনিস। অনেকেই বলছেন, যাঁরা কাউন্সিলর, কার্যত সবাইকেই নিজের কাঁধে করে ভোটে জিতিয়েছিলেন ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চলের ‘স্ট্রং ম্যান’। তাঁরা কি আদৌ অর্জুনের চোখে চোখ রেখে পারবেন?
পুরসভার প্রধানই তৃণমূল ছেড়েছেন৷ এই অবস্থায় নতুন কাউকে চেয়ারম্যান হিসাবে বেছে নিতে হবে তৃণমূল কাউন্সিলরদের৷ এদিনের বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, আগামী ১৫ দিনের মধ্যে চেয়ারম্যান নির্বাচনের জন্য আবেদন করবেন শাসক দলের কাউন্সিলররা৷
সোমবারই বারাকপুরের এসডিও-র কাছে জমা পড়বে আবেদনপত্র৷ বর্তমানে, ভাটপাড়া পুরসভায় মোট আসন ৩৩৷ তারমধ্যে এক জনের মৃত্যু হয়েছে৷ ম্যাজিক ফিগার ১৭৷ যদি তৃণমূলের দাবিই বাস্তবায়িত হয় ভাটপাড়া পুরসভা দখলে রাখতে চলেছে জোড়া-ফুল শিবির৷
এর আগেও ভাটপাড়া পুরসভার জনা কুড়ি কাউন্সিলরকে নিয়ে বৈঠকে করেন জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক৷ বাস্তব বলছে, এতদিন ভাটপাড়ায় কেউ গেরুয়া পতাকা ধরার সাহস পাননি, সেখানে তৃণমূলের দলীয় দফতর বদলে যাচ্ছে গেরুয়া-সবুজ রঙে। দিল্লি থেকে অর্জুন সিং শহরে ফিরতেও দেখা যায় ভাটপাড়া পুরসভার ৪, ৩, ৬ ওয়ার্ডের কাউন্সিলরা অন্য সুরে কথা বলছেন৷ অর্জুনের নামে জয়ধ্বনি দিচ্ছেন৷ দেখে মনেই হতে পারে তারা দল বদলের অপেক্ষায়৷
এদিন, বিধানসভায় তৃণমূল বিধায়ক পার্থ ভৌমিক বলেন, ‘‘অর্জুন সিংয়ের শক্তি দেখা যাবে চেয়ারম্যান নির্বাচন দিনেই৷’’ তাঁর পাশেই তখন দাঁড়িয়ে ভাটপাড়ার মহিলা তৃণমূল কাউন্সিলরদের অনেকে৷ ভাটপাড়ার উপ পুরপ্রধান সোমনাথ তালুকদার অবশ্য বলছেন, ‘সংখ্যাগরিষ্ঠ কাউন্সিলর তৃণমূলেই আছেন। যাঁরা ইতস্তত করছেন, তাঁরাও থেকে যাবেন।’
দলবদল ঘিরে তরজা৷ কৌতুহল কার দখলে থাকবে ভাটপাড়া পুরসভা তা নিয়েও৷ এরসঙ্গেই অবশ্য যোগ হয়েছে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে অর্জুনের বিরুদ্ধে খাদ্যমন্ত্রীর তোপ দাগা৷ পালটা, দিয়ে ভাটপাড়ার দোর্দদণ্ডপ্রতাপ নেতার দাবি, অভিযোগ নির্দিষ্ট জায়গায় জানালে মন্ত্রীর বিরুদ্ধেও প্রমাণ তৈরি৷ শক্তি প্রদর্শনের খেলায় আপাতত দু’ই শিবির এর প্রস্তুতি তুঙ্গে৷
তৃণমূলের নেতারা আত্মবিশ্বাসী ভাটপাড়া পুরসভা ধরে রাখবেন তাঁরাই। কিন্তু জগদ্দলে নিজের বাড়িতে বসে সোমবার সকালে অর্জুন বলেন, জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের মাথায় মুখ্যমন্ত্রীর হাত, আর আমার মাথায় প্রধানমন্ত্রীর হাত। দেখুন না কী হয়!