দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ অমিত শাহের হাত থেকে বিজেপি সভাপতির ব্যাটন যাচ্ছে সম্ভবত জগৎ প্রকাশ নাড্ডার হাতেই। আজ সকাল সাড়ে দশটায় তিনি মনোনয়ন জমা দিতে চলেছেন। সূত্রের খবর, সম্ভবত বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতাতেই জয়ী হবেন নাড্ডা। এখন তিনি দলের কার্যনির্বাহী সভাপতি পদে রয়েছেন।
মনে করা হচ্ছে, দলের নতুন সভাপতি নির্বাচন নিয়ে সাড়ম্বর আয়োজন করা হবে বিজেপির দলীয় প্রধান কার্যালয়ে। সেই অনুষ্ঠানে বিজেপির বিভিন্ন দলীয় পদাধিকারীরা উপস্থিত থাকবেন। সূত্রের খবর, নির্বাচন প্রক্রিয়া শেষ হয়ে নাড্ডা দলের সভাপতি নির্বাচিত হলে আনুষ্ঠানিক ভাবে বক্তৃতা করে তাঁকে সংবর্ধিত করবেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ।
বিজেপি নির্বাচন কমিটির প্রধান রাধামোহন সিং ইতিমধ্যেই নির্বাচনের পুরো নির্ঘণ্ট প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেছেন, “প্রথম পর্যায়ে এনরোলমেন্ট ড্রাইভ সফল ভাবে হয়েছে, ৭৫ শতাংশ বুথ কমিটি হওয়ার পরে, ৫০ শতাংশ মণ্ডল কমিটি হওয়ার পরে এবং বিজেপির সংবিধান মেনে ২১টি রাজ্যে দলীয় সভাপতি নির্বাচনের পরে আমি সানন্দে ঘোষণা করছি যে এবার বিজেপির জাতীয় সভাপতি নির্বাচিত করা হবে।”
সকাল দশটা থেকে সাড়ে বারোটার মধ্যে মনোনয়ন পেশ করতে হবে। সাড়ে বারোটা থেকে দেড়টার মধ্যে মনোনয়ন নিরীক্ষা করা হবে এবং মনোনয়ন প্রত্যাহার করা যাবে দেড়টা থেকে দুপুর আড়াইটের মধ্যে।
মনে করা হচ্ছে জগৎ প্রকাশ নাড্ডাই হতে চলেছেন একমাত্র প্রার্থী তাই ভোটাভুটির কোনও প্রয়োজন হবে না। তবে যদি একাধিক প্রার্থী মনোনয়ন দাখিল করেন তা হলে মঙ্গলবার ভোটাভুটি হবে। তা না হলে আজই নাড্ডাকে দলের সভাপতি বলে ঘোষণা করে দেওয়া হবে।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও বিজেপির বর্তমান সভাপতি অমিত শাহ রবিবার বিজেপির বরিষ্ঠ সদস্য, ন্যাশনাল এগজিকিউটিভ ও সংসদীয় বোর্ডের সদস্যদের সঙ্গে রবিবার বৈঠক করেছেন। বিজেপির প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গেও তাঁরা রবিবারই আলোচনা করেছেন। নাড্ডাকে পরবর্তী সভাপতি হিসাবে আনুষ্ঠানিক ভাবে তুলে ধরতেই তাঁদের এই পদক্ষেপ।
আজ বিজেপির সদর দফতরে সমস্ত কেন্দ্রীয় মন্ত্রীকে ডাকা হয়েছে। তাঁদের সঙ্গে নাড্ডার সভাপতি হওয়ার ব্যাপারে আলোচনা করা হবে।
বিজেপির অনেক দিনের কর্মী হলেন নাড্ডা। ১৯৯৩ সাল থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত তিন বার তিনি হিমাচলপ্রদেশের বিধায়ক নির্বাচিত হয়েছিলেন। ১৯৯৮ সাল থেকে ২০০৩ সাল পর্যন্ত তিনি প্রথমে স্বাস্থ্য ও পরে বন ও পরিবেশমন্ত্রী হয়েছিলেন। ২০০৮ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত তিনি ছিলেন বিজ্ঞান বিষয়ক মন্ত্রী।
২০১০ সালে নাড্ডা দিল্লিতে এসে জাতীয় নেতাদের সঙ্গে কাজ করতে শুরু করেন। ২০১২ সালের এপ্রিল মাসে তিনি রাজ্যসভার সাংসদ হন।
২০১৪ সালে মোদী সরকারের স্বাস্থ্যমন্ত্রী হন নাড্ডা। ২০১৯ সালে তিনি দলের কার্যনির্বাহী সভাপতি নিযুক্ত হন।
২০১৯ সালের জুন মাসে প্রধানমন্ত্রী মোদীকে চিঠি দিয়ে অমিত শাহ জানিয়ে দেন যে দলে তাঁর যে কাজ রয়েছে সেই দায়িত্ব অন্য কাউকে দেওয়া হোক। তিনি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের কাজেই মনোনিবেশ করতে চান। যদিও তখন থেকে এখনও পর্যন্ত দলের সভাপতির দায়িত্বে রয়েছে অমিত শাহই।
সভাপতি হয়েই নাড্ডার প্রথম চ্যালেঞ্জ হবে দিল্লির বিধানসভা নির্বাচন, তার পরেই বিহারের বিধানসভা নির্বাচন। নরেন্দ্র মোদী ও অমিত শাহের সঙ্গে তাঁকে তাল মিলিয়ে কাজ করতে হবে। দলীয় সূত্রে খবর, এঁদের দু’জনের সঙ্গেই নাড্ডার কাজের সম্পর্ক বেশ ভাল।
আসএসএসেও নাড্ডার বেশ ভাল প্রতিপত্তি রয়েছে। তিনি ছাত্রাবস্থা থেকেই আরএসএসে রয়েছেন এবং ছাত্রনেতাও ছিলেন। সাংগঠনিক অভিজ্ঞতা তাঁর আছে।
নাড্ডার সমালোচকরা অবশ্য মনে করছেন যে, নাড্ডা নামেই দলের সভাপতি হবেন, আসলে দলের নিয়ন্ত্রণ থাকবে সেই অমিত শাহের হাতেই। তবে বিজেপি এই সব কথায় পাত্তা দিতে রাজি নয়। তাদের পাল্টা, “ওঁরা পারিবারিক নেতৃত্বের বাইরে কিছু ভাবতেই পারেন না।”